ত্রিপুরায় দিনভর নাটক শেষে জামিন দেবাংশুদের, ধরনা অভিষেকের

ত্রিপুরায় দিনভর নাটক

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ত্রিপুরায় দিনভর নাটক চলল এদিন। শনিবার দলীয়কর্মীদের উপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে রবিবারই ত্রিপুরায় উড়ে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন কুনাল ঘোষ ও দোলা সেন। শনিবারই গ্রেফতার করা হয়েছিল দেবাংশু, সুদীপ জয়া-সহ ১৪ জনকে। যাঁরা ত্রিপুরায় তৃণমূলের দায়িত্বে রয়েছেন। মাথা ফাঁটে সুদীপের। তার পরই কলকাতায় বসে রীতিমতো পুরো ঘটনার নিন্দা করেন অভিষেক। রবিবার সেখানে পৌঁছে চলে যান খোয়াইয়ে। যেখানে তাঁর দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেখানে পৌঁছে পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে শুরু হয় বাদানুবাদ। উপস্থিত ছিলেন কুনাল ঘোষ, ব্রাত্য বসু ও দোলা সেন। সেখানেই শুরু হয় অভিষেকের ধরনা।

অভিষেক পুলিশের কাছে তাঁর দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগপত্র দেখতে চান, যার প্রেক্ষিতে দেবাংশু, সুদীপদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেখানে তাঁকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি অশোকস্তম্ভকে নিয়ে কথা বলছেন, পদ্মফুল নয়।’’ পরবর্তীতে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ ষড়যন্ত্র করে যুবনেতাদের গ্রেফতার করেছে।’’ খোয়াই থানায় দাঁড়িয়েই তিনি ত্রিপুরা বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘লিখে রাখুন ১৭ মাস পর আর বিপ্লব দেবের সরকার থাকবে না। ত্রিপুরায় গনতন্ত্র ফিরবে।’’

এদিন লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়েই ত্রিপুরা পৌঁছেছিলেন তিনি। এবং যতক্ষণ না তাঁর দলের ১৪ জন নেতাকে ছাড়া হয়েছে ততক্ষণ তিনি থানাতেই বসেছিলেন। তাঁর সামনে দিয়েই তাঁর দলের নেতাদের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের সঙ্গে আদালতে যান কুনাল ও দোলা। সেখানে অভিযোগ তৃণমূলের গাড়ি পর পর ভাঙচুর করা হয়। তৃণমূলের আইজীবীর গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। আদালত চত্তরে হাজির হয়েছিল দুই দলের প্রচুর কর্মী, সমর্থক। কিছুদিন আগে ত্রিপুরায় অভিষেকের গাড়ির উপরও চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তখনও তিনি বলেছিলেন, এভাবে আটকানো যাবে না। এদিনও সেই বার্তাই দিয়ে এলেন। তবে আশঙ্কা আবারও হামলা হতে পারে তৃণমূলের উপর সেখানে।

পৌঁনে ৫টা নাগাদ জামিন পান তৃণমূলের নেতারা। ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয় তাঁদের। অভিষেক জানিয়েছিলেন, যতক্ষণ না তাঁর দলের নেতারা ছাড়া পাবেন ততক্ষণ তিনি খোয়াই থানাতেই বসে থাকবেন। তাই ছিলেন। এর পর তিনি ত্রিপুরা সরকারকে তুলোধনা করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘ওরা যদি ভেবে থাকে কয়েকটা গাড়ি ভেঙে তৃণমূলকে থামিয়ে দেবে তাহলে ওরা মর্খের স্বর্গে বাস করছে। তৃণমূল যত প্রয়োজন আন্দোলন করবে। কিন্তু বিজেপিকে উপড়ে ফেলবে।’’ এদিনই আহত তিন নেতাকে নিয়ে কলকাতায় ফিরেছেন অভিষেক। করানো হবে চিকিৎসা।

এদিকে অভিযোগ, জামিন ঘোষণা হয়ে গেলেও তৃণমূল নেতাদের ছাড়ার প্রক্রিয়ায় অনেকটা সময় লাগিয়ে ফেলে। কুনাল ঘোষ অভিযোগ করেছেন, এটা ইচ্ছাকৃত। তাঁর আশঙ্কা, আদালত থেকে ফেরার পথে ফের বিজেপির হামলার মুখে পড়তে পারেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘খবর পাচ্ছি রাস্তায় বিজেপি লোক জড়ো করছে।’’ এদিন খোয়াই থানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে দেখা যায় কলকাতা থেকে যাওয়া সব নেতাদের। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো চলে বচসা। তবে যা পরিস্থিতি তাতে এখনও ত্রিপুরা শান্ত হওয়ার নয়। এর প্রতিবাদের সোমবার দিল্লির রাস্তায় নামবেন সাংসদরা।

প্রসঙ্গত, শনিবার ওই এলাকায় তৃণমূলের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই যাচ্ছিলেন দেবাংশু, সুদীপরা। রাস্তায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। সেখানেই ধরনায় বসেন তাঁরা। পুলিশ হাজির হলে শুরু হয় অশান্তি। তার মধ্যেই ইটের আঘাতে মাথা ফাঁটে সুদীপের। গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয় তাঁকে। যে অনুষ্ঠানে তাঁরা যাচ্ছিলেন সেখানে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার অনুষ্ঠান ছিল। এর মধ্যেই সেদিন ৩০০ জন যোগ দেন দলে। বাংলায় বিপুল ভোটে জিতে তৃতীয়বার সরকার গড়ার পর থেকেই দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরাকেই পাখির চোখ করেছে তৃণমূল। সেই রাস্তা মসৃণ করতে ঘনঘন সে রাজ্যে যাতায়াত করছেন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা। বার বার তাঁদের বিভিন্ন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এদিনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে এসেছেন, তাঁদের এভাবে আটকানো যাবে না।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)