প্রজাপতি যাযাবর, ইউরোপ থেকে সাহারা পেরিয়ে উড়াল দেয় আফ্রিকা

প্রজাপতিপ্রজাপতি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: প্রজাপতি উড়ছে তির তির করে। এক ফুলের গা ছুঁয়ে উড়ে যাচ্ছে অন্য ফুলে। কিছুটা মধু খেয়ে ফের পালানো অন্য কোনও ফুলের দেশে। হালকা করে পাখনা বেয়ে তির তির করে সেই উড়ে যাওয়া দেখলে মন ভাল হয়ে যায়।

কিন্তু, এত ধীরস্থির স্বভাবের সেই প্রজাপতিরাই নাকি ইউরোপ থেকে যাত্রা শুরু করে সাহারা মরুভূমি পেরিয়ে চলে যায় আফ্রিকা! আবার একই পথে সে ফেরত আসে ইউরোপে! সাম্প্রতিক এক গবেষণাপত্র এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে।

পেইন্টেড লেডি নামে একটি প্রজাতির প্রজাপতিকে দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর। তাদের বৈজ্ঞানিক নাম ভানেসা কারদুই। এই প্রজাপতিরা যেখানেই থাকে সব সময় প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপর দিয়ে চলাফেরা করে। তাদের পাখনার রাসায়নিক বিশ্লেষণ সম্প্রতি চোখ কপালে তুলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। এই ভানেসা কারদুইরা দলগত ভাবে ইউরোপ থেকে উড়ে সাবারা মরুভূমি পেরিয়ে আফ্রিকা যায়। আবার একই পথে তারা ফিরেও আসে ইউরোপে। এই সফরে কতটা পথ অতিক্রম করতে হয়? শুনলে মাথা গুলিয়ে যেতে পারে। প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার।

শুঁয়োপোকা

শুঁয়োপোকা

তবে, প্রজাপতিদের জীবনচক্রে অদ্ভুত কয়েকটি বিষয় আছে। খুব বেশি ঠান্ডায় এরা উড়তে পারে না। নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে হলেই প্রজাপতিরা উড়তে পারে। সে জন্য শীতকালে প্রজাপতির দেখা মেলে না। প্রাণিজগতে সবচেয়ে কম আয়ু কিন্তু প্রজাপতিদেরই হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক প্রজাপতি গড়ে দু’সপ্তাহ বাঁচলেও কোনও কোনও প্রজাতির প্রজাপতি, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার হেলিকোনিয়াস এরাটো, টাইগেটিস মারমেরিয়া এবং ইউরোপের গোনেপটেরিক্স আরহামনি নামের প্রজাপতি প্রায় এক বছর বেঁচে থাকে। গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় একটি প্রজাপতির জীবনকাল হয় মাত্র তিন সপ্তাহের। আবার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে প্রজাপতিদের এক থেকে দুই প্রজন্ম শেষ হয় মাত্র এক বছরের মধ্যে। অন্য দিকে মেরু অঞ্চলে কয়েকটি প্রজাতির প্রজাপতি দু’বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

পলাশ ফুটলে, ফুটে ওঠে বড়ন্তীর মন

ফলে, এই যে ১২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিল যাযাবর পেইন্টেড লেডি, সে কিন্তু কয়েক প্রজন্ম ধরে ওড়ে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ইউরোপ থেকে যারা রওনা হয়, তাদের পঞ্চম-ষষ্ঠ প্রজন্ম ফের ইউরোপে ফিরে আসে। এই যাতায়াতের পথে গাছের পাতায় প্রজাপতিরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো আঠার মতো লেগে থাকে গাছের পাতায়। কয়েক সপ্তাহ পর তা থেকে জন্ম নেয় প্রজাপতির লার্ভা অর্থাৎ শুঁয়োপোকা। শুঁয়োপোকা থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিণত হওয়ার মাঝের ধাপটি হলো পিউপা। সেখান থেকে প্রজাপতিতে পরিণত হলেই সুন্দর পাখা তৈরি হয় তাদের। মাথার কাছে থাকে দু’টি শুঁড়। এর পর সেই প্রজাপতি নিজের রং-রূপ দিয়ে উড়াল শুরু করে ক্ষণিক জীবনের।

ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় প্রজাপতি

এত দিন ধারণা ছিল, প্রজাপতিরা যে পথে উড়ে যায়, সেই পথ তারা চিনে ফিরে আসতে পারে না। কাজেই ইউরোপ থেকে যে প্রজাপতিরা উড়ে আফ্রিকার দিকে রওনা দিত, তারাই যে ফের ইউরোপে ফিরে আসে, এমন কথা জানতে পেরে বিজ্ঞানীরা উচ্ছ্বসিত। এই গবেষণার ফলে জীবজগতের এক অন্য জগৎ খুলে গেল।