সেকেন্ড বয়দের কেউ মনে রাখে না: অর্ণব

শিলংএর পুলিশ বাজারের মোড়ে হোটেল এম ক্রাউন। লাজং এফসি ম্যাচ খেলতে এসে এখানেই ঘাঁটি গেড়েছে ইস্টবেঙ্গল। ফুটবলারদের শরীরীভাষাতে যুদ্ধজয়ের সংকল্প। মুহুর্মুহু নিজেদের মধ্যে আলোচনাতে ব্যস্ত বিদেশি ও স্বদেশি ফুটবলারাও। এই পুরোটাই যার নেতৃত্বে হচ্ছে তিনি ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক অর্ণব মণ্ডল। লাজং ম্যাচের আগের দিন হোটেলে নিজের ঘরে বসে ইস্টবেঙ্গলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকার পর্বে উঠে এল এক অচেনা ‘অর্ণব’পর্ব।

এখানে আসা থেকে দেখছি আপনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর আত্মজীবনীতে ডুবে আছেন । এর কারণটা কি ?

অর্ণব: আমি মনে করি চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে নিজেদেরকে চ্যাম্পিয়নদের আদলে গড়ে তুলতে হয়। রোনাল্ডো একজন চাম্পিয়ন। ওঁর জীবনী পড়ে নিজেকে মোটিভেট করার চেষ্টা করছি। লালহলুদের জার্সিতে এ বার যে কোনও মূল্যে চাম্পিয়ন হতেই হবে। এ জন্য মানসিক ভাবেও আমাদের আরও দৃঢ়চেতা হতে হবে ।

হঠাৎ করেই কি অর্ণব মন্ডল বদলে গেল ?

অর্ণব: গোকুলাম ম্যাচে লালকার্ড দেখার পর নিজেকে বদলে ফেলেছি। এই দলটার অধিনায়ক আমি। বুঝেছি নিজেকে সাধারণের গণ্ডি ছাড়িয়েও অসাধারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই দলনেতা হওয়া যায়। আর প্রকৃত দলনেতাই একটা দলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা দেখাতে পারে। আমি রজার ফেডারারের ভক্ত। এই বয়সেও লোকটা যে পরিশ্রম করে তা সকল স্পোর্টসম্যানের কাছে শিক্ষণীয়। প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন তো ফেডেরারও। ওঁর পথ অনুসরণ করেই সাফল্যের হদিশ পেতে চাই।

আইলিগ জেতার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?

অর্ণব: এ রকম সুযোগ সামনের দশ বছরে ইস্টবেঙ্গল পাবে না। এই সুযোগটা যে কোনও মূল্যে কাজে লাগাতে হবে। আর আমি ভারতবর্ষের সব ট্রফি জিতেছি। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি । শুধু আইলিগটাই জিতিনি । অধিনায়ক হিসেবে এ বার আইলিগটা জিততে চাই।

পুরো মরসুমে আপনার পারফরম্যান্স নিয়েও অনেকক্ষেত্রে বহু সমালোচনা হয়েছে। সেগুলো কি আপনার মনে কোনও প্রভাব ফেলেছে?

অর্ণব: যাঁরা অকর্মণ্য, তাঁরাই সমালোচনা করে । আমি সারাদিন ফুটবলে ডুবে থাকি। ফুটবলের বাইরে কোনও কিছু ভাবি না। তবে প্রতিমুহূর্তে অনুশীলনে নিজেকে আরও ক্ষুরধার ও পরিণত করার চেষ্টা করি। আমি মনে করি সাফল্যই সব সমালোচনার জবাব দিতে পারে। আর সচিন, সৌরভ থেকে মেসি-রোনাল্ডো সকলেই জীবনে খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয়েছেন। তাই আমিও ভেঙে পড়িনি, এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে চাই ।

মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের অন্তর্ভুক্তি দলে কতটা প্রভাব ফেলেছে?

অর্ণব: নিঃসন্দেহে মনাদার অন্তর্ভুক্তি ইস্টবেঙ্গলের ড্রেসিংরুমে বাড়তি শক্তি জুগিয়েছে। ওঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি পরিপূর্ণ। ওঁর টিপস্ আমাদের মাঠে ও মাঠের বাইরেও বদলে দিচ্ছে। কোচ, রঞ্জনদা, মনাদা-সহ দলের প্রত্যেকে আমাদের পিছনে অনেক পরিশ্রম করছে। এর প্রতিদান আমাদের ট্রফি জিতেই দিতেই হবে। না হলে এই পরিশ্রমের কোনও মূল্য থাকবে না।

টিম মিটিংয়ে উজ্জীবিত ভঙ্গিতে কী বলছিলেন ফুটবলারদের?

অর্ণব: কাল দুপুরে আমাকে নিতুদা (দেবব্রত সরকার) ফোন করেছিলেন। ওদেরকে সেটাই বললাম এই দুটো ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের একটা ইতিহাস বদলে দিতে পারে। ক্লাবের কর্মকর্তা, দলের সঙ্গে যুক্ত সকল সদস্য, সমর্থকরা আমাদের দিকে তাকিয়ে। চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলে আমাদের কেউ মনে রাখবে না। চল দেখিয়ে দিই সকলকে যে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারি। সেকেন্ড-বয়দের এ সমাজে কোনও দাম নেই।

কাল ডিফেন্সে এডু নেই। কতটা সমস্যার হবে এডুর না থাকাটা?

অর্ণব: এডু শক্তিশালী ও কার্যকরী ডিফেন্ডার। তবে আমি, গুরবিন্দর, সালাম আছি। নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলতে পারলে সমস্যার কিছু হবে না। আমার এ রকম আরও একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। ২০১২-র ফেডকাপে ডেম্পোর বিরুদ্ধে কার্ড সমস্যায় ওপারা ও গুরবিন্দর খেলতে পারেনি। আমি আর রাজু সে দিন ভাল ফুটবল খেলেছিলাম। তাই খেলা শুরুর আগেই আশাহত হতে চাই না। নিজেদেরকে বিশ্বাস করলে সব বাধাবিপত্তি জয় করা যাবে।

লাজং এফসিকে প্রথমপর্বে পাঁচ গোলে হারিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। এ বারের লড়াইটা কতটা কঠিন?

অর্ণব: আগের তুলনায় ওরা অনেক বেশি শক্তিশালী। নতুন বিদেশি অন্তর্ভুক্তি ওদের দলটাকেই বদলে দিয়েছে। আমাদের জন্য এটা একটা কঠিন ম্যাচ হতে চলেছে। তবে আমরাও শেষ মুহূর্ত অবধি লড়াই করব।

কাল মাঠে খেলা শুরুর আগে সতীর্থদের কী বলবেন?

অর্ণব: বলব, শেষ নব্বই মিনিট নিজেদেরকে উজাড় করে দাও। তোমরা ভারতের অন্যতম সেরা ফুটবলার, সেটা প্রমাণ করার সময় এসেছে। চল সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিই। আমাদের লড়াই কোটি কোটি লালহলুদপ্রেমী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।

তথ্য ও ছবি: ইস্টবেঙ্গল