রাফাল বিতর্ক: মনোহর পর্রীকরের শোওয়ার ঘরে নথি, অডিও টেপ ফাঁস কংগ্রেসের

রাফাল বিতর্করাফাল বিতর্ক

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: রাফাল বিতর্ক নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল লোকসভা। বুধবার ফরাসি ওই যুদ্ধ বিমান কেনা নিয়ে ধুন্ধুমার বেধে যায় সংসদে।

রাফাল বিতর্ক নিয়ে এ দিন লোকসভায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সকালে কংগ্রেস নেতৃত্ব একটি অডিও টেপ ফাঁস করেন। সেই টেপের যা বয়ান, তা থেকে জানা যাচ্ছে, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের শোওয়ার ঘরে রাফাল চুক্তি সংক্রান্ত নথি লুকিয়ে রাখা আছে।

কংগ্রেসের দাবি ওই টেপে যাঁর গলা শোনা যাচ্ছে, তিনি গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানে। তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয় এক ব্যক্তির ফোনালাপ ওই টেপে রয়েছে। সেখানে রানে ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তিকে বলছেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সে দিন খুব অশান্তি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী একটা সময় কথা প্রসঙ্গে বলেছেন, রাফাল নিয়ে সব তথ্য-নথি তাঁর বেডরুমে লুকানো রয়েছে। ফোনের অন্য প্রান্তে কে ছিলেন, তা যদিও কংগ্রেস নেতারা জানাননি। এ কথা শুনেই সেই দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, কী বলছেন! রানে তখন তাঁকে বলেন, সেটা জানাতেই আপনাকে ফোন করেছি। প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার অন্য কোনও সদস্যকে ফোন করে খোঁজ নিন।

রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি চেয়ে চাপ বাড়াচ্ছে কংগ্রেস

এই আবহেই লোকসভায় রাফাল বিতর্ক শুরু হয়। প্রয়োজনে ওই টেপটি লোকসভায় শোনানো হোক, এই দাবিও তোলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কিন্তু, স্পিকার সুমিত্রা মহাজন স্পষ্ট জানিয়ে দেন ওই টেপের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারলেই একমাত্র তা লোকসভায় শোনানো যাবে। কিন্তু, রাহুল বা কোনও কংগ্রেস নেতা সেই দায়িত্ব নেননি স্বাভাবিক ভাবেই।

এর পরেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কংগ্রেস নেতৃত্বকে আক্রমণ করে জানিয়ে দেন, ওই টেপ জাল। ওর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। পাশাপাশি তিনি রাফাল কেন কোনও যুদ্ধবিমান সম্পর্কেই রাহুল গান্ধীর কোনও জ্ঞান নেই বলে মন্তব্য করেন। বলে‌ন, উনি যা বলছেন নার্সারির বাচ্চারাও বলবে না। পরে কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল জানিয়ে দেন, তিনি পাইলট। লাইসেন্সটা যদিও রিনিউ করানো হয়নি

রাফাল বিতর্ক নিয়ে রাহুল এ দিন প্রশ্ন তোলেন, দেশের বায়ু সেনা কর্তারা ১২৬ টি রাফাল কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইউপিএ জমানায় সেটাই ঠিক হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন তা কমিয়ে ৩৬টি রাফাল কেনার সিদ্ধান্ত নিলেন? কেন সে ব্যাপারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতে কোনও আলোচনা হল না? কেন এক তরফা সিদ্ধান্ত নিলেন নরেন্দ্র মোদী?

এ দিন রাফাল বিতর্ক নিয়ে সরকার পক্ষের তরফে অনেক কথা বলেন জেটলি। এত দিন ধরে কংগ্রেস যা যা প্রশ্ন তুলেছে তার জবাব দেওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি। জেটলি লোকসবায় জানান, গোড়ায় ঠিক ছিল ১২৬টি রাফাল কেনা হবে। কিন্তু এতগুলো যুদ্ধ বিমান হাতে পেতে অনেক সময় লেগে যেত। সেই কারণেই ৩৬টি রাফাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদী সরকার।

রাহুল এ দিন প্রশ্ন তোলেন, ইউপিএ জমানায় এক একটি যুদ্ধ বিমানের দাম ছিল ৫২৬ কোটি টাকা। তা বেড়ে মোদী জমানায় ১৬শো কোটি টাকা হল কী করে? জেটলি তাঁর জবাবে বলেন, ৫২৬ কোটি টাকা দাম ছিল শুধু বিমানের। তাতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম লাগানোর পর দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কত কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এক একটি বিমানে লাগানো হবে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই প্রকাশ করতে চাইছে না সরকার। কারণ তা প্রকাশ করলে পাকিস্তান বা চিনের মতো দেশ বুঝে যাবে যে কী কী প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিমানে লাগানো হয়েছে।

রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি চেয়ে চাপ বাড়াচ্ছে কংগ্রেস