দুরন্ত জয়ে আইলিগের আরও কাছে ইস্টবেঙ্গল

ইস্টবেঙ্গল ৭ (আমনা, রাবানন-সেমসাইড, ডুডু-৪, গ্যাব্রিয়েল)

চেন্নাই ১ (মশুর)

৩২, ৪৯, ৫৬, ৬১। রেফারির ঘড়ির কাঁটায় এই এই মিনিটে লেখা হয়েছে একটাই নাম। তিনি ডুডু ওমাগবেমি। যার ফল জিতে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে মিনার্ভাকে ছুঁয়ে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। ম্যচের সেরাও তিনি।

মরসুমের মাঝ পথে তাঁকে নিয়ে আসা নিয়ে কম সমালোচনার মুখ পড়তে হয়নি কর্তাদের। চুপচাপ, শান্ত ডুডু হয়তো এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করেছিলেন। আগেও গোল পেয়েছেন এই মরসুমে। কিন্তু চার গোলের মালা পরাননি প্রতিপক্ষকে। দলের ছয়। ইস্টবেঙ্গল প্রায় পুরো ম্যাচটাই খেলল প্রতিপক্ষের অর্ধে। আর সেই চাপের মুখে পড়ে কখনও ভুল করে গেলেন গোলকিপার তো কখন রাবাননের মতো অভিজ্ঞ প্লেয়ার।

চ্যাম্পিয়নশিপে বেঁচে থাকতে এই ম্যাচ জিততেই হত ইস্টবেঙ্গলকে। তা বলে এ ভাবে জিতে কে ভেবেছিল। ঘরের মাঠে যে ভাবে চেন্নাই সিটিকে নিয়ে ছেলেখেলা করল লাল-হলুদ ব্রিগেড তাতে প্রশ্ন উঠছেল এত দিন এই খেলা কোথায় ছিল? চ্যাম্পিয়নশিপের রাস্তা রীতিমতো কঠিন করে ফেলে, লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ বাড়িয়ে ফেলে এই জায়গায় কেন নিজেদের নিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল? তবে একটা হিন্দি লাইন মনে পড়ছে এই ইস্টবেঙ্গলকে দেখে , ‘দের আয়ে দুরস্ত আয়ে’। মানে ‘দেরি করে এলেও শক্তিশালী হয়ে এসেছ’। এটা ধরে রাখতেই পারলেই সম্ভব কিস্তিমাত।

ম্যাচের ২০ মিনিটে আল আমনার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। দু’বার শট গোলকিপারের হাত থেকে ছিটকে আসার পর তৃতীয় চেষ্টায় গোল করে যান আমনা। তার আগে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকেই দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। এর পরটা অবশ্য চেন্নাই রক্ষণের ভুলেই ইস্টবেঙ্গলের ব্যবধান বারিয়ে নেওয়া। ২৩ মিনিটে বক্সের বাঁ দিক থেকে ডুডুকে লক্ষ্য করে চুলোভার ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই জড়িয়ে দেন রাবানন। ২-০ এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যাচটা যেন নিজের হাতেই তুলে নিয়েছিলেন ডুডু।

ডুডুর শুরু ৩২ মিনিট থেকে। মাঝ মাঠ থেকে উড়ে এসেছিল লম্বা পাস। চেন্নাই ডিফেন্ডারকে কাটিয়েই বলের কন্ট্রোল নিজের দখলে নেন ডুডু। তা দেখে নিজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন গোলকিপার। ফাঁকা গোলে বল পাঠাতে একটুও সমস্যা হয়নি ডুডুর। এই শুরু। যেখানে প্রথমার্ধ শেষ করেছিল সেখান থেকেই দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করেন ডুডু। তার মধ্যে প্রথমার্ধের শেষে চার মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া নিয়ে বিতর্ক থাকবেই।

দ্বিতীর্য়াধের খেলা শুরু হতেই আবার সেই ডুডু। ৪৯ মিনিটে আবারও ডুডু। বক্সের মধ্যে বলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি আমনা। কাছেই ছিলেন ডুডু। আমনার থেকে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েই নিজের দ্বিতীয় আর দলের চর্তুথ গোলটি করে ফেলেন তিনি। ৫৬ মিনিটে সেরে ফেলেন হ্যাটট্রিক। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে মাপা পাসটি রেখেছিলেন আনসুমনা ক্রোমা। ডান দিক দিয়ে উঠছিলেন ডুডু। বাঁ দিকে তখন একই পজিশনে আমনা। কিন্তু ডুডুকেই পাস বারিয়েছিলেন ক্রোমা। ভুল করেননি ডুডু। এখানে একটা প্রশ্ন থাকতেই পারে— কেন আমনাকে বল দিলেন না ক্রোমা। কারণ, এই গোলের পরই বক্সের মধ্যে বল নিয়ে ডুকে পড়া ক্রোমা নিজে গোল করতে গিয়ে পারলেন না। কিন্তু সেই বলই যদি আমনাকে পাস করতেন তা হলে হয়তো গোল হতে পারত।

৬১ মিনিটে নিজের চর্তুথ গোলটি করে ফেলেন ডুডু। ৮৪ মিনিটে গ্যাব্রিয়েলের দুরন্ত গোলে শেষ ৭-১ গোলের ম্যাচ। মাঝে চেন্নাইয়ের একটা প্রচেষ্টা। যা থেকে গোল। ব্যস ওখানেই শেষ। তবে শেষ গোলটি যেন এই হাইস্কোরিং ম্যাচের রূপকে সোনা দিয়ে সাজিয়ে দিল। এ বারও সেই ক্রোমা। বক্সের বাইরের ডি-এর মধ্যে বলটা বারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর সেই চলতি বলেই সেই ডি-এর মধ্যে থেকেই গ্যাব্রিয়েলের দূরপাল্লার শট সরাসরি চলে গেল চেন্নাই গোলে। সেখানেই শেষ হয়ে গেল এ দিনের খেলা।