হিরোশিমা-নাগাসাকি, ভয়ঙ্কর সেই দিন আর তার না ভুলতে পারা স্মৃতি

হিরোশিমা-নাগাসাকি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হিরোশিমা-নাগাসাকি , একটা ইতিহাস। যন্ত্রণার স্মৃতি। ভয়ঙ্কর আণবিক বোমায় যখন কেঁপে উঠেছিল হিরোশিমা শহর তখন সুতোমু ইয়ামাগুচির মনে হয়েছিল প্রাণে বেঁচে গেলেন। কিন্তু তিনি যে এতটা ভাগ্যবাণ তা কি আর তিনি বুঝতে পেড়েছিলেন? যে দিন হিরোশিমায় বিস্ফোরণ হয় সে দিন সেই শহরেই ছিলেন তিনি। বিস্ফোরণ কেন্দ্র থেকে ২০০ মিটার দূরেই ছিলেন। কিন্তু কোনও আঁচ লাগেনি তাঁর গায়ে। পর দিন এই মৃত্যুপুরী ছেড়ে ট্রেন ধরে নাগাসাকিতে চলে যান তিনি। তাঁর তিন দিনের মধ্যেই নাগাসাকিও কেঁপে ওঠে সেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে। সেখানেও বেঁচে যান ইয়ামাগুচি। প্রাণে বেঁচে তো গেলেন কিন্তু মৃত্যুর ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হল তাঁকে। কত বছর বেঁচে ছিলেন জানা নেই। কিন্তু এই বাঁচাও যে বড়ই কষ্টের ছিল তাঁর জন্য। দগদগে ক্ষত হয়ত কুড়ে কুড়ে খেয়েছে তাঁকে।

৭৩ বছর কেটে গেল সেই ভয়ঙ্কর দিনের। আজ ৬ আগস্ট। ৭৩ বছর আগে এই দিনেই হিরোশিমার মাটিতে আছড়ে পড়েছিল মারণ বোমা। ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল জীবন। যার স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে জাপান।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট তখন ঘড়ির কাটায় সকাল আটটা বাজে প্রায়। ঘুম ভেঙে সবে দিন শুরু করেছে জাপানের হিরোশিমা শহর। মুহূর্তের মধ্যে গোটা শহর পরিনত হয়েছিল ধ্বংসস্তুপে। এর ঠিক তিন দিন পর পশ্চিম জাপানের অন্য শহর নাগাসাকির মাটিতেও নেমে এসেছিল একই ধ্বংসলীলা। সেই একই আণবিক বোমায় হিরোশিমার পর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল নাগাসাকি। বিশ্ব এমন ধ্বংসলীলা দেখেনি এর আগে। এ ভাবে শেষ হয়ে যায়নি সাধারণ মানুষরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল সেই সময়। সালটা ১৯৪৫। দিন ছিল ৬ আগস্ট। জাপানের হিরোশিমা শহরে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা আছড়ে পড়েছিল। বোমা ফেলার কাড়িগড় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ‘লিটল বয়’ নামের এই পারমাণবিক বোমা হামলায় কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ঠিক তার তিন দিন পর একইভাবে নাগাসাকির মাটিতে আছড়ে পড়ে আরও একটি পারমাণবিক বোমা। তাতে প্রায় মৃত্যু হয় ৭৪ হাজার মানুষের। মৃত্যুর শেষ এখানেই হয়ে গিয়েছিল তেমনটা নয়। এর পর তার প্রভাবে বছরের বছর মৃত্যু হয়েছে মানুষের। জন্ম নিয়েছে বিকলাঙ্গ শিশু। বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে তার পরও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দুরারোগ্য রোগ নিয়ে জন্মাচ্ছে অনেকেই।

মুঘলসরাই নামটার সঙ্গে সম্পর্ক অনেক পুরনো

সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল?

হিরোশিমার আকাশে হঠাৎই উদয় হয় মার্কিন বি২৯ বোমারু বিমান এনোলা গে। বিমান থেকে ফেলা হয় সেই বোমা। মাটি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উপরে ঘটে বিস্ফোরণ। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় প্রচুর মানুষের। তখন ঘড়ির কাটায় বাজে সোয়া আটটা। ধসে পড়ে প্রায় সব বাড়ি। কেউ বোমার আঘাতে আবার কেউ বাড়ি চাপা পড়ে মারা যান। সেই বিমান চালকদের নির্দেশ ছিল ধরা পড়ার পরিস্থিতি হলে যেন সকলেই পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নেন। সেই জন্য তাও মজুত ছিল সেই বিমান।

কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের উপর এই ভয়ঙ্কর হামলা করল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন প্রায় শেষের দিকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান জাপানকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কিন্তু রাজি হয়নি জাপান। যা মেনে নিতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাপানকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাতেই ঘটে গেল এই ভয়ঙ্কর ঘটনা। তার পরই আত্মসমর্পণ করে জাপান।

পেড়িয়ে গিয়েছে সাত দশক। তবুও এই দিনটিকে ভুলতে পারেনি বিশ্ব। ভুলতে পারেনি জাপানের মানুষ। হিরোশিমায় বোমা ফেলার ঘণ্টা তিনেক পর টোকিও জানতে পারে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তাদের এই শহর। পরমাণু আক্রমণের পর হিরোশিমায় প্রথম ফোটে ওলিয়েন্ডার ফুল। তাই এই ফুলটি হিরোশিমার সরকারি ফুল বলে স্বীকৃত। সব গাছপালা ধ্বংস হয়ে গেলেও  পরমাণু বোমার আঘাত সহ্য করে হিরোশিমায় টিকে ছিল ৬টি জিঙ্গো বিলোবা গাছ। তারা হয়ত আজ আর নেই। তবে ওলিয়েন্ডার আজও ফোটে হিরোশিমায়।