হাওড়া-রাজধানী এক্সপ্রেস সেরে ফেলল হাফসেঞ্চুরি, কেমন ছিল সে পথ চলা

হাওড়া-রাজধানী এক্সপ্রেস

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: হাওড়া-রাজধানী এক্সপ্রেস দেখতে দেখতে হাফ সেঞ্চুরিটা তা হলে সেরেই ফেলল। অনেক ওঠা-পড়া, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গতি চিনিয়েছিল। দু’লাইনের উপর দিয়ে এত জোরে ছোটা যায় তা তার আগে কেউ কল্পনাও করেনি। কেউ বুঝতেই পারেনি দেশের এক প্রান্ত থেকে রাজধানীর মাটিতে পা রাখা যায় এত সহজে। সেটা বুঝিয়েছিল এই ট্রেনই। সাফল্যের সঙ্গে মাথা উঁচু করে তাই ৫০টা বছর কাটিয়েও ফেলল। কত মানুষের ভরসা, কত মানুষের নিশ্চিন্ত যাত্রা। যেটা প্রথম ছেড়েছিল হাওড়া থেকে দিল্লির উদ্দেশে। সেই রাজধানী ৫০ বছরে পা দিতে চলেছে রবিবার। তাঁকে নিয়ে যে একটু আদিখ্যেতা হবে সেটাই স্বাভাবিক।

১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ দেশের প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ঠিক বিকেল ৫.৩০ মিনিটে দিল্লি থেকে হাওড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল প্রথম রাজধানী, হাওড়া-রাজধানী এক্সপ্রেস । সেই ট্রেন হাওড়া স্টেশনে প্রথম ঢুকেছিল ৪ মার্চ সকাল ১০.৫০ মিনিটে। নয়া দিল্লির উদ্দেশে হাওড়া থেকে প্রথম ট্রেন ছেড়েছিল বিকেল ৫টায়। সেই একই দিনে ১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ। পর দিন সেই ট্রেন দিল্লি পৌঁছেছিল সকাল ১০.২০ মিনিটে।

পরবর্তী সময়ে বদলেছে সময়ের চাকা। এসেছে আরও আরও রাজধানী এক্সপ্রেস। হাওড়া রাজধানীর উপর এত বেশি চাপ তৈরি হতে দেখে রেল দফতর শিয়ালদহ রাজধানীও নিয়ে এসেছে। কিন্তু প্রথমের তো কোনও বিকল্প হয় না। এ যেন প্রথম প্রেমের মতো। রাজধানীর সঙ্গে পরিচয় তো এই হাওড়া-রাজধানী এক্সপ্রেস দিয়েই। এই প্রথম না চাইতেই খাওয়ার, জল, চা। মিনিটে মিনিটে হাজির আপনার হাতের কাছে। রাজধানীতে চড়া মানে ভূরিভোজও সঙ্গী।

বিমানবন্দরের নিয়ম এ বার রেল স্টেশনে, যাত্রীদের পৌঁছতে হবে আগেই

তাই ৫০ বছরে এই রাজধানীকে ঘিরে রেল দফতরের অনেক পরিকল্পনা। রবিবার যাঁরা হাওড়া রাজধানীতে চড়বেন তাঁদের জন্য থাকবে রাজকীয় সব ব্যবস্থা। গোলাপ ফুল থেকে চকোলেট সবই থাকছে আপ্যায়নে। যে রাজধানীর খাবার নিয়ে সম্প্রতি অনেক প্রশ্ন উঠেছে তাও হয়তো বদলে যাবে অনেকটাই। সেই সময় দেশের সেরা ট্রেন ২৪ ঘণ্টার বদলে মানুষকে ১৭ ঘণ্টা ২০ মিনিটে পৌঁছে দিতে শুরু করল গন্তব্যে। ১২৩০১/১২৩০২ ভায়া গয়া রাজধানী চলত সপ্তাহে  ছ’দিন। একদিন ১২৩০৫/১২৩০৬ ভায়া পাটনা চলতো সেই ট্রেন। ১৪৫১ কিলোমিটার রাস্তা যেন চোখের নিমেশে পেরিয়ে যাওয়া যেত। ১৯৭২ সালের ১৭ মে আসে দ্বিতীয় রাজধানী মুম্বই থেকে। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ ছুঁয়ে দিল্লি। আবার একই পথে ফেরা।

এই স্বপ্নের রাজধানী একটা সময় ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ ভয়ে বেশ কিছু দিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তবে সময় সব ক্ষতকে ভুলতে সাহায্য করে। মানুষ আবার ফিরেছে ২০০২ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের সেই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার স্মৃতি ভুলে। রাতের খাওয়া শেষ করে তখন আধো ঘুমে গোটা ট্রেন। রফিগঞ্জের ধাভে নদীর ব্রিজের উপর থেকে ছিটকে পড়েছিল দ্রুত গতির সেই ট্রেন। রাত তখন ১০.৪০। ১৮টির মধ্যে ১৫টি বগিই লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছিল। দুটো বগি ডুবে গিয়েছিল নদীতে। ১৩০ থেকে ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিল ১৫০-এর উপর।

সব খারাপ স্মৃতিকে পিছনে ফেলে একদিন এগিয়ে যেতে হয়। রাজধানীও এগিয়েছে। এগিয়েছে মানুষ। আজ স্বপ্নের সেই ট্রেনের ৫০ বছরের জন্মদিনের আগে শুধুই রেলের সেই সময়ের উদ্যোগকে স্বাগত। সঙ্গে সেই মানুষগুলোকেও একবার মনে করা যাঁরা হারিয়েছিল তাঁদের প্রিয়জনদের। যাঁরা আজ আর নেই তাঁদের স্মৃতি ভাগাভাগি করে নেওয়া জন্য।

(দেশের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)