২৬/১১ পেরোলো ১০ বছর, কিন্তু রক্তাক্ত সেই মুম্বইয়ের হাতে শুধুই রাজনীতি-কূটনীতির পেন্সিল

২৬/১১তাজ হোটেল

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ২৬/১১, ২০০৮। দিনটা ছিল বুধবার। রাত তখন সাড়ে ৯টা হবে। টিভির পর্দায় আচমকাই ভেসে উঠল, ব্রেকিং নিউজ: মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে জঙ্গি হামলা। ভরা স্টেশনে গুলি চালাচ্ছে জঙ্গিরা।

টিভি চ্যানেলগুলিতে তখন জাস্ট খবরটা ধরানো হয়েছে। কোনও ভিডিও নেই। শুধু সাংবাদিকের ফোন-ইন। সঙ্গে স্টেশন চত্বরের পুরনো কিছু স্টিল ছবি। তখনও গোটা দেশ জানতে পারেনি, বিশ্বের কুখ্যাত জঙ্গি হামলাগুলোর ম্যাপে জায়গা করে নিচ্ছে মুম্বই। জানতে পারেনি, মুম্বইয়ের ৮টি জায়গা একই সঙ্গে জঙ্গিদের গুলি-গ্রেনেডের আক্রমণে ধসে যাচ্ছে। জানতে পারেনি, ১৬৪ জনের প্রাণ কেড়ে নেবে ওই হামলা। জানতে পারেনি, ৩০৮ জন গুরুতর আহত হয়ে সারা জীবন ওই হামলার স্মৃতি বয়ে বেড়াবেন।

ঠিক যেমন করে জানতে পারেননি সিএসটি স্টেশনের যাত্রী এবং তাঁদের ট্রেনে তুলে দিতে আসা আত্মীয়-বন্ধুরা। এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশেরও কম সময়ে তাঁদের শরীর লক্ষ্য করে ছুটে আসবে অ্যাসল্ট রাইফেলের প্রাণঘাতী গুলি। গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার ঠিক উল্টো দিকের তাজ হোটেলে থাকা সেই মানুষগুলোও যেমন ঘুণাক্ষরে জানতেন না, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কী ভাবে তছনছ হয়ে যাবে বেঁচে থাকা। পরের কয়েক দিন ওই বিলাসবহুল হোটেল এবং স্থাপত্য কী ভাবে নষ্ট হবে, কী ভাবেই বা জঙ্গি মুক্ত হবে, জীবনে প্রথম বার টানা ৩৬ ঘণ্টা সেই রোমহর্ষক দৃশ্য টিভিতে লাইভ দেখার অভিজ্ঞতাও যে হবে, সেটাও জানতেন কেউই।

ইন্দিরা গান্ধী: একটি রাজনৈতিক হত্যা এবং শিখবিরোধী দাঙ্গার ৩৪ বছর

যেমন জানতেন না আফগান সীমান্ত থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা এনএসজি-র ২৯৫ জন মেরিন কমান্ডো, আগামী কয়েক দিন তাজ ও ওবেরয় ট্রাইডেণ্ট হোটেলে যুদ্ধ চালাতে হবে। লিওপোল্ড ক্যাফেতে শেষ হয়ে আসা সন্ধেয় কফির স্বাদ নেওয়া ওঁরাও তো জানতেন না, কয়েকটা মুহূর্ত কী ভাবে কেড়ে নেবে জীবন! আর কামা হাসপাতাল, নরিম্যান হাউস— তারাও কী জানত কী হচ্ছে মুম্বই জুড়ে! রক্তাক্ত হচ্ছিল বাণিজ্য নগরীর আটটি জায়গা।

মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদী দমন স্কোয়াডের প্রধান হেমন্ত কারকারে যেমন তখনও জানতেন না, ওই হামলা আসলে পাকিস্তান থেকে লস্করে তৈবা চালাচ্ছে। ঠিক যেমন জানতেন না তুকারাম ওম্বলে। যে জঙ্গিদের হাতে এত মানুষের প্রাণ যাবে, তাদেরই অন্যতম আজমল কসাব ২৭ নভেম্বর রাত দেড়টায় তাঁর চেষ্টাতেই ধরা পড়বে। এবং মুম্বইয়ের এই হামলায় একমাত্র জীবিত জঙ্গিই হবে ওই আজমল কসাব। তুকারাম ওম্বলে ছিলেন মুম্বই পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর। নিরস্ত্র তুকারামের দেহ এ ফোঁড়-ও ফোঁড় করে দিয়েছিল একে-৪৭

ঠিক তেমন করে জানতেন না, ‘এনকাউন্টার স্পেশ্যালিস্ট’ বিজয় সালাসকার, আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই জঙ্গিদের গুলি তাঁকে শেষ করে দেবে। সালাসকারের সঙ্গেই সে দিন কামা হাসপাতালে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অশোক কামটে ও সন্ত্রাস দমন শাখার প্রধান হেমন্ত কারকারে। তারাও জানতেন না পরিণতি কোন দিকে নিয়ে যাবে।

২৬/১১

ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস

দু’দিনের মধ্যে মধ্যেই মুম্বই পুলিশ ও অন্যান্য রক্ষীবাহিনী তাজ হোটেল ছাড়া অন্য সব জায়গা জঙ্গিমুক্ত করে ফেলে। ২৯ নভেম্বর ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গ্রুপ তাজ হোটেলের জঙ্গিদের নিকেশ করে। সেই ‘ব্ল্যাক টর্নেডো’ই টিভিতে লাইভ দেখানো হয়েছিল।

জল অনেকটা গড়ানোর পর বিচার প্রক্রিয়া শেষে আজমল কাসবের ফাঁসি হয় ২০১২-র ২১ নভেম্বর।

ওই জঙ্গি হামলার ১০ বছর পূর্ণ হল। এখনও অনেক কিছু জানা নেই। যেমন জানা নেই, ধৃত কাসভের ফাঁসি ছাড়া ওই জঙ্গি হামলা নিয়ে তদন্ত কত দূর এগিয়েছে? ভারত যাদের প্রধান অভিযুক্ত বলে দাবি করেছে, লস্কর-ই-তৈবার সেই কমান্ডার জাকিউর রহমান লাকভি এবং হাফিজ সইদের কেন কোনও সাজা হল না? এই হামলার অন্যতম চক্রী অভিযুক্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলি আমেরিকার জেলে বন্দি কেন? কেন তাকে এ দেশে নিয়ে এসে জেরা করা যাচ্ছে না?

না জেনেই মারা যাওয়া ওই নিরপরাধ মানুষগুলোর হাতে রইল তা হলে কী? রাজনীতি-কূটনীতির পেন্সিল। এবং সেটাও কেন, তা-ও জানা নেই।

২৬/১১

স্মরণে…