সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, রাজ্যের তকমা হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদসংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার মুখে। ওই অনুচ্ছেদের কারণেই বিশেষ মর্যাদার অধিকার পেয়ে এসেছে জম্মু-কাশ্মীর। সোমবার রাজ্যসভায় সেই অনুচ্ছেদের প্রথম উপধারা বাদে বাকি সবটাই বাতিলের বিল পাশ হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যের তকমা হারাতে বসেছে জম্মু-কাশ্মীর। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পাশাপাশি ওই রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ— দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই বিলটিও এ দিন রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। ফলে আগামিকাল মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করার পর বিল দু’টি সেখানে পাশ হলেই রাষ্ট্রপতি নির্দেশিকা জারি করেই এই দু’টি নির্দেশের কথা জারি করবেন।

সোমবার সকালে রাজ্যসভায় প্রথম বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ-এর প্রথম উপধারা বাদে বাকিটা বিলোপের কথা বলেন। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার কথাও শোনান। এর পরেই বিরোধীরা ফেটে পড়েন বিক্ষোভে। যদিও অমিতের পাশে দাঁড়ান বিজেডি, টিআরএস, বিএসপির মতো দলের সাংসদরা। কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, আরজেডি-সহ বেশ কিছু দ‌ল তাঁর বিরোধিতা করে‌ন। যদিও দিনের শেষে ওই বিল পাশ হয়ে যায়। একই সঙ্গে অমিতের তোলা জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির বিলও ১২৫-৬১ ভোটে পাশ হয় রাজ্যসভায়।

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন…

কংগ্রেস গোটা বিষয়টারই বিরোধিতা করেছে। এ দিন কংগ্রেস নেতা তথা জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ জানান, জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের তিনটি আলাদা অংশ। মুসলিম এবং বৌদ্ধ ধর্মের মানুষদের নিয়ে লাদাখ, মুসলমান প্রভাবিত হিন্দু-শিখদের নিয়ে কাশ্মীর এবং ৬০ শতাংশ হিন্দু ও ৪০ শতাংশ মুসলমান নিয়ে জম্মু। এই তিনটি অংশের তিন ধরনের রাজনীতি, তিন ধরনের সংস্কৃতি এবং প্রকৃতিও তিন রকমের। এই তিনটি ধরনকে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছিল সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ, এমনটাই মত গুলামের। তিনি বলেন, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে বিজেপি সরকার সেই সুতোটাই ছিঁড়ে দিল।’’ একই সঙ্গে গুলামের মন্তব্য, ‘‘ভারতের মাথা ছিল জম্মু-কাশ্মীর। আজ সেই মাথাটাই কেটে দিল বিজেপি সরকার।’’

অমিত শাহের আনা বিল অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর ‌নামে যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হবে, সেখানে বিধানসভা থাকবে। বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় মোট ১১১টি আসন। তার মধ্যে লাদাখ অঞ্চলের ৪টি। এ বার লাদাখ আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে গেলে মোট ১০৭ বিধানসভা আসনের বিধানসভা হবে জম্মু-কাশ্মীর। আর লাদাখে কোনও বিধানসভা থাকছে না। দু’টি জায়গারই সাংবিধানিক প্রধান হবে লেফটেন্যান্ট গভর্নর। গিলামকে এ দিন দুঃখ করে বলতে শোনা যায়, ‘‘রাজা থেকে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উপত্যকায় এ বার উপ-রাজ্যপালের শাসন হবে! এটা লজ্জার।’’ তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে কাশ্মীরের একটি রাজনৈতিক দল। প্রাক্তন আইপিএস শাহ ফয়জলের দল ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে, তারা এই বিল পাশের পদ্ধতি এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবে।

বেশ কয়েক দিন ধরেই উপত্যকার পরিস্থিতি ঘোরালে হয়ে উঠছিল। কিন্তু তার কোনও কারণ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। প্রথমে, কয়েক ধাপে উপত্যকায় অতিরিক্ত আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা। তার পরে অমরনাথ যাত্রা বাতিল করে পূণ্যার্থী এবং পর্যটকদের ফিরিয়ে দেওয়া। এর পর রবিবার ফের অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার থানাগুলির দখল নেওয়া। একইসঙ্গে পিডিএফ নেত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। তখন থেকেই বিভিন্ন মহলে জল্পনা তৈরি হচ্ছিল, উপত্যকায় বড়সড় কোনও কিছু হতে চলেছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যসভায় আসেন অমিত। তার পরেই জানা যায়, বিজেপি ঠিক কী করতে আগে থেকে উপত্যকায় এমন ঘুঁটি সাজিয়েছিল।

এ দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাকে। উপত্যকায় স্কুল-কলেজ বন্ধ। ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রঞ্জি টিমকে। রবিবার রাত থেকে মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। তার মধ্যেই কোনও বিশেষ উপায়ে টুইট করেন মেহবুবা এবং ওমর। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তের ঘোরতর আপত্তি করেন তাঁরা।

তবে গোটা দেশ যখন বিজেপির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমর্থন-অসমর্থনের মন্তব্যে সরব, তখন গোটা কাশ্মীরের কোনও বক্তব্য প্রকাশ্যে এল না। কারণ, সেখানে তো বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই ব‌ন্ধ।

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)