নিজে ফোন করে চাকরির প্রস্তাব রতন টাটার, বাক্‌রুদ্ধ মুম্বইয়ের তরুণ

ফোন করে চাকরির প্রস্তাব রতন টাটারফোন করে চাকরির প্রস্তাব রতন টাটার

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ফোন করে চাকরির প্রস্তাব রতন টাটার, বললেন— অফিসে আমার অনেক কাজ শেষ করা বাকি। তুমি কি আমার সহকারী হতে চাও? ফোনটা পেয়ে কিছু ক্ষণ চুপ করে ছিলেন মুম্বইয়ের তরুণ শান্তনু নায়ডু। জোরে শ্বাস নিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ তার পর তিনি রতন টাটার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। গত ১৮ মাস ধরে শান্তনু তাঁর সহকারী হিসেবেই কাজ করছেন।

শান্তনুর এই জীবননামা সম্প্রতি তাঁর বয়ানেই প্রকাশিত হয়েছে ফেসবুকে। ‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামে একটি পেজে প্রকাশ পেয়েছে শান্তনুর এই অবিশ্বাস্য ‘কাহিনি’। তাঁর বয়ানেই লেখা সেই কাহিনি পড়লে মনে হয়, এমনটাও হয়!

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন

‘‘আমি ২০১৪ সালে স্নাতক হই। তার পর টাটা গ্রুপে কাজে যোগ দিই। সেই সন্ধেটার আগে পর্যন্ত জীবনটা বেশ মসৃণ ছিল। সে দিন কাজ সেরে বাড়ি ফিরছি। হঠাৎ দেখলাম রাস্তার মাঝখানে পড়ে রয়েছে একটি মৃত কুকুরের দেহ। কুকুর আমি বেশ পছন্দ করি। এর আগে বেশ কিছু কুকুরকে আমি আহত অবস্থায় উদ্ধারও করেছি। তো সে দিন ওই কুকুরটাকে মৃত অবস্থায় দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল। এর মধ্যেই আরও একটি গাড়ি ওই মৃত কুকুরের দেহের উপর দিয়ে চলে গেল। আমি হতভম্ভ হয়ে গেলাম।

‘‘এই ঘটনার পর আমার ভেতর তেকে কেমন একটা বোধ তৈরি হল, আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। কয়েক জন বন্ধুকে ফোন করলাম। একটা কলার ডিজাইনও করলাম, যার উপর রিফ্লেক্টর লাগানো ছিল। যাতে গাড়িচালকেরা দূর থেকে কুকুরের গলায় লাগানো ওই কলার দেখতে পান। পরের দিন, ওই রাস্তার বিভিন্ন জায়গা আমরা ঘুরে ঘুরে নেড়ি কুকুরদের গলায় ওই কলার লাগাই। তখনও জানতাম না, এটা কাজ করবে! পর দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটা মেসেজ দেখলাম, গত রাতে ওই কলারের জন্য একটা কুকুর বেঁচে গিয়েছে দুর্ঘটনার হাত থেকে।

Ratan Tata

শান্তনু ও রতন টাটা

‘‘খুব দ্রুত এই কলারের ঘটনার কথা লোকমুখে চাউর হয়ে যায়। আমাদের এই কাজের কথা টাটা গ্রুপের নিউজ লেটারেও প্রকাশ পেয়েছে। লোকজন আমাদের কলার কিনতে চাইছিলেন। কিন্তু সে সব বেশি পরিমাণে বানানোর কোনও টাকা আমাদের ছিল না। সেই সময়, আমার বাবা আমাকে রতন টাটাকে সবটা জানিয়ে একটা চিঠি লিখতে বলেছিলেন। রতন টাটা কুকুর ভালবাসেন ভীষণ। আমি প্রথমে একটি সংশয়ে ছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম, কেন নয়! এর পর রতন টাটাকে একটা চিঠি লিখে সবটা জানাই।

‘‘চিঠি লেখার বিষটি প্ছিরায় ভুলতে বসেছি, এমন একটা সময়ে প্রায় দু’মাস পর আমার জীবন বদলে গেল। আমি রতন টাটার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাই। সেই চিঠিতে লেখা রয়েছে, আমাদের কাজ তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। প্য়রথমে আমার এটা বিশ্বাস হয়নি।

Ratan Tata

শান্তনুর বন্ধুরা…

‘‘কয়েক দিন পরে আমি তাঁর মুম্বইয়ের অফিসে গিয়ে দেখা করি। তিনি আমাকে বলেন, ‘‘তোমার কাজ আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছে।’’ শুনে তো আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে গেল। এর পর টাটা আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যান, সেখানে তাঁর কুকুর থাকে। এ ভাবেই রতন টাটার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। তিনি আমাদের উদ্যোগে টাকাও দেন!

‘‘এর পর আমি স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য চাকরি ছাড়তে বাধ্য হই। কিন্তু আমি তাঁকে কথা দিয়েছিলাম, ফিরে এসে টাটা ট্রাস্টের জন্য সারা জীবন কাজ করব। তিনি খুশি মনেই আমার সে অনুরোধ শুনেছিলেন।

‘‘ভারতে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে রতন টাটা আমাকে ফোন করেন। তিনি বলেন, ‘‘অফিসে আমার অনেক কাজ শেষ করা বাকি। তুমি কি আমার সহকারী হতে চাও?’’  আমার অফিসে অনেক কাজ করার আছে । তুমি কি আমার সহকারী হতে চাও? বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। কয়েক সেকেন্ড পরে বললাম, ‘‘হ্যাঁ!’’

‘‘১৮ মাস হয়ে গেল আমি তার জন্য কাজ করছি। এখনও আমার বিশ্বাস হয় না। মাঝে মাঝে নিজেকে চিমটি দিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে, এটা স্বপ্ন নয় তো! আমার সমবয়সীদের কাছে সঠিক বন্ধু, ঠিকঠাক পরামর্শদাতা এবং পারফেক্ট বস খুঁজে পাওয়াটা ভীষণ কঠিন কাজ। কিন্তু আমি এই সবই এক জনের মধ্যেই পেয়েছি, তিনি এক অতিমানবীয় মানুষ রতন টাটা। মানুষ আদর করে তাকে বস বলে, কিন্তু আমি তাকে ‘মিলেনিয়াল ডাম্বলেডোর’ বলতে পছন্দ করি, আমার মনে হয় ওই নামটাই ওঁকে সবচেয়ে ভাল মানায়!’’

শান্তনুর কাহিনি বলা সেই পোস্ট


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)