আটক ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে উত্তাল দেশ

আটক ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহআটক ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আটক ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, মুম্বই, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গের মতো অন্তত ১০টি রাজ্যে নয়া এই আইনের বিরুদ্ধে মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন অন্তত হাজার জন।

কলকাতায় এ দিন রানি রাসমণি রোডে তৃণমূলের প্রতিবাদ সভা ছিল। সেখানে তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গণভোটের ডাক দেন। তাঁর দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জকে দিয়ে একটা গণভোট করে দেখা হোক, দেশের কত মানুষ এই আইন চায়, আর কত মানুষ চায় না। তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিক কেন্দ্রীয় সরকার।

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন

এ দিন দুপুরে বিশিষ্ট জনদেরও একটি প্রতিবাদ মিছিল বেরোয় মৌলালীর রামলীলা ময়দান থেকে। সেই মিছিলে ছিলেন অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনদের মতো ব্যক্তিত্ব। ওই মিছিল থেকে অপর্ণা জানান, সারা দেশের মানুষ এই আইন মানছে না। ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষকে আঠার মতো জুড়ে রেখেছে। যত দিন না এই আইন বাতিল হবে, তত দিন এই আন্দোলন চলবে।

কংগ্রেস এবং বামেরা এ দিন আলাদা ভাবে মিছিল করে কলকাতায়। বামেদের মিছিল রামলীলা ময়দান থেকে বেরিয়ে ধর্মতলায় পৌঁছয়। আর কংগ্রেস ধর্মতলাতেই মিছিল বার করে।

প্রতিবাদ মিছিলের জন্য দিল্লিতে প্রথমে অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। পরে এ দিন সকালে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। জারি করা হয় ১৪৪ ধারাও। ওই ধারা জারি থাকলে চার জনের বেশি মানুষ একসঙ্গে রাস্তায় বেরোলে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। দিল্লিতে কয়েকশো প্রতিবাদীকে আটক করা হয়।

বেঙ্গালুরুতে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহের সঙ্গে আটক করা হয় একশোরও বেশি প্রতিবাদীকে। রামচন্দ্র গুহ সেই সময় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। টিভিতে দেখা যায়, পুলিশ তাকে সাক্ষাৎকারের মাঝখান থেকেই টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

দিল্লি-হরিয়ানা সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদীরা যাতে বাসে চেপে দিল্লিতে ঢুকতে না পারে, সে কারণেই আটকে দেওয়া হয় সীমানা। লালকেল্লার কাছেই এ দিন প্রতিবাদীদের জমায়েত হয়।
উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে দুটো বাস জ্বালিয়ে দেন প্রতিবাদীরা। লখনউ, মেঙ্গালুরু এবং আমদাবাদে প্রতিবাদীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ হয়।

দেশের ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে এ দিন প্রতিবাদে পথে নামে মানুষ। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে গত আট দিনে যে পরিমাণ বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তেমনটা আর কখনও হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী এনে মোদী সরকার সেখানে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের আগে এ দেশে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সংস্থান করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ সত্ত্বাকে আঘাত করেই ধর্মের ভিতিত্তে ওই সংশোধনী আনা হয়েছে।

চলতি সপ্তাহেই দু’বার এমন প্রতিবাদ দেখেছে দিল্লি। এ দিন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে লালকেল্লা যাওয়ার পথে আটক করা হয় স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রধান যোগেন্দ্র যাদব-সহ প্রায় হাজার জনকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০টি মেট্রো স্টেশন। পরে যদিও তার ১৮টিকে খুলে দেওয়া হয়।

মোবাইল পরিষেবা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় দিল্লির একাংশে। মান্ডি হাউস, সীলামপুর, জাফরবাদ, মুস্তাফাবাদ, জামিয়া নগর, শাহীন বাগ এবং ভাবনার সঙ্গে আইটিওতেও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইটিও-তে একাধিক সংবাদপত্রের অফিস রয়েছে। এয়ারটেল টুইট করে জানায়, সরকারি নির্দেশ মেনেই পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। যদিও পরে সেই টুইট তারা মুছে দেয়।

ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, নীলোৎপল বসু, বৃন্দা কারাট, অজয় মাকেন, সন্দীপ দীক্ষিত, যোগেন্দ্র যাগব, উমর খলিদের সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয় দিল্লির মান্ডি হাউস এবং লালকেল্লার কাছ থেকে। ওই দুই জায়গাতেই এ দিন সকাল থেকে প্রতিবাদীরা জড়ো হয়েছিলেন।

মুম্বইয়েও এ দিন প্রতিবাদীরা জড়ো হয়েছিলেন অগস্ট ক্রান্তি ময়দানে। সেখানে হাজির হয়েছিলেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। চেন্নাইতেও প্রতিবাদ সভা হয়।

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)