বিশাখাপত্তনমে রাসায়নিক গ্যাস লিক, ১ শিশু-সহ মৃত ১১, অসুস্থ হাজারেরও বেশি

বিশাখাপত্তনমে রাসায়নিক গ্যাস লিকবিশাখাপত্তনমে রাসায়নিক গ্যাস লিক

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: বিশাখাপত্তনমে  হয়ে এক শিশু-সহ অন্তত ১১ জন মারা গিয়েছেন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন হাজারেরও বেশি। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনের অবস্থা গুরুতর ভাবে আশঙ্কাজনক। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের একটি রাসায়নিক কারখানা থেকে রাতভর গ্যাস লিক হওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা এই ঘটনাকে ‘রাসায়নিক বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

ঘটনার সূত্রপাত বুধবার মধ্যরাতে। দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে বলে বিশাখাপত্তনমের ‘এলজি পলিমার্স ফেসিলিটি’ গত প্রায় ৪০ দিন ধরে বন্ধ ছিল। কিন্তু মধ্যরাতে কোনও রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই সেই কারখানা খোলা হয় বলে অভিযোগ। তার পরেই কারখানার বড় বড় ট্যাঙ্ক থেকে বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস বেরোতে শুরু করে। দিনের আলো ফুটতেই দেখা যায়, লোকজন কেউ রাস্তায়, কেউ বা বাড়ির বাইরে চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে প্রশাসনের তরফে অন্তত ৩টি গ্রাম খালি করে দেওয়া হয়। ওই সব এলাকার সব বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শুরু হয় খোঁজখবর।


করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিশাখাপত্তনমের প্রচুর ভিডিও দেখা গিয়েছে সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে। সেই সব ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, রাস্তার উপর পড়ে কাতরাচ্ছেন পুরুষ-মহিলা এমনকি শিশুরাও। মুখে মাস্ক পরা অনেকেই ওই সব অসুস্থদের তুলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। অনেক জায়গাতে অ্যাম্বুল্যান্সের অপেক্ষা করতেও দেখা গিয়েছে মানুষজনকে।

বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ শহরতলির কাছে গোপালপত্তনম এলাকায় রয়েছে এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের ওই রাসায়নিক কারখানা। মূলত পলিয়েস্টার পলিথিন তৈরি হত ওই কারখানায়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, সেই কাজের জন্য স্টাইরিন গ্যাসের ব্যবহার মূলত প্লাস্টিক তৈরির কারখানায়। স্টাইরিন তরল অবস্থায় সুগন্ধযুক্ত ও বর্ণহীন। শক্ত ও স্বচ্ছ পলিস্টাইরিন বা প্লাস্টিক, রেজিন ইত্যাদি তৈরিতে প্রয়োজন হয় এই স্টাইরিন। মার্কিন এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ)-র মতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই গ্যাসের সংস্পর্শে এলে গলা ও চোখ জ্বালা করতে থাকে। এছাড়া শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ ওই কারখানা থেকে গ্যাস লিক শুরু হয়। সে সময় কারখানায় ছিলেন শুধু নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই গ্যাস লিক হওয়ায় অচৈতন্য হয়ে পড়েন তাঁরা। ফলে তখন খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর পর গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে লোকালয়ে। সাড়ে ৪টের দিকে আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে। যার জেরে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। খবর যায় পুলিশে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারের কাজে নামে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

গ্যাস লিকের জেরে পরিস্থিতি যাদের সঙ্কটজনক, এ রকম ৮০ জনকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেটরে। এখনও অবধি ১১ জনের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হলেও, সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি অসুস্থদের দেখতে কিং জর্জ হাসাপাতালে যান।। তিনি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন বলেও জানিয়েছেন। গ্যাস লিকের খবরে বিস্মিত কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী কংগ্রেস কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন সেখানকার অসুস্থ মানুষজনকে সহযোগিতার জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বিশাখাপত্তনমের মানুষের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টির দিকে তিনি নজর রাখছেন বলেও জানিয়েছেন।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)