জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের ১০০ বছর আর এক দীর্ঘশ্বাস

জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের ১০০ বছর

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের ১০০ বছর পেরিয়ে গেল। অমৃতসরের মাটিতে পা দিয়েও মনের কোণায় উঁকি দিচ্ছিল সেই একটা নাম। যা ছাপিয়ে যাচ্ছিল স্বর্ণ মন্দিরের মাহাত্মকে। একটা একটা করে চোখের সামনে খুলে যাচ্ছিল ইতিহাসের পাতায় পড়া সেই ভয়ঙ্কর হত্যালীলার ছবি। যে ছবি কোথাও একটা ছোটবেলা থেকেই মনের মধ্যে যন্ত্রণাকে উসকে দেয়। বোঝা না বোঝার সীমান পেড়িয়ে উঠে আসে কত কত মানুষের চিৎকার।

১৩ এপ্রিল ১৯১৯। আজ আরও একটা ১৩ এপ্রিল। সালটা শুধু বদলে গিয়েছে ২০১৯-এ। প্রতিবছর আসে এই তারিখটা। ১৩ এপ্রিল। প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি বুকে নিয়ে আর কেউ বেঁচে নেই এতদিন স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু যে স্বাধীন ভারতে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াই সেই পরাধীন ভারতের শিকার হতে হয়েছিল মানুষকে। এক লজ্জার ইতিহাস, এক ভয়ঙ্কর হত্যা ব্রিটিশ শাসিত ভারতের।

বুধবারই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এই ঘটনাকে ব্রিটিশ শাসিত ভারতের ইতিহাসে লজ্জার ঘটনা বলে ব্যখ্যা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, ক্ষমা কি চেয়েছে ব্রিটেন? তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘‘ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ড একটা দাগ। ১৯৯৭ সালে যখন ভারতে গিয়ে জালিয়ানওয়ালা বাগে গিয়েছিলেন রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয় তখন তিনিও ভারত শাসনের ইতিহাসে এটাকে ভয়ঙ্কর ঘটনা বলেছিলেন।’’

১৯১৯ সালের সেই ফাঁকা মাঠের মাঝে মাঝে বসেছে স্মৃতি সৌধ। সেই কুয়ো আজও রয়েছে একইভাবে। তার জল শুকিয়েছে। তারজালি দিয়ে ঢাকা রয়েছে কুয়োর মুখ। পুলিশের গুলি বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এখানেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অনেকে। তাঁরা যদিও বাঁচেনি। দেওয়ালে বিভিন্ন জায়গায় আজও স্পষ্ট গুলির ক্ষত। কত তা গুনে উঠতে পারিনি। ইচ্ছেও করেনি। লেখা রয়েছে মৃতদের নাম।

৬-৭ একর জায়গা জুড়ে পাঞ্জাবের অমৃতসরের এই বাগানে সেদিন বৈশাখি উৎসব পালন করতে জমা হয়েছিল প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ। তাঁদের সকলেই প্রায় ছিলেন শিখ। এর সঙ্গেই ছিল দুই জাতীয় নেতা সত্য পাল ও ডঃ সইফুদ্দিন কিচলুর গ্রেফতারের প্রতিবাদ। তাঁদের ভাবনাতেই ছিল না কী হতে পারে।

ব্রিটিশ শাসকদে কাছে খবর পৌঁছেছিল এই জমায়েতের। ভুল বুঝেছিল তারাও। প্রায় ৫০ জন সৈন্যকে নিয়ে সেই বাগানে হাজির হন কর্নেল রেজিনাল ডায়ার। বন্ধ করে দেওয়া হয় বাইরে যাওয়ার গেট। শুরু হয় গুলি বৃষ্টি। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে সেই গুলি বর্ষণ। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সকলে দৌড়তে শুরু করে প্রাণ বাঁচাতে। কেউ দেওয়াল টপকানোর চেষ্টা করেন , কেউ কুয়োয় ঝাঁপ দেয় রাস্তা না পেয়ে।

সেই সময়ের ব্রিটিশ রেকর্ড বলছে প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এই ঘটনায়। কিন্তু ভারতের হিসেব ১০০০-এর কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেই ঘটনায়। যেখানে ১৬৫০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল। ১০০ বছর কেটে গিয়েছে সেই মর্মান্তিক ঘটনার। আরও একটা ১৩ এপ্রিল। আবারও ঘুরে ফিরে আসবে এই দিন। ট্যুরিস্টদের দেখার জায়গা আজ সেই মৃত্যুপুরী। আর রয়ে গিয়েছে একরাশ দীর্ঘশ্বাস।