২০১৮ বিশ্বকাপ শেষ ১৬: তারকার পতন, তারকার উত্থান

২০১৮ বিশ্বকাপ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ২০১৮ বিশ্বকাপ কি অঘটনের? প্রতিবারই এরকম নানা অঘটন ঘটে। কিন্তু এ বারের শেষ ১৬ যেন অঘটনেরই। আর এই শেষ ১৬ থেকেই এক এক করে যেমন বিদায় নিয়েছে স্পেন, আর্জেন্তিনা, পর্তুগাল, মেক্সিকো। অঘটনের শুরু গ্রুপ লিগ থেকেই। যখন বেরিয়ে গেল গতবারের চ্যাম্পিনরা। জার্মানির এই বিদায় হয়ত মেনে নেওয়াটা বেশ কষ্টের। এ বিশ্বকাপ তারকাদের ছিল না তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এ বিশ্বকাপ নতুন তারকা তৈরি হওয়ার। সেটাও প্রমাণ হচ্ছে প্রতিদিন। যে ভাবে উঠে আসছেন হ্য়ারি কেন। এই বিশ্বকাপ তাই অঘটনের, এই বিশ্বকাপ নতুন তারকা জন্মের।

শেষ ১৬ শেষে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালের আট দল। লড়াই এখন তাই হাড্ডাহাড্ডি। এই পর্যায়ে যে কেউ এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। কিন্তু ভাগ্য কাকে সঙ্গ দেবে সেটা বলবে ৯০ মিনিট শেষের খেলা। এখান থেকে যে কেউ কেটে ফেলতে পারে সেমিফাইনালের টিকিট। তার আগে এক জলকে দেখে নেওয়া যাক শেষ ১৬ কেমন গেল…

বিশ্বকাপের আরও খবর

প্রি-কোয়ার্টারের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স ও আর্জেন্তিনা। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মেসির আর্জেন্তিনা তেমনভাবে ভরসা দিতে পারেনি। তাও কোনও ক্রমে পৌঁছেছিল শেষ ১৬য়। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় বিশ্বকাপ থেকে। সঙ্গে বিদায় এক তারকারও। ফ্রান্সের এমবাপের জোড়া গোল ও সঙ্গে গ্রিজম্যান ও পাভার্দের গোলে বদলে তিন গোল দিলেও জয়ের রাস্তায় হাটতে ব্যর্থ আর্জেন্তিনা। ব্যর্থ মেসিও। ১৩ মিনিটে গ্রিজম্যান ফ্রান্সকে এগিয়ে দেওয়ার পর ডিমারিয়া ও মার্সেডো এগিয়ে দিয়েছিল আর্জেন্তিনাকে। এর পর সব ভেস্তে দিলেন এমবাপে। শেষ বেলায় আগুয়েরো ব্যবধান কমালেও জয় আসেনি। যেখানে মেসি নামক তারকার পতন ঘটল সেই মাঠ থেকেই উদয় হল এমবাপে নামক নতুন তারকার। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে এই নামকেই সমীহ করছে উরুগুয়ে।

একই দিনে বিশ্ব ফুটবলের আরও এক তারকা নেমেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালের লক্ষ্যে। তিনি পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।। প্রথম ম্যাচেই যাঁর পা থেকে এসেছিল হ্যাটট্রিক। সে যে এত তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাবে তা হয়ত ভাবা যায়নি। কিন্তু উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ২-১ গোলে ছন্দ পতন। মেসির বিদায়ের রাতেই বিদায় হয়ে গেল রোনাল্ডোরও। এই ম্যাচেও উরুগুয়ের হয়ে একাই বাজিমাত করলেন কাভানি। তাঁর পা থেকেই এল জোড়া গোল। ৭ মিনিটে উরুগুয়েকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। ৫৫ মিনিটে পর্তুগালকে সমতায় ফেরান পেপে।। কিন্তু আবার কাভানির গোল ৬২ মিনিটে। এই ম্যাচে রোনাল্ডোর পা থেকে কোনও গোল আসেনি। যেভাবে মেসি পারেননি সেভাবে পারলেন না রোনাল্ডোও। কোয়ার্টার ফাইনালে হয়ত দেখা যাবে কাভানি ববনাম এমবাপে লড়াই।

যখন পর পর বিদায় নিচ্ছেন তারকারা বিশ্বকাপের আসর থেকে তখন ভয় ছিল নেইমারকে নিয়েও। তিনিও যে খুব আশা জাগিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন তেমনটা নয়। প্রথম ম্যাচের পর তাঁর স্বার্থপর ফুটবল নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই বদলে গিয়েছিলেন বিশ্ব ফুটবলের আরও এক তারকা। ব্রাজিল যে দারুণ ফুটবল খেলে এখানে পৌঁছেছে তা বলা যাবে না। কিন্তু বুদ্ধি দিয়ে একটা ভারসাম্য রেখে খেলে গিয়েছে দলটা। বরং এই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনো গতবারের ৭ গোলের যন্ত্রণাও কিছুটা লাঘব করবে।  বরং প্রি-কোয়ার্টার ফাইনারে মেক্সিকোকে ০-২ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোর পর বিশেষজ্ঞরা ব্রাজিলকে ফাইনালে দেখতে শুরু করে দিয়েছে। এই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনোর পিছনে বড় ভূমিকা রেখে গিয়েছেন নেইমার। তারকার মতই কাজ করেছেন। প্রথম গোল ৫১ মিনিটে নিজে করার পর রবার্তো ফারমিনোর ৮৮ মিনিটের গোলের পিছনে ছিলেন নেইমারই। যতই তাঁর প্লে অ্যাক্টিং নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠুক না গেল তিনি কিন্তু দেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন।

একই দিনে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে জাপান। বিশ্বকাপ থেকে হয়ত ছিটকে যেতে হয়েছে কিন্তু যে লড়াইয়ের নজির তারা বিশ্বকাপের ময়দানে রেখেছে সেটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার থেকে কম কিছু নয়। ৩-২ গোলে বেলজিয়ামের কাছে হারতে হয়েছে জাপানকে। কিন্তু ৪৮ মিনিটে গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল জাপানই। হারাগুচির গোলের পর ৫২ মিনিটে ইনউইয়ের গোল। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ২-০ গোল এগিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারল না তারা। ৬৯ মিনিটে ভার্তোঘেন, ৭৪ মিনিটে ফেলিনি ও অতিরিক্ত সময়ে চাদলির গোলের পর আর ফেরার সময় ছিল না জাপানের সামনে।তবুও এই বিশ্বকাপে জাপানের ১১ জনই তারকা। ওরা কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়েছিল ঠিকই কিন্তু জাপানের লড়াই এই বিশ্বকাপ শেষেও মনে রাখবে ফুটবল বিশ্ব। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজি‌লের মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম।

রবিবার ছিল টাইব্রেকারের রাত। সঙ্গে গোলকিপারেরও। প্রথম ম্যাচে নেমেছিল স্পেন ও রাশিয়া। ঘরের মাঠে বাজিমাত করেছে রাশিয়াই। কিন্তু স্পেনের ছিটকে যাওয়াটা তো ছন্দপতন বটেই। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ম্যাচ ছিল ১-১। এর পর টাইব্রেকারে বাজিমাত রাশিয়া গোলকিপারের। জোড়া গোল বাঁচিয়ে হিরো আকিনফেভই। ও এটা বলে রাখা ভাল নির্ধারিত সময়ের স্পেনের একমাত্র গোলটি কিন্তু ছিল সেম সাইড। তাই যোগ্য দল হিসেবেই শেষ আটে পৌঁছেছে রাশিয়া।

একই দিনে ক্রোয়েশিয়া বনাম ডেনমার্ক ম্য়াচও গড়ায় টাইব্রেকারে। ম্য়াচ শুরুর এক মিনিটের মধ্যে গোল করে এগিয়ে যাওয়া ডেনমার্ক শেষ পর্যন্ত ছিটক যায় পেনাল্টি শ্যুটে। ক্রোয়েশিয়াও অবশ্য চার মিনিটেএ সমতায় ফিরেছিল। তার পর যেন দু’দলই খেলছিল টাইব্রেকারের জন্য। আর সেটা তো অনেকটাই ভাগ্যের খেলা। আর পুরোটাই মানসিক জোড়ের। ফল শেষ পর্যন্ত ডেনমার্ককে ৩-২ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল ক্রোয়েশিয়া। উইনিং পেনাল্টি শটটি নেন ইভান রাকিটিচ। তার আগে অতিরিক্ত সময়ে লুকা মডরিচের স্পট কিক সেভ করে দিয়েছিলেন গোলকিপার। ওই যে দিনটি ছিল শেষ রক্ষণের। তাই বাজিইমাত তাঁদেরই। কোয়ার্টার ফাইনালে এ বার মুখোমুখি রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া।

কোয়ার্টার ফাইনাল

৬ জুলাই ১৮

উরুগুয়ে বনাম ফ্রান্স এবং ব্রাজিল বনাম বেলজিয়াম

৭ জুলাই ১৮

সুইডেন বনাম ইংল্যান্ড এবং রাশিয়া বনাম ক্রোয়েশিয়া

প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ দিন সুইৎজারল্যান্ডকে ০-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টারে পৌঁছে গেল সুইডেন। ১৯৯৪ এর পর এই প্রথম আবার কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেন। সেন্ট পিটার্সবার্গে ৬৬ মিনিটে ফর্সবার্গের একমাত্র গোলেই ফিরল সুইডেন। যদিও নেপথ্যে থেকে গল ভিএআর। সুইৎজারল্যান্ড তেমনভাবে কিছুই করতে পারল না।

এ দিনের অন্য ম্যাচে আবারও ফিরল টাইব্রেকার। যা দিয়ে শেষ হল ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ১৬। শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল কলম্বিয়া-ইংল্যান্ড। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ হয় ১-১ গোলে। এর পর ৪-৩ গোলে বাজিমাত ইংল্যান্ডের। এ বার শুরু থেকেই ইংল্যান্ডকে নিয়ে একটা আশা ছিলই। যা জিইয়ে থাকল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে গোল করলেন সেই হ্যারি কেন। কিন্তু ম্যাচ শেষে জোড়া শট বাঁচিয়ে হিরো সই গোলকিপার জর্ডন পিকফোর্ড। শেষ আটে দেখা হবে সুইডেনের সঙ্গে।