আইএসএল ফাইনাল: দুই ব্রাজিলীয়র তিন গোলে বেঙ্গালুরুতে চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ান

আইএসএল ২০১৮ ফাইনাল

বেঙ্গালুরু এফসি  ২ (সুনীল ৯, মিকু ৯০+২)

 চেন্নাইয়িন এফসি ৩  (মেইলসন ১৭, ৪৫, রাফায়েল ৬৭)

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল লেখা থাকল চেন্নাইয়ের নামেই৷ বিপক্ষের ঘরের মাঠে ফাইনাল খেলে দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইয়ান এফসি।যারা হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে নতুন ইতিহাস লিখতে দিল না অন্যতম ফেভারিট বেঙ্গালুরু এফসি-কে। ২০১৫ সালে গোয়া থেকে নিয়ে গিয়েছিল খেতাব, এবার নিয়ে এল বেঙ্গালুরু থেকে। দুই ব্রাজিলীয়র তিন গোলে আইএসএল-এ আরও একটি নতুন ব্যাপার ঘটল। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন খেতাব পেলেন এক ইংরেজ কোচ – জন গ্রেগরি। আগে ডেভিড জেমস বা স্টিভ কোপেল যা পারেননি ফাইনালে পৌঁছেও।

ঘরের মাঠে আগে কোনও দল আইএসএল-এ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। লিগপর্বের শেষে যারা শীর্ষে থেকেছিল আগের তিন বছর, ট্রফি হাতে নিতে পারেনি ফাইনালের শেষে। আলবার্তো রোকার বেঙ্গালুরুকে এই দুটি রীতিই ভাঙতে হতো চ্যাম্পিয়ন হতে হলে। শেষ পর্যন্ত তা অবশ্য সম্ভব হয়নি, ইনজুরি টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে মিকু ২-৩ করা সত্ত্বেও। বড় হয়ে দাঁড়াল হয়ত সুনীল ছেত্রীর ৮৬ মিনিটের সুযোগ নষ্টই। আই লিগে প্রথম বছরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলেও আইএসএল-এ হতে পারল না বেঙ্গালুরু, নিজেদের মাঠে ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েও।

চেলসি বধে কী করলেন মেসি

সুনীল এগিয়ে দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুকে দুর্দান্ত হেডে। মিকু পাস দিয়েছিলেন উদান্ত সিংকে। ডানদিক থেকে উদান্ত স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বক্সের মধ্যেই ক্রস রেখেছিলেন। মেইলসন আলভেসের পায়ে লাগলেও খুব বেশি দূরে যায়নি বল। আগুয়ান সুনীলের থেকে খানিকটা দূরে, বুঝতে পেরেছিলেন পৌঁছতে পারবেন না। শরীর ছুড়ে জোরালো হেডে করণজিৎ সিংকে বলের জন্য ঝাঁপানোর সময়ও দেননি ভারতের অধিনায়ক। শ্রী কান্তিরভা স্টেডিয়ামে তখন উল্লাস। প্রতিযোগিতায় সুনীলের ১৪তম গোল, সতীর্থ মিকুর সমান। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্ব থেকে ধরলে টানা চতুর্থ গোল৷ ভারতীয় হিসাবে আইএসএল-এর ইতিহাসে ২১ গোল, সর্বোচ্চ জেজের ২২ থেকে একটি কম, চার মরসুমে।

কিন্তু বেশিক্ষণ সেই ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি বেঙ্গালুরু। ১৭ মিনিটেই গোল শোধ। বাঁদিক থেকে গ্রেগরি নেলসন কর্নার করেছিলেন। বক্সের মধ্যে সবার মাথা ছাড়িয়ে ওপরে উঠেছিলেন ব্রাজিলীয় মেইলসন এবং দুর্দান্ত হেডে বল গুরপ্রীত সিং সান্ধুর বাঁদিকের পোস্টে লেগে জালে জড়িয়ে যায়।

বেঙ্গালুরু চেষ্টা করেছিল ফিরে আসার। ৩০ মিনিটে সুযোগও এসেছিল। রাহুল ভেকের ক্রস থেকে বল পেয়ে দিমাস দেলগাদো জোরালো শট নিয়েছিলেন গোলের দিকে। সামনে ছিলেন কালদেরন। ঠিক সময়ে হেড দিয়ে বল বের করে দিয়েছিলেন কর্নারের জন্য। বিপজ্জনক হেড, সন্দেহ নেই। একটু এপাশ-ওপাশ হলেই নিজের গোলে ঢুকে যেতেই পারত। কিন্তু সুপার মাচানদের রক্ষণ শনিবার ছিল প্রায় দুর্ভেদ্য!

সেদিন কী বলেছিলেন রবি কিন

বিরতির ঠিক আগে সেই মুহূর্ত, যখন এগিয়ে গিয়েছিল চেন্নাই। এবার ডানদিক থেকে কর্নার নেলসনের এবং ম্যাচের নায়ক মেইলসনের আবারও হেড, আবারও গোল! পরপর দুটি সেট পিস থেকে একইভাবে গোল খাবে বেঙ্গালুরু, কান্তিরভায় হাজির সমর্থকরা ভাবতেই পারেননি। সেই সময়ই আরও একটি ধাক্কা বেঙ্গালুরুর, চোট পেয়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন দিমাস, বিরতির বাঁশি বাজার ঠিক আগে।

৫১ মিনিটে গোল করে ফেলেছিলেন উদান্ত। কিন্তু অফসাইড ছিলেন মনে করেছিলেন সহকারী রেফারি। মিকুর পাস ধরে শট নিয়েছিলেন উদান্ত যা চেন্নাইয়ের এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে জালে গিয়েছিল। সহকারী রেফারির পতাকা ততক্ষণে ওপরে।

ম্যাচে বেঙ্গালুরুর স্বপ্নে শেষ পেরেক আর এক ব্রাজিলীয় রাফায়েল অগুস্তোর, ৬৭ মিনিটে। নেলসনের পা থেকেই শুরু হয়েছিল আক্রমণ। তিনি বল দিয়েছিলেন জেজে লালপেখলুয়াকে, ম্যাচে তার আগে যাঁর তেমন বিশেষ চোখে পড়ার মতো অবদান ছিল না। এবারও বলটা ধরতে গিয়ে ফস্কেছিলেন প্রথমে। পরে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন দ্বিতীয় ছোঁয়ায়। কিন্তু বুঝে যান, তাঁর পক্ষে গোলে শট নেওয়া কঠিন। ঘুরে গিয়ে পাস দিয়েছিলেন রাফায়েলকে। দেখেশুনে ডানপায়ের শটে গুরপ্রীতের বাঁদিকের পোস্টে বল রেখেছিলেন ব্রাজিলীয় রাফায়েল, শরীর ছুড়েও যা আটকানো সম্ভব হয়নি গুরপ্রীতের পক্ষে। লিগপর্বে ২-১ জিতেছিল চেন্নাইয়িন, এই মাঠেই। জিতল ফাইনালেও, বেঙ্গালুরুর দূর্গে!

৮৬ মিনিটে সুনীল ছেত্রীকে একেবারে সাজিয়ে দিয়েছিলেন মিকু। সামনে ফাঁকা গোল কিন্তু সুনীলের ডানপায়ের শট বারের ওপর দিয়ে। বুঝিয়ে দিয়ে যায় যে, চাপে পড়লে ভুল সবাই-ই করতে পারেন, সুনীল ছেত্রীও। ওই সময়ে ২-৩ হলেও বাড়তি চাপে পড়ে যেতে পারত চেন্নাই। দিনটা অবশ্য বেঙ্গালুরুর ছিল না!

শেষ পর্যন্ত ২-৩ করেছিলেন ভেনেজুয়েলার মিকু, ৯২ মিনিটে। উদান্তর সেন্টারে হেড করে। নিজের ১৫তম গোল এবারের চতুর্থ হিরো আইএসএল-এ। ব্যবধান কমলেও আটকানো গেল না অভিষেক বচ্চনের চেন্নাইয়িন এফসি-কে। চারবারের আইএসএল খেতাব গেল দুটি শহরেই, দুবার করে, কলকাতা এবং চেন্নাই!