প্রয়াত স্টিফেন হকিং

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সারা জীবন শিরোনামে থেকেছেন। কখনও নিজের কাজ নিয়ে। কখনও বা বিতর্কিত মন্তব্যে। আর সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক জন সেলেব। বিজ্ঞানী হয়েও যে সেলেব্রিটি হওয়া যায়, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পর নিজের জনপ্রিয়তা দিয়েই সেটাই প্রমাণ করেছিলেন স্টিফেন হকিং।

বুধবার সকালে বিজ্ঞানের মঞ্চ ছেড়ে বরাবরের জন্যই চলে গেলেন বর্ণময় এই চরিত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬। এ দিন সকালে হকিং-এর তিন ছেলে লুসি, রবার্ট এবং টিম তাঁদের বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।

বিজ্ঞানের জটিল বিষয়কে সাধারণের জন্য সহজবোধ্য করে লিখতেন এবং বলতেন হকিং। ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন ভীষণ মজাদার। মাঝে মাঝেই এমন এমন বিষয়ের অবতারণা করতেন, যা নিয়ে সাড়া পড়ে যেত দুনিয়া জুড়ে। যেমন এক বার বললেন, ভিন‌্গ্রহের প্রাণীরা আমাদের ধ্বংস করে দেবে। আবার এক বার তাঁর মুখে শোনা গেল, দূষণ এবং যুদ্ধের কারণে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার মুখে। কাজেই মানুষের উচিত অন্য গ্রহে বসতি গড়ে তোলা। বিতর্ক যত বেড়েছে, আলোচনায় তত ঢুকে পড়েছেন হকিং। পাশাপাশি বেড়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা।

স্টিফেন হকিং

অথচ বিজ্ঞানী হিসাবেও তিনি ছিলেন বেশ নামজাদা। ‘থিয়োরি অব এভরিথিং’ নিয়ে কাজ করেছেন। ‘ব্ল্যাক হোল’-এর পাশাপাশি তাঁর কাজের বিষয় ছিল ‘স্ট্রিং থিয়োরি’। ‘কোয়ান্টাম মেকানিজম’ এবং ‘গ্রাভিটি’কে তিনি মেলাতে চেয়েছিলেন। আর কঠিন এই বিষয়গুলিকে তিনি সর্বসাধারণের বোধগম্য করে লিখেছেন। ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’— তাঁর বিখ্যাত বইই এর প্রমাণ।

রোগের নাম অ্যামিয়োট্রপিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস। মারাত্মক এক স্নায়ুরোগ। প্রায় ৪৫ বছর ধরে তাতেই আক্রান্ত ছিলেন হকিং। চিকিৎসকেরা সেই ষাটের দশকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর বেশি দেরি নেই। হকিং-এর আয়ু শেষ। কিন্তু, তাতে একবিন্দু বিচলিত হননি তিনি। চালিয়ে গিয়েছেন কাজ। হুইল চেয়ারে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন গোটা দুনিয়া। শূন্য গ্রাভিটির মহাকাশযানের ভিতর তাঁর সেই ছবি কিন্তু আজও সকলের মনে রয়েছে।

ভাল করে কথা বলতে পারতেন না। কম্পিউটার ভয়েসে কাজ চালাতেন। হাত-পা-আঙুল নাড়াতেও পারতেন না। কিন্তু, থামেনি তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ড। ১৯৪২-এর ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ডে জন্মেছিলেন। সে দিন ছিল গ্যালিলিও-র মৃত্যুদিন। হকিং চলে গেলেন ১৪ মার্চ। এ দিন অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন। জন্ম, মৃত্যু, বেঁচে থাকা— তাঁর সবেতেই কেমন জড়িয়ে গিয়েছিল বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী।