‘এক দিনে চৌদ্দটি সিনের শট করিয়ে নিল তথাগত’ মুখোমুখি চিরঞ্জিত চক্রবর্তী

চিরঞ্জিত চক্রবর্তী

           নবনীতা দাশগুপ্ত


ছোটবেলা থেকেই ঘোড়ার প্রতি একটা বিশেষ ঝোঁক ছিল তার। আঁকতে ভালবাসতেন নানা রঙের ঘোড়া। এক রকম অভ্যাস ছিল বলা যায়। স্বনামধন্য অভিনেতার এই বিশেষ ভাললাগার কথাটি সম্ভবত অনেকেরই অজানা। নানা ধরনের ঘোড়া দেখে তা নিয়ে আঁকিবুঁকি করলেও এক শিং ওয়ালা ঘোড়া জীবনে কোনওদিন দেখেননি চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। এ বার দেখলেন সেই এক শিং ওয়ালা ঘোড়া। যাকে ইংরেজিতে বলে ইউনিকর্ন। অভিনয় করলেন ‘ইউনিকর্ন’এ। পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ের এই
ছবিতে একজন মনোবিদের চরিত্রে দেখা যাবে চিরঞ্জিত চক্রবর্তীকে। চরিত্রের নাম দিগম্বর। সেই সব নিয়েই মন খুলে কথা বললেন জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে।

প্রশ্ন: কেমন মানুষ এই দিগম্বর? 

চিরঞ্জিত: অত্যন্ত জ্ঞ্যানী এবং ভাল মানুষ। তিনিই সঠিক দিশা দেন ছবির প্রোটাগনিস্ট অপালাকে। যে চরিত্রে কাজ করছেন দেবলীনা। খুব ভাল কাজ করেছেন দেবলীনা। অপালার হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যাওয়াটাকে হ্যালুসিনেশন বললেও এক সময় দিগম্বরও দিশাহারা হয়ে যায় এই ভেবে যে আসলে কী হল ওর?

শুনুন কী বলছেন চিরঞ্জিত ১

প্রশ্ন: নবীন পরিচালক তথাগতর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

চিরঞ্জিত: ভীষণ পরিশ্রম করতে পারে। কী ভাবে যে ১৪ টা সিন করিয়ে নিল এখনও ভাবলে অবাক লাগে। সূর্য ডোবার আগে সিন গুলো করার ছিল। গল্প আসলে ওভাবেই বোনা হয়েছে। আমি বলেছিলাম এক ঘণ্টার ছবির জন্য আমি ঠিক এক দিন সময় দেব। ওই এক দিনেই সবটা শেষ করেছিল তথাগত। একদম অন্য জনারের ছবি বানিয়েছে।

ভাবনাটা ওর মাথায় এল কী করে বুঝতে পারছি না। তবে শুনেছি তথাগতর ফ্যান্টাসি দুনিয়ার প্রতি একটা ভালবাসা আছে। সেই জায়গা থেকেই হয়ত ‘ইউনিকর্ন’ বানানোর তাগিদ অনুভব করেছিলেন।

ইউনিকর্ন, নৈশব্দের রঙের ছবি

প্রশ্ন: এর আগে এরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে কখনও?

চিরঞ্জিত: না না, একদমই না। হয়’ত তিনটে ছবির শুটিং একই দিনে বিভিন্ন সময় গিয়ে করে এসেছি। কিন্তু একটা ছবির জন্য ১৪টা সিনের শট দেওয়া আমার ৪১ বছরের অভিনয় জীবনে এই প্রথম। এটা কোনও অভিনেতা করতে পারে বলে আমার জানা ছিল না। কেউ করেছে কিনা সেটাও জানা নেই। কিন্তু আমি করলাম। তথাগত আসলে করিয়ে নিল।

প্রশ্ন: আপনি তো ঘোড়ার ছবি আঁকতে ভালবাসেন, ইউনিকর্ন- এর ছবি আঁকেননি কখনও?

চিরঞ্জিত: আমি জানতামই না ঘোড়ার কখনও শিং থাকতে পারে। তার উপর আবার এক শিং ওয়ালা ঘোড়া। এই এক শিং ওয়ালা ঘোড়া গুলো স্বর্গ রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের দেখার চান্স নেই। কদিন আগে দেখলাম আমার মেয়ে তার মেয়েকে এক খানা ইউনিকর্ন টয় কিনে দিয়েছে। কোথায় গিয়ে এই ছবিটার সঙ্গে একটা ব্যক্তিগত জীবনের মিল খুঁজে পেলাম।

শুনুন কী বলছেন চিরঞ্জিত ২

প্রশ্ন: ব্রেক ক’বার পেয়েছিলেন?

চিরঞ্জিত: একবারও না। শুধু লাঞ্চ ব্রেক পেয়েছিলাম। ১৪ টা সিনের জন্য ২২ পাতা মুখস্থ করতে হয়েছে আমাকে। ভাবা যায়!

প্রশ্ন: ইউনিকর্ন ছবিটিকে আন্তর্জাতিক মানের বলা হচ্ছে। আপনি কী বলবেন?

চিরঞ্জিত: বিলক্ষণ আন্তর্জাতিক মানের। বাইরে শুটিং। আন্ডারওয়াটার শট নেওয়া হয়েছে। সংলাপও রয়েছে তার সঙ্গে। বাংলা ছবির ইতিহাসে আমার মনে হয় এই প্রথম এটা। জলের তলার সব কটা শট তথাগতর নেওয়া।

শুনেছি প্রায়ই দেবলীনা আর তথাগত এই দম্পতি জলের তলায় ঘোরাফেরা করে। এ বার তারা এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলবে কে জানত? এ বার জলের তলায় ক্যামেরা নিয়ে ডুব দিয়েছিল তথাগত। অর্থাৎ ইউনিকর্ন বানানোর মাটিটা খুঁড়ছিল অনেক দিন থেকেই। এ বার তা গড়ে উঠল।

ওয়ারডস ওয়ারথ-এর লেখা ‘দ্য সলিটেরি রিপার’কবিতাটিকে গানের আকার দিয়েছেন ময়ূখ ভৌমিক। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক তো বটেই। ফেস্টিভ্যালে পাঠানোর মতো ছবি এটি। তথাগতর এই অনন্য প্রয়াস সকলের ভাল লাগবে এমন আশাই করি আমি।