বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার দু’বছর

বিবেকানন্দ উড়ালপুলবিবেকানন্দ উড়ালপুল

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: বিবেকানন্দ উড়ালপুল, দিনেদুপুরে নির্মীয়মান ওই সেতু হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল গণেশ টকিজের কাছে। সেতুর ভেঙে পড়া অংশে চাপা পড়ে মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক। সেতু আজও গড়ে ওঠেনি। বা ভেঙে ফেলা হয়নি বাকি সেতুর অংশ। কিন্তু, দু’বছর আগে ২০১৬-র ৩১ মার্চের সেই আতঙ্কিত এবং ভয়াবহ দুপুর আজও সকলের মনে দগদগে।

কী হয়েছিল সে দিন?

সে দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বিবেকানন্দ রোডের উপর ভেঙে পড়ে উড়ালপুলের একটা অংশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, প্রচণ্ড জোরে মেঘ ডাকলে যেমন আওয়াজ হয়, তেমনই কড়-কড় শব্দ হতে তাঁরা তাকিয়ে দেখেন নির্মীয়মান ওই সেতুর একটা অংশ ভেঙে নীচে নেমে আসছে। তলা দিয়ে তখন যাচ্ছিল বাস-গাড়ি-মানুষ। সবটাই মুহূর্তের মধ্যে চাপা পড়ে যায়, ওই সেতুর তলায়। চারদিকে তখন বেছে থাকার আর্তনাদ। ব্রিজের তলা থেকে বেরিয়ে রয়েছে কারও হাত, কারও বা পা। কোথাও আবার চাপা পড়া ট্যাক্সির ভিতর থেকে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে চিৎকার করছেন চালক। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য!

কী ভাবে হয়েছিল উদ্ধার কাজ?

এমনিতে পোস্তা এলাকা সব সময়েই ভিড়ে বোঝাই থাকে। সে দিন দুপুরেও তেমনটাই ছিল। নিশ্চিন্তে রাস্তা পার হওয়া পথচারীরাও নিজেদের অজান্তেই সেঁধিয়ে গিয়েছিলেন ওই সেতুর তলায়। আগের দিন রাতে কাজ হয়েছে। ঘটনার সময়েও সেতুতে ঢালাইয়ের কাজ হচ্ছিল। আর সেই সময়েই নেমে আসে সেতুর ওই অংশ। উদ্ধারের কাজে সঙ্গে সঙ্গেই হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয়রা। দমকল এবং পুলিশও আসে। কিন্তু, লোহার বিম, সিমেন্টের চাঙড় সরিয়ে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার করা এক কথায় তাঁদের পক্ষে ছিল অসম্ভব। ঘণ্টাখানেক পরে ক্রেন আনা হয়। তত ক্ষণে চলে গিয়েছে নিরীহ বেশ কিছু প্রাণ। কিন্তু, উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়নি। এর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেনা বাহিনীর সাহায্য চেয়ে পাঠান। ঘণ্টাচারেক পর আসে কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবুলা বাহিনী। আসে সেনা। এর পর উদ্ধারকাজে দ্রুততা আসে। মন্ত্রী-আমলায় তত ক্ষণে পোস্তা এলাকা ছয়লাপ। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা।

এগ্‌জাম ওয়ারিয়র্স নিয়েই মোদীকে আক্রমণ রাহুলের

বেলা সওয়া সওয়া চারটে নাগাদ জেলাসফরের মাঝপথ থেকেই তা বাতিল করে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কিছু ক্ষণ পরেই পৌঁছন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রাতভর চলে উদ্ধারকাজ। তখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি ঠিক কত জনের প্রাণ কেড়েছে ওই সেতু! এর পর অনেক দিন ধরেই চলেছে সেতুর ভাঙা অংশ সরানোর কাজ। আর সেই সময়েই উদ্ধার হয়েছে বেশ কয়েকটি দেহ। মোট ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল ওই ঘটনায়।

বিবেকানন্দ উড়ালপুল

বিবেকানন্দ উড়ালপুল

২০০৮ সালে পোস্তায় উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। ২০০৯-এই কাজ শুরু হয়। তার দু’বছর পরে ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি। এর প্রায় পাঁচ বছর পরে সেতুর কাজ যখন প্রায় শেষের মুখে, তখনই কাজ চলাকালীন তার একটি অংশ ভেঙে পড়ে।

কী কারণে ভেঙে পড়েছিল ওই সেতু?

ঘটনার পর রাজ্যের তরফে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দিয়েছিল রেলের সহযোগী সংস্থা রাইটস-কে। তারা প্রাথমিক রিপোর্টে রাজ্যকে জানিয়েছিল, স্তম্ভ এবং গার্ডার তৈরির সময় যতটা শক্তিশালী ইস্পাত দেওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। এমনকী, উড়ালপুলের নকশা মেনেও সব জায়গায় কাজ হয়নি বলে ওই বিশেষজ্ঞ সংস্থা তাদের রিপোর্টে ইঙ্গিত দেয়। সেতুর যে অংশটি অক্ষত রয়েছে সেখানে কয়েকটি অংশ থেকে গার্ডার সরে গিয়েছে বলেও জানিয়েছিল রাইটস।

উড়ালপুলের ১০০ মিটারের মতো অংশ ভেঙে পড়ার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভেঙে পড়া এবং অক্ষত অংশ খতিয়ে দেখে সেতু বিশেষজ্ঞেরা চারটি কারণের উপরে জোর দিয়েছিলেন। নকশায় গলদ, খারাপ নির্মাণ সামগ্রী, নকশা মেনে কাজ না হওয়া এবং সাত তাড়াতাড়ি কাজ করতে গিয়ে গাফিলতিকে প্রশ্রয় দেওয়া। রাইটস তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে বলেছিল, নকশা মেনে কাজ হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। নির্মাণের কাঁচা মাল নিয়েও তারা ধন্দ ছিল। উড়ালপুলের যে অংশটি ভেঙে পড়েছে সেটি ঢালাই করার সময়ে নিরাপত্তার নিয়মকানুন মানা হয়নি বলেও জানিয়েছে রাইটস।

এখন কী অবস্থা?

তবে পোস্তায় ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ এখনও বিশ বাঁও জলে। সম্প্রতি ওই সেতুর নীচের রাস্তা দিয়ে পুরোদমে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। কয়েক মাস আগে পরীক্ষামূলক ভাবে অটো চলাচল শুরু হয়েছিল। পরে ওই ভাঙা অংশের নীচ দিয়ে ছোট গাড়ি চলার অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রয়োজনে ওই রাস্তা দিয়ে বাস এবং ছোট মালবাহী গাড়ি চলাচল করছে।