সক্রিয় রাজনীতিতে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, ভোটে দাঁড়াতে পারেন মা সনিয়ার রায়বরেলী থেকে

Priyanka Gandhi Liveপ্রিয়ঙ্কা গান্ধী

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সক্রিয় রাজনীতিতে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী চলে এলেন। বুধবার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে প্রিয়ঙ্কা উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে দলের কাজকর্ম দেখবেন।

প্রিয়ঙ্কার এই এক ঢিলে রাহুল অনেকগুলো পাখি একসঙ্গে মারতে চাইলেন বলে মনে করছেন রাজনীতির বিশারদরা। এক দিকে যেমন লোকসভা ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীর জোটকে কিছুটা হলেও টেক্কা দিতে চাইলেন, তেমনই তিনি বিজেপির গলাতেও কাঁটার মতো বিঁধিয়ে জোরদার এক প্রতিপক্ষকে।

আবার একইসঙ্গে রাহুল প্রিয়ঙ্কাকে দলের এমন একটা পদে এনে, দায়িত্ব দিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের মনোবলও বাড়িয়ে তুললেন। যে কর্মীরা বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রিয়ঙ্কাকে চাইছিলেন। ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার অনেক ক্ষেত্রেই বেশ মিল থাকার ফলে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও একটা উন্মাদনার হাওয়া বইয়ে দিয়েছেন রাহুল। লোকসভা ভোটের আগে আস্তিন থেকে তুরুপের তাসটি এমন হঠাৎ করে বার করে দেওয়ায় চমকে গিয়েছে সব পক্ষই। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকেই এ দিন রাহুলের এই সিদ্ধান্তকে মাস্টার স্ট্রোক বলে মনে করছেন।

উত্তরপ্রদেশের যে পূর্বাঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রিয়ঙ্কা, সেই এলাকাতেই পড়ে বারাণসী। এই বারাণসী লোকসভা কেন্দ্রটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ফলে সেখানকার দায়িত্ব পাওয়ায় নরেন্দ্র মোদীকে বেশ বেগ দিতে পারেন গান্ধী পরিবারের এই কন্যা। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস কর্মীদের একটা বড় অংশ এমনটাই মনে করছেন। প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে। তিনি সম্প্রতি বিজেপিকে উৎখাত করছেন তাঁর রাজ্য থেকে। রাহুল এই দু’জনকে দায়িত্ব দিয়ে জানিয়েছেন, ওঁদের দু’মাসের জন্য পাঠানো হচ্ছে না উত্তরপ্রদেশে। ওঁরা ওখানে ভাল ফল করে দেখাবে‌ন।

কয়েক দিন আগে রাহুল দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে উড়ে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্ক। সেখানে তখন প্রিয়ঙ্কা ছিলেন। আমেরিকাতে বসেই কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে বোনকে রাজি করিয়েছে‌ন রাহুল। এমনটাই খবর কংগ্রেস সূত্রে। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও কংগ্রেসের বিভিন্ন বিষয়ে প্রিয়ঙ্কার উপস্থিতি কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিজেপি নেতা শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে দেখা করলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া

সম্প্রতি তিন রাজ্যে নির্বাচন শেষে ফল প্রকাশের পর সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু, কখনই তিনি সক্রিয় রাজনীতির প্রকাশ্য দরবারে আসতে চাননি। মা সনিয়া গান্ধীর কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলী বা দাদা রাহুলের কেন্দ্র অমেঠীতে এর আগে তাঁকে প্রচারে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু, ওই পর্যন্তই। ১০ আকবর রোডের বাইরে তেমন ভাবে এত দিন দেখা যায়নি প্রিয়ঙ্কাকে।

বুধবার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই রাজধানীর অলিতেগলিতে একটা জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। মায়ের রায়বরেলী থেকে লোকসভা ভোটে দাঁনাবেন প্রিয়ঙ্কা নিজে। এই জল্পনা নিয়ে যদিও কংগ্রেস সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, প্রিয়ঙ্কা রায়বরেলী থেকে দাঁড়াতেই পারেন। কারণ, সনিয়া খুবই অসুস্থ। মেয়ের হাতে নিজের কেন্দ্রের ভার তুলে দিয়ে তিনি রাজনৈতিক বাণপ্রস্থতে যেতেই পারেন।

অনেকে আবার এক ধাপ এগিয়ে বলতে শুরু করেছেন, প্রিয়ঙ্কাকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটে ঝাঁপাতে পারে কংগ্রেস। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটা বড় আগ বাড়িয়ে বলা হয়ে যাবে। তা ছাড়া বিজেপি বিরোধী দলগুলির যে জোট নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে কথাবার্তা চলছে, তাতে কংগ্রেসের ভূমিকা রয়েছে। এমন একটা বার্তা বাজারে ছড়িয়ে পড়লে সেই জোট ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লাগবে। সেটাও চাইছে না কংগ্রেস।

কিন্তু একটা অংশ আবার বলছে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই তো অখিলেশ-মায়াবতী জোট করেছেন উত্তরপ্রদেশে। কংগ্রেসের জন্য মাত্র দুটো আসন ছেড়েছে তারা। কংগ্রেসও ওই রাজ্যে আলাদা ভাবে লড়বে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে। সে ভাবেই গোটা দেশ জুড়েই যদি কংগ্রেস প্রিয়ঙ্ককে সামনে রেখে ভোট লড়ে, তাতে আখেরে কংগ্রেসেরই লাভ হবে। কারণ, সে ক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধীর ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রিয়ঙ্কাকে দিয়ে ভোটের ফসল ঘরে তুলতে পারবে কংগ্রেস।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেস একক ভাবে লড়লে বিজেপি বিরোধী ভোটটা ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিজেপিরই সুবিধা হয়ে যাবে। তবে প্রিয়ঙ্কার এই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বিজেপি ভাল ভাবে নেয়নি। তারা বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করলেও তার আড়ালে একটা ভয় লুকিয়ে রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

(দেশের আরও খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন)