অমরজিৎ সিং, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া হাত এখন লাগছে চাষের কাজে

অমরজিৎ সিং

অমরজিৎ সিং বিশ্বকাপে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলকে। যে দল সব ম্যাচ হারলেও ভারতের মাথা উঁচু রেখেছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে। দাপটের সঙ্গে লড়াই করেছিল একদল সদ্য বড় স্বপ্ন দেখা ছেলে। সেই দলের অধিনায়ক মণিপুরের অমরজিৎ সিং সবার আড়ালে অন্য জীবনের স্বাদ নিচ্ছেন। শান্ত, ঠান্ডা মাথার ছেলেটি যখন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেন তখন তাঁর গলা থেকে ঝড়ে পড়ত আত্মবিশ্বাস। দেশের জার্সিতে কিছু করে দেখানোর। কিন্তু লড়াইটা সহজ ছিল না। লড়াইটা আজও সহজ নয়।

তাঁদের দেখতে গোটা দিল্লিকে সেই সময় মরিয়া হতে দেখেছি টিকিটের জন্য। টিকিটের কালোবাজারি হুহু করে বাড়ছিল, সঙ্গে চাহিদা। অপ্রাপ্তি, আর মানুষের হাহুতাশ দেখেছি। দেখেছি টিকিটের জন্য কাতর চাহিদা। তার পরটা আর কারও জানা নেই। কোথায় গেল সেই এক ঝাঁক তরুণ তুর্কী? লকডাউনে আরও খোঁজ নেই কারও।

অমরজিৎ এখন রয়েছেন তাঁর গ্রামে। ইম্ফলের রাজধানী থেকে বেশ কিছু দূরে। যেখানে তাঁর পরিবারের মূল পেশাই হচ্ছে চাষ। এখন পরিবারের সঙ্গে সেই কাজে হাত লাগিয়েছেন অমরজিতও। সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কল্যানে খবর পাওয়া গেল অমরজিতের। দেখা গেল কাঁদা মেখে চাষের কাজ করছেন তিনি।

সিনিয়র জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন তিনি। তবে এখন ফুটবল থেকে অনেকটাই দূরে। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, এখন অনুশীলনের থেকে বেশি তিনি পরিবারকে চাষের কাজে সাহায্য করছেন।

অমরজিৎ বলেন, ‘‘কয়েক প্রজন্ম ধরে আমার পরিবার চাষের কাজই করে। কিন্তু আমি কখনও খুব তাকাইনি ছোট থেকে। আমি সারাক্ষণ ফুটবল নিয়েই থাকতাম। আমি সেখানেই শান্তি খুঁজে পেতাম।’’

ভারতীয় দলের এই মিডফিল্ডারের এতদিন তো তেমনভাবে বাড়িতে থাকার সময় হত না ফুটবলের জন্য। তবে এ বার ফিরে আর কোথাও যেতে হয়নি। বাড়িতেই রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত, আমি বেশিদিন বাড়িতেই থাকতাম না।  এমনকি যখন মরসুম শেষ হত আমরা কোনও এক্সপোজার ট্রিপে বেরিয়ে যেতাম অথবা জুনিয়র ন্যাশনাল দলের সঙ্গে অনুশীলন করতাম। আর সে কারণে মাত্র সপ্তাহ খানেকের জন্যই বাড়িতে আসতাম। আর সেটা চাষের মরসুম হত না।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন আমি হাতে সময় পেয়েছি সেখানে গিয়ে আমার শিকড়ের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করার। আমি গর্বিত। আমি চাষের নতুন পদ্ধতি শিখেছি এবং আমি আপনাকে বলতে পারি এটা খুব কঠিন কাজ। কিন্তু মাঠে কাটানোর পর নিজেকে অনেক তরতাজা লাগে।’’

তাঁর পরিবার তাঁর স্বপ্নের পাশে থেকেছে সব সময়। তাই তিনিও কিছু ফিরিয়ে দিতে চান পরিবারকে। সে কারণেই মাঠে নেমে পড়া। আর এটাও বোঝানো আমি আমার শিকড়কে ভুলিনি। এভাবেই একে অপরের পাশে থেকে কঠিন সময়কে পেরিয়ে যেতে চান অমরজিৎ।

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর অমরজিৎকে দেখেছিলাম খুব আবেগান্বিত অবস্থায়। যখন সব প্লেয়াররা ফেরার গোছগাছে ব্যস্ত তখন তিনি এই পুরো অভিজ্ঞতাকে ধরে রাখছিলেন তাঁর বিশ্বকাপের জার্সিতে। গোটা দলের সই নিচ্ছিলেন সেই দুটো জার্সিতে। আর সকলেই আনন্দের সঙ্গে কোনও না কোনও বার্তা লিখে সই করছিলেন।

সেই সময় অমরজিতকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই সই নিয়ে কী করবেন?

অমরজিৎ বলেছিলেন, ‘‘আমার জীবনের এখনও পর্যন্ত সব থেকে বড় মুহূর্ত এই বিশ্বকাপ। এই দল, কোচ, সাপোর্টস্টাফ সব স্মৃতিতে তো থাকবেই তার সঙ্গে গোটা দলকে আমি এভাবেই সারাজীবনের সজন্য আমার কাছে রেখে দিতে চাইছি। বাড়ি ফিরে এই জার্সিদুটোতে বাঁধিয়ে রাখব। যখনই দেখব এই দিনগুলো মনে পড়বে।’’

নিশ্চই ধান জমি থেকে ফিরে কাঁদা শরীরে একবার সেই ছবির সামনে রোজ দাঁড়ান অমরজিৎ সিং আর মনে করেন দেশের হয়ে বিশ্বকাপে খেলা সেই গর্বের মুহূর্তকে।  মনে মনে মাঠে ফেরার দিনও গোনেন প্রতিদিন।

ছবি ও তথ্য: এআইএফএফ

লেখা: সুচরিতা

(খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)