৩৬ বছর ঘুমিয়ে থাকা স্বামীর পাশে স্ত্রী দেখাচ্ছেন জীবনের রক্ষণ

সপরিবারেসপরিবারে

জাস্ট দুনিয়া প্রতিবেদন: এ যেন এক রূপকথার গল্প। এ যেন গল্প এক নারীর লড়াইয়ের। অদম্য প্রেমেরও বটে। যে প্রেম আঁকড়ে দীর্ঘ ৩৬ বছর বেঁচে রয়েছে বার্নাডেট অ্যাডামাস। সেই প্রেমেরই আর এক মেরুতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জেন পিয়ের অ্যাডাম। ফ্রান্সের প্রাক্তন ডিফেন্ডার। হ্যাপি ফ্যামিলির চিত্রটা একদিন হঠাৎই বদলে গিয়েছিলেন এই দম্পতির। ভেঙে গিয়েছিল সব স্বপ্ন। যখন অ্যাডামাস দম্পতি সুখের স্বপ্নে ভাসছেন তখনই বার্নাডেটের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। কিন্তু সেই অন্ধকারে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাননি তিনি। বরং শক্ত হাতে সেই ভালবাসার মানুষটাকে আঁকড়েই আজও বেঁচে রয়েছেন বার্নাডেট। শুধু জানেন, তাঁকে আজও অনুভব করতে পারেন তাঁর ফুটবলার স্বামী।

‘‘কখনও যদি আমি খাওয়ানোর সময় না পাই, ও বুঝতে পারে আমি খাওয়াচ্ছি না। ও আমার গলার শব্দ চেনে।’’ বার্নাডেট

১৯৮২ সালের একটি দিনের ঘটনা। সব ফুটবলারদেরই যেমন হয়। চোট-আঘাত লাগেই। তখন অ্যাডামাসের বয়স ৩৪। হেঁটেই গিয়েছিলেন লিয়ঁর এক হাসপাতালে। হাঁটুর সমস্যায় একটা ছোট্ট অস্ত্রোপচার করার দরকার ছিল। সব ফুটবলারদেরই কখনও না কখনও হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। সে রকমই গিয়েছিলেন অ্যাডামাস। কিন্তু সেই হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর যখন অ্যাডামাসকে দেখতে পেলেন তাঁর স্ত্রী তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে কথা। সেই অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে কথা বলেছিলেন ৩৬ বছর আগে তার পর থেকে আজ পর্যন্ত আর কথা বলতে পারেননি। বন্ধ হয়ে গিয়েছে চলা-ফেরা।

সুস্থ সবল স্বামীকে পাঠিয়েছিলেন হাঁটু ঠিক করতে, বেরিয়ে এলেন কোমায় চলে যাওয়া পিয়ের। তার পর থেকেই বার্নাডেটের লড়াই শুরু। স্বামীর সবটাই নিজে হাতে করেন। তার মধ্যেই বড় করে তুলেছেন সন্তানকে। সন্তানের ঘরের সন্তানও এসেছে। কিছুই বুঝতে পারেন না জেন পিয়ের। স্বামীর জন্য দিনরাত এক করে বার্নাডেটের চলে তপস্যা। তপস্যাই তো বটে। আজও সব উৎসবে স্বামীর জন্য উপহার কেনেন স্ত্রী। স্বযত্নে পরিয়ে দেন তাঁকে। ডিফেন্ডার জেন পিয়ের আর দলের রক্ষণ সামলাতে পারেন না। কিন্তু স্ত্রী দেখালেন কী ভাবে রক্ষণ সামলে জীবনের ম্যাচ জিতে যাওয়া ৩৬ বছর ধরে।

১০ মার্চ ৭০ বছরে পা দিলেন ফ্রান্সের প্রাক্তন এই ডিফেন্ডার। জন্মদিনও পালন হল। স্বামী ওই নিঃশ্বাসটাই বাঁচিয়ে রাখে বার্নাডেটকে। আর জেন পিয়ের বাঁচে স্ত্রীর চেনা স্পর্শে, চেনা গলার শব্দে। বার্নাডেট বলছেন, ‘‘কখনও যদি আমি খাওয়ানোর সময় না পাই, ও বুঝতে পারে আমি খাওয়াচ্ছি না। ও আমার গলার শব্দ চেনে।’’ এই চার দেওয়ালের বাইরে খুব প্রয়োজন না হলে আর বেরোয় না বার্নাডেটও। গুছিয়ে রাখেন স্বামীর ঘর। রাঁধেন, খাওয়ান, সেবা করেন। এতেই আনন্দ বার্নাডেটের। দক্ষিণ ফ্রান্সের এই বাড়িটাকে প্রেমের বাড়ি বলা যেতেই পারে। বলা যেতে পারে এক নারীর লড়াইয়ের সাক্ষীও।

এই প্রেমের রূপ কথার গল্পের পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটা অন্ধকার দৃষ্টান্ত। যার জন্য শেষ হয়ে গেল একটা ফুটবলারের ফুটবল জীবন। শেষ হয়ে গেল ব্যাক্তিগত জীবন। এক শিক্ষানবিশ অ্যানাস্থেটিস্টের ভুলে সেদিন ফুসফুসের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি এবং কোমায় চলে যান। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ঘুমন্ত স্বামীকে নিয়েই সুখে আছেন বার্নাডেট। এখন একটা ভয় হয় তাঁর। যদি স্বামীর আগে তাঁর মৃত্যু হয়? তা হলে শেষ জীবনটা যে আর সুখের হবে না জেন পিয়ের অ্যাডামাসের।