সাই ডিরেক্টর মনমিত সিংহ গোয়িন্ডি বদলে দিতে চাইছেন পূর্বাঞ্চলের খেলার দুনিয়াকে

সাই ডিরেক্টর মনমিত সিংহ গোয়িন্ডিসাই ডিরেক্টর মনমিত সিংহ গোয়িন্ডি

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: দেখতে দেখতে এই শহরে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। মাথায় পাগড়ি,  শুট-বুটের গম্ভীর মানুষটিকে দেখলে বেশ ভয় ভয়ই করে কথা বলতে। এই বুঝি বকে দিলেন।

কিন্তু কথা বললেই বোঝা যায়, আসলে ভারতীয় ক্রীড়ার স্বার্থে যতটুকু তাঁর দায়িত্ব রয়েছে তাতে এক ইঞ্চিও ফাঁক রাখতে চান না মনমীত সিং গোয়িন্ডি। সেখানে পান থেকে চুন খসলেই তিনি কিন্তু ভয়ঙ্কর রাগী। অন্য সময় এক জন ক্রীড়াপ্রেমী সাধারণ মানুষ। তিনি পূর্বাঞ্চল সাইয়ের ডিরেক্টর। তাঁর হাতে অনেক দায়িত্ব। স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার কলকাতা সেন্টারে তাঁর কোয়ার্টারে বসে দিনের শেষে গল্প যখন শেষ হল তখন ডিনারের ডাক চলে এসেছে স্ত্রীর।

সাইয়ের গেটে ঢোকার সময়ই একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। বাঙ্কার করে বসে রয়েছে সিআরপিএফ। এমনটা আগে তো দেখিনি। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে মিস্টার গোয়িন্ডিকে। আন্দোলনেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে তৎকালীন নিরাপত্তারক্ষীদের। কিন্তু কোনও কিছুকে ভয় না পেয়ে তিনি ক্রীড়াবিদদের নিরাপত্তার স্বার্থে লড়ে গিয়েছেন শেষ পর্যন্ত। সফলও হয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘এ রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোথাও নেই। আমার নামের প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে গেটের বাইরে আন্দোলনে বসেছিল আগের নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। সেই সময় আমার উপর হামলাও হতে পারত কিন্তু আমি লড়ে গিয়েছি।’’

কী বলেছেন সাই-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা? দেখুন ভিডিওয়—

তাঁর জমানাতেই এশিয়ান গেমস থেকে সোনা জিতে এসেছেন অ্যাথলিট স্বপ্না বর্মন। পায়ে এখনও প্লাস্টার করা। কিন্তু স্বপ্নাকে রিসিভ করতে সেই ভাঙা পায়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন সাইয়ের গেটে। স্বপ্নার কথা বলতে গিয়ে এখনও গর্বিত শোনায় এই পঞ্জাব পুত্তরের গলা। বলেন, ‘‘আমি জানতাম ও সোনা জিতবে। প্রথম দুই রাউন্ডের পরেই বলে দিয়েছিলাম স্বপ্না সোনা নিয়েই ফিরবে। সবার সংশয় ছিল কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম।’’ স্বপ্নার জুতো-সমস্যা মেটাতে স্পোর্টস শু প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করে দিয়েছেন তিনিই। ক্রীড়া মন্ত্রকও তাঁতে সম্মতি জানিয়েছে।

তিনি লড়ে যান এই সব ক্রীড়াবিদদের একটা সুন্দর পরিবেশ দেওয়ার জন্য। স্বপ্না ছাড়া আর কেউ এশিয়ান গেমসে পদক না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু জানেন খেলোয়াড়রা কী ভাবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে শেষ হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরই সাইয়ের অনেকের সেই অধঃপতন দেখে কষ্ট পান। কিন্তু এতটাও যে তাঁর হাতে নেই। তাঁর জমানায় উত্তর-পূর্ব ভারতের সাইয়ের বিভিন্ন সেন্টার যা এত দিন সবার চোখের আড়ালে যা ইচ্ছে করে গিয়েছে তাদেরও ঠিক করে দিয়েছে গোয়িন্ডির হিটলারি শাসন।

‘সুনীল আপনি এ বার ফুটবলটা ছেড়ে দিন’

বলছিলেন, ‘‘উত্তর-পূর্ব ভারতের এক সেন্টারে গিয়েছি। খেতে বলেছিল। আমি জানালাম, প্লেয়াররা যা খায় আমিও তাই খাব। দেখি ওরা আমতা আমতা করছে। সরাসরি চলে গিয়েছিলাম ওদের কিচেনে। গিয়ে দেখছি জল মেশানো ডাল আর ভাত ছাড়া কিছু নেই। কিন্তু সাইয়ের খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, প্রোটিন জাতীয় খাবার সব রয়েছে। এবং নিয়মিত দিতে হবে।’’ শুনেছিলেন এই অভিযোগ। তাই সরাসরি চলে গিয়েছিলেন হাতে-নাতে ধরার জন্য। এখন খুশি সেখানকার ক্রীড়াবিদরা।

এ ভাবেই পূর্বাঞ্চল সাইয়ের সব সেন্টারের চেহারা ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছেন তিনি। কলকাতা তো বদলেই গিয়েছে। কলকাতা সাইয়ের ক্রীড়াবিদরা কী খাবেন সেটা নিজেই দেখভাল করেন। সুযোগ পেলে তাঁদের সঙ্গেই খেতে বসে যান। তাঁর হাতে পড়ে শেষ পর্যন্ত বদলাচ্ছে কলকাতা শহরের একমাত্র হকির টার্ফ। নীল টার্ফ বসছে কলকাতা সাইয়ে। বলছিলেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এ বার বিশ্বমানের টার্ফে খেলতে পারবে কলকাতার হকি প্লেয়াররা।’’ যা নিয়ে প্রতিবাদ বেটন কাপ খেলতে এসে অভিযোগ করতেন আন্তর্জাতিক প্লেয়াররা।

গোয়িন্ডি বলছিলেন, ‘‘শুধু টার্ফ নয়, দুটো ড্রেসিংরুম, এক দিকে গ্যালারিও তৈরি হচ্ছে।’’ কলকাতা হকির চেহারাটাও বদলাচ্ছে তাঁর হাত ধরেই।