জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: অন্তঃস্বত্ত্বা হাতি মারা গেল মুখের ভিতর বাজি ভর্তি আনারস ফেটে। কেরলের মলপ্পুরমের এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। বাজি ভর্তি ওই আনারস হাতিটিকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন রতন টাটা থেকে মানেকা। যদিও কেরল বন দফতরেরই একটি সূত্রের দাবি গ্রামবাসীরা বন্য প্রানের হাত থেকে বাঁচতে এই ধরনের বাজি-ফল ব্যবহার করেন। সেই ফলই কোনওভাবে খেয়ে প্রান গিয়েছে হাতিটির।
কেরলের পলাক্করে পটকা-ভর্তি আনারস খেয়ে মারা গিয়েছে একটি গর্ভবতী হাতি। কেরল বন দফতরের আধিকারিক মোহন কৃষ্ণান হাতিটির ছবিসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার বিবরণ পোস্ট করেছেন। সেখান থেকেই জানা যায়, পলাক্করের একটি গ্রামের বাসিন্দারা ওই হাতিটিকে পটকা ভর্তি আনারস খাইয়ে দিয়েছিলেন। মুখের মধ্যে আনরস চিবানোর সময় বাজি ফেটে হাতিটি গুরুতর যখম হয় এর পর স্বস্তি পেতে একটি জলাশয়ে নেমে যায় তার পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মোহন কৃষ্ণানের এই পোস্ট ভাইরাল হতে সময় নেয়নি, দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। অভিযুক্তদের শাস্তি চেয়ে সরব হন পশুপ্রেমী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই। পরিস্থিতি বুঝে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ঘোষণা করেন দোষীদের খুঁজে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
যদিও কেরল বন দফতরেরই অন্য একটি সূত্রের দাবি বন্য পশুর হাত থেকে নিজেদের এবং মাঠের ফসল বাঁচাতে বন লাগোয়া গ্রামগুলিতে ফল বা মুরগির ভিতরে বাজি ভরে তা টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটাই দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। কারণ বুনো শুয়োর বা নীল গাইয়ের মতো পশু মাঝে মাঝেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসে। ওই টোপে কামর বসালেই বাজি ফেটে যায় মুখের ভিতর ফলে যখম অবস্থায় ফসল বা জনজীবনের কোনও ক্ষতি না করেই ওই পশুটি পালিয়ে যায়।
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)
অনেক ক্ষেত্রে ওই পশুদের যন্ত্রণাদয়ক মৃত্যুও হয়। এক্ষেত্রেও হাতিটি টোপ-আনারস খেয়ে ফেলেছিল আর তাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসের এক আধিকারিক এবি কৈয়ুম বলেন, ‘‘ওই হাতিটিকে কেউ আআনারসটি খাইয়ে দেয়নি, হাতিটিই বরং ওটা পথে কোথাও খুঁজে পেয়েছিল। ভিতরে কী আছে তা না জেনেই সে তা খেয়ে ফেলে এবং মুখের ভিতর বাজি ফেটে শেষে হাতিটি মারা যায়।’’
তিনি আরও জানান, জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে বন্য পশুর হাত থেকে নিজেদের জীবন ও সম্পত্তি বাঁচাতে গ্রামবাসীরা এই সমস্ত টোপ বহু বছর ধরেই ব্যবহার করে আসছেন।
Strict action will be taken against those who are responsible for killing the pregnant elephant. Forest department is probing the case and the culprits will be brought to book: Pinarayi Vijayan, Kerala CM on elephant's death in Malappuram after being fed cracker-stuffed pineapple pic.twitter.com/G6AoUtJNFS
— ANI (@ANI) June 3, 2020
কেরল বন দফতর সূত্রে খবর, এই হাতিটি আসলে পলাক্করের সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের। গত ২৭ মে মলাপ্পুরমের ভেল্লিয়া নদী থেকে বছর ১৫-র গর্ভবতী ওই হাতির দেহ উদ্ধার হয়। নিলাম্বুরের বন আধিকারিক মোহন কৃষ্ণান ফেসবুকে দাবি করেছেন, মুখের ভিতর বাজি ফাটায় হাতিটির শুঁড় এবং চোয়াল অনেকাংশ গুরুতর জখম হয়। স্বস্তি পেতে সে জলে নেমে যায়। র্যাপিড রেসমন্স টিম গিয়ে ওই হাতিটির দেহ উদ্ধার করে।
(দেশের আরও খবরের জন্য এখানে ক্লিক করুন)
ময়না তদন্তের সময় জানা যায় সে অন্তঃস্বত্ত্বা ছিল। যে পশু চিকিৎসক এই ময়না তদন্ত করেন সেই ডেভিড আব্রাহাম বলেন, ‘’২০ বছরের চাকরী জীবনে আমি প্রায় ২৫০টি হাতির ময়না তদন্ত করেছি। এই প্রথম আমি ভ্রূণ হাতিটিকে হাতে নিয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। প্রথমে আমরা বুঝতেই পারিনি হাতিটি গর্ভবতী ছিল। পড়ে ওর হার্ট দেখতে গিয়ে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড দেখতে পাই। তাতেই বুঝতে পারি হাতিটি অন্তঃস্বত্ত্বা ছিল।’’
খাইয়ে দেওয়া হয়েছে না হাতিটি নিজে থেকেই সেই আনারস খেয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছে বন দফতর।