লন্ডন টু কলকাতা বাস ১১০ দিনে পৌঁছত সাতটি দেশ পেরিয়ে

লন্ডন টু কলকাতা

লন্ডন টু কলকাতা বাস সার্ভিস, চমকে যাওয়ার মতোই খবর। কিন্তু সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো এমনই কিছু ছবি সেই ‘ইতিহাস’কে সামনে এনে দিয়েছে। একটা সময় যখন বিমানের ব্যবহার তেমন ছিল না, তখন মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিত জাহাজে করে— এটা সকলেরই জানা। কলকাতা থেকে লন্ডন পৌঁছতে সেই জাহাজে লেগে যেত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। কিন্তু বাস! হ্যাঁ উঠে এসেছে এমনই এক বাস সার্ভিসের রূপকথার গল্প। গল্প হলেও সত্যি লিখলেন মেঘ চক্রবর্তী


লন্ডন টু কলকাতা এবং কলকাতা টু লন্ডন—  বাস চলাচল করত আজ থেকে ৬০ বছরের বেশি আগে। সালটা ১৯৫৭। এই বাস যাত্রা শুরু করেছিল ২০ জন যাত্রী নিয়ে। তার মধ্যে সাত জন যাত্রী আবার লন্ডন থেকে কলকাতা এসে ফের লন্ডন ফিরে গিয়েছিলেন। এই সাত জনের মধ্যে ছিলেন দু’জন মহিলা ও পাঁচ জন পুরুষ। তাঁরাই রাউন্ড ট্রিপটা সম্পূর্ণ করেছিলেন।

লন্ডন থেকে ১৫ এপ্রিল বাসটি ছেড়েছিল। সেখান থেকে কলকাতায় আসার টিকিটের দাম ছিল ৮৫ পাউন্ড। কেউ যদি লন্ডন থেকে কলকাতা এসে ফের ওই একই বাসে লন্ডন ফিরে যান তা হলে তাঁর জন্য ফেরার ভাড়া ছিল ৬৫ পাউন্ড।

এই বাসে চড়ে লন্ডন টু কলকাতা পৌঁছতে পেরিয়ে যেতে হত ফ্রান্স, ইতালি, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তান। এই পুরো রাস্তাটা যেতে সময় লাগত প্রায় ১১০ দিন মানে প্রায় চার মাস। পুরো দিন চলার পর রাতে কোনও হোটেলে রাখা হত যাত্রীদের। যেখানে হোটেল থাকত না সেখানে ক্যাম্প খাটানো হত। আবার ভোর হলে শুরু হত গন্তব্যের উদ্দেশে চলা।

এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাসটি কলকাতা পৌঁছেছিল ৫ জুন। ‘স্টেটসম্যান’-এ এই ঐতিহাসিক যাত্রার খবর বাসের ছবি-সহ প্রকাশিত হয়েছিল বাসটি কলকাতায় পৌঁছনোর পর। এবং সেই বছরের ২ অগস্ট আবার ফিরে গিয়েছিল লন্ডনে। নির্ধারিত সময়ের থেকে ১৬ দিন পিছিয়ে গিয়েছিল বাস যাত্রা। যে দিন বাসটি রাউন্ড ট্রিপ শেষ করে লন্ডনে পৌঁছেছিল তার পর দিন বড় বড় করে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ এই যাত্রার কথা লেখা হয়েছিল।

সেই সময় নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং স্টেটসম্যানে প্রকাশিত খবর

বাসটি সমস্যায় পড়েছিল পাকিস্তান-ইরান সীমান্তে। কারণ সেই সময় লাহৌরে এশিয়ান ফ্লু মহামারি দেখা দিয়েছিল। এর মধ্যে বাসের দেরি দেখে রটে যায়, হারিয়ে গিয়েছে সেই বাস এবং খুন করা হয়েছে বাসের সব যাত্রীদের। কিন্তু পরে জানা যায়, খবরটি সত্যি ছিল না। বাসটি যখন তেহরানে, তখন এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।

ওই বাসেই ছিলেন ২২ বছরের পিটার মোস। পরবর্তীতে তিনি ছবি ও বর্ণনা-সহ একটি বই প্রকাশ করেছিলেন যা থেকে সবটা আরও পরিষ্কার ভাবে জানা যায়। সেই বইয়ের নাম ছিল ‘The Indiaman – When the Going was Good by Land and Sea’

এই বাসের মালিক এবং চালক ছিলেন একই ব্যক্তি— ওসওয়াল্ড জোসেফ গ্যারো-ফিশার। তিনি প্রথম ট্রিপে ১১০ দিনে ২০ হাজার ৩০০ মাইল রাস্তা পেরিয়েছিলেন। সফর শেষে একটা জায়গায় গ্যারো জানিয়েছিলেন, তুরস্কের মাউন্ট আরারাত অঞ্চলের পাহাড়ি বাঁক এবং সরু রাস্তায় অত বড় বাস চালানো সব থেকে কঠিন ছিল। কিন্তু তা নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তায় ছিলেন না, যতটা ভারতের রাস্তায় বাস চালাতে ভয় পেয়েছিলেন হাইওয়ে বাদ দিয়ে।

এ ছাড়া ইংল্যান্ড থেকে সিঙ্গাপুর বা সিডনি থেকে লন্ডন বাস যাওয়ারও নজির রয়েছে। একটা সময় লন্ডন-কলকাতা এবং সিডনি-লন্ডন বাসযাত্রা নিয়মিত ছিল। আর এই অসাধ্য সাধন করেছিল অ্যালবার্ট ট্যুর। যার গল্প অন্য কোনও দিন বিশদে বলব।

ছবি ও তথ্য: টুইটার পোস্ট থেকে সংগৃহীত

(নিজের প্রিয় মুহূর্তকে ফিরে দেখতে ক্লিক করুন এখানে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)