স্যামুয়েল হ্যানিম্যান চিকিৎসা জগৎকে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন

স্যামুয়েল হ্যানিম্যানস্যামুয়েল হ্যানিম্যান

স্যামুয়েল হ্যানিম্যান চিকিৎসা জগৎকে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন। হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক। কিন্তু তাঁর জীবনটা ঠিক কতটা কঠিন ছিল? জানুন হ্যানিম্যানের জীবনকাহিনি ডাঃ ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ির কলমে, আজ প্রথম পর্ব


১৭৫৫ সালের ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে জার্মানির মিসেন শহরে এক দরিদ্র  চিত্রকরের ঘরে জন্ম হয়েছিল হ্যানিমানের। অবহেলা আর দারিদ্রের মধ্যেই বড় হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে দিন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, এই শিশুই এক দিন হয়ে উঠবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক নতুন ধারার জনক।

হ্যানিম্যানের বাবা গটফ্রিড চিনামাটির কারখানায় বাসনের উপরে নকশা আঁকার কাজ করতেন। এই কাজে উপার্জন ছিল খুবই কম, তাই অতি কষ্টে তাদের সংসার চলত। স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ছিলেন চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবার আশা ছিল, হ্যানিমান বড় হয়ে তাঁর সঙ্গেই ছবি আঁকার কাজ করবে, তাঁকে সাহায্য করবে। তাতে হয়তো সংসারের আর্থিক সমস্যা কিছুটা দূর হবে।

কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই হানিমানের ছিল লেখাপড়ার প্রতি অত্যাধিক আগ্রহ। বাড়িতেই বাবা-মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ করে ১২ বছর বয়সে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ভর্তি হলেন স্থানীয় টাউন স্কুলে। অল্প দিনের মধ্যেই তার অসাধারণ মেধার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন তার শিক্ষকরা।  গ্রিক ভাষায় তিনি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছিলেন যে, শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রদের ওই ভাষা পড়াতেন।

টাউন স্কুলের শিক্ষা শেষ করে হ্যানিম্যান ভর্তি হলেন প্রিন্সেস স্কুলে। কিন্তু সংসারে ক্রমশই অভাব বাড়ছে। গটফ্রিডের পক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে উঠছিল। নিরুপায় হয়ে তিনি হ্যানিম্যানকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে লিপজিক শহরে এক মুদির দোকানে মাল কেনাবেচার কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন ।  কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এ কথা জানতে পেরে হ্যানিম্যানের স্কুলের সব মাইনে মকুব করে তার পড়াশোনা ফের শুরু করালেন। স্কুলের শেষ পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হল হ্যানিম্যান।

হ্যানিমান  একাধিক ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। ক্রমশ তাঁর মধ্যে উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা  তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছিল। তিনি লিপজিক  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লেন। হাতে সম্বল ছিল মাত্র ২০ খেরল,  মানে  আমাদের দেশের ১৪ টাকার মতন। নিজের খরচ মেটাবার জন্য এক ধনী গ্রিক যুবককে জার্মান এবং ফরাসি ভাষা শেখাতেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশকের কাছে অনুবাদকের কাজ করতেন।

হ্যানিম্যানের ইচ্ছা ছিল চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করবেন । তখন কোন ডাক্তারের  অধীনে থেকে কিছুদিন কাজ শিখলে তবেই  চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করার সুযোগ হত। কিন্তু লিপজিগে কোন ভাল ডাক্তার না থাকায় তিনি ভিয়েনাতে ডাঃ কোয়ারিনের  কাছে কাজ করার সুযোগ নিয়েছিলেন। তখন তার বয়স মাত্র বাইশ বছর। ইতিমধ্যেই তিনি  ইংরাজি, আরবি, স্প্যানিশ, হিব্রু, লাটিন  এবং জার্মান ভাষায় যথেষ্ট পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। এ বার ভাষাতত্ত্ব ছেড়ে শুরু হল চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন।

দুর্ভাগ্যক্রমে এই সময় তার সামান্য গচ্ছিত অর্থ এক দিন সব চুরি হয়ে গেল। নিদারুণ অর্থ সংকটে পড়লেন তিনি। এই বিপদের দিনে তাকে সাহায্য করলেন স্থানীয় গভর্নর। তাকে তার  লাইব্রেরি দেখাশোনার ভার দিলেন হ্যানিম্যানকে। এই সুযোগটির পুরোপুরি সদব্যবহার করেছিলেন তিনি। এক বছর ন’মাস সেখানে থাকাকালীন এই লাইব্রেরির প্রায় সমস্ত বই পড়ে শেষ করে ফেলেছিলেন। এখান থেকে হাতে কিছু অর্থ এলে তিনি ভর্তি হলেন  আরল্যানজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই তিনি ২৪ বছর বয়সে ডাক্তারি পাশ করে অর্জন করলেন এমডি বা ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি। এক বছর প্রাইভেট প্রাকটিস করলেন, তার পর  জার্মানির এক হাসপাতালে চাকরি।

অন্য সব বিষয়ের মতো রসায়নের প্রতি হানিমানের ছিল সবচেয়ে বেশি আগ্রহ। সেই সুত্রেই হেসলার নামে এক ওষুধের কারবারির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নিয়মিত তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে হত। হেসলারের সঙ্গে থাকতেন তাঁর পালিতা কন্যা হেনরিয়েটা। হেনরিয়েটা ছিলেন সুন্দরী, বুদ্ধিমতী এবং আকৃষ্টমনা। অল্প দিনেই তাই দুই তরুণ-তরুণী পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ১৭৮২ সালের ১৭  নভেম্বর দু’জনের বিয়ে হয়। হ্যানিম্যানের বয়স তখন ২৭ আর হেনরিয়েটার ১৮।

(বিখ্যাত মানুষদের জীবন সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)