জম্মু-কাশ্মীরে ফের রাষ্ট্রপতি শাসন, বিজেপি-পিডিপি জোট ভাঙতেই সঙ্কটে উপত্যকা

জম্মু-কাশ্মীরে ফের রাষ্ট্রপতি শাসনতখন সুদিন। আলোচনায় ব্যস্ত মোদী ও মেহবুবা। উপত্যকায় ফের রাষ্ট্রপতি শাসন!

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: জম্মু-কাশ্মীরে ফের রাষ্ট্রপতি শাসন হতে চলেছে। পিডিপি-র সঙ্গে বিজেপি সম্পর্ক ছেদের কথা জানাতেই মঙ্গলবার বিকালে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন মেহবুবা মুফতি। কংগ্রেস বা ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) সরকার গঠন করতে চায় না জানার পরেই এ দিন সন্ধ্যায় রাজ্যপাল এন এন ভোরা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে রাষ্ট্রপতি শাসনের আবেদন সংক্রান্ত রিপোর্টটি পাঠিয়ে দিয়েছেন। উপত্যকায় রাষ্ট্রপতি শাস‌ন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞেরা।

মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করেই রাজ্যপাল ভোরার ফোন পেয়েছিলেন মেহবুবা মুফতি। রাজ্যপাল তাঁকে জানান, বিজেপি সরকার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর দেরি করেননি মেহবুবা। সঙ্গে সঙ্গেই রাজভবনে গিয়ে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে আসেন। নয়াদিল্লিতে তত ক্ষণে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব জানিয়ে দিয়েছেন, পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)-র সঙ্গে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাঁরা প্রায় সাড়ে তিন বছরের জোট-সম্পর্ক ভাঙছেন।

কিন্তু কেন? সাংবাদিকদের সামনে তারও খোলাখুলি ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাম মাধব। তাঁর কথায়, ‘‘হিংসা, সন্ত্রাস এবং কট্টরবাদের কবলে পড়ে উপত্যকার নাগরিকদের বেঁচে থাকার যে মৌলিক অধিকার, তা আজ ভয়ানক বিপদগ্রস্ত। এমন একটা পরিস্থিতিতে পিডিপি-র সঙ্গে হাত ধরে চলাটা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।’’ কিন্তু উপত্যকার মানুষ জানেন, বিজেপি-পিডিপি ঐক্য এই সাড়ে তিন বছরে যে কোনও দিন ভেঙে যেতে পারত। আর সে কারণেই এই জোট ভাঙার বিষয়ে মোটেই অবাক হননি পিডিপির প্রবীণ নেতা নঈম আখতার। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুর মধ্যে জোট ভেঙে গেলে কেউ অবাক হবে কি!’’

হিংসা, সন্ত্রাস এবং কট্টরবাদের কবলে পড়ে উপত্যকার নাগরিকদের বেঁচে থাকার যে মৌলিক অধিকার, তা আজ ভয়ানক বিপদগ্রস্ত। এমন একটা পরিস্থিতিতে পিডিপি-র সঙ্গে হাত ধরে চলাটা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।— রাম মাধব 

মেহবুবা মুফতির পূর্বসূরি এনসি নেতা ওমর আবদুল্লার গলাতেও একই সুর। তিনি জানিয়েছেন, এমন একটা বিচ্ছেদ অবসম্ভাবীই ছিল। দু’দলের মধ্যে আদর্শগত কোনও মিল ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অনেক দিন আগেই মেহবুবা মুফতিকে জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বলেছিলাম। উনি তখন শোনেননি। শুনলে আজকের দিনটা দেখতে হত না।’’

পাক সীমান্তে যুদ্ধ বিরতি আর নয়, নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় কাজ করার নির্দেশ দিল কেন্দ্র

তবে, এই সুযোগে তিনি যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়বেন না সে কথাও জানিয়েছেন এনসি-র এই নেতা। তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালের নির্বাচনে মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দেয়নি। কাজেই ২০১৮-তে এসে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সরকার গঠন করা ঠিক নয়।’’ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ জানিয়েছেন, তাঁর দলও সরকার গড়তে আগ্রহী নয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দেয়নি। কাজেই ২০১৮-তে এসে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সরকার গঠন করা ঠিক নয়।— ওমর আবদুল্লা

এ দিন সকালে দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি বিধায়কেরা। সেই বৈঠকেই ঠিক হয়ে যায়, বিজেপি সরকার থেকে বেরিয়ে আসবে। এবং পিডিপি-র সঙ্গে জোট ভাঙবে। সেই মতো মুফতির কাছে বিজেপি-র মন্ত্রীরা ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেন। রাজধানীর একটি সূত্র জানাচ্ছে বিজেপি বিধায়করা অমিতের সঙ্গে দেখা করার আগেই বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে দু’জনের আলোচনার ফলই জোট ভাঙার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এই জোট ভাঙার শুরুটা শুরু বহয়েছিল কাঠুয়া-কাণ্ডের পর। সেখানে ৮ বছরের এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের পর কুন করা হয়। সেই ঘটনায় দোষীদের ছাড়ের জন্য পথে নামতে দেখা যায় রাজ্যের একাধিক বিজেপি নেতাকে। সেই থেকেই পিডিপি-র সঙ্গে বিরোধিতার সূত্রপাত। তবে, আরও কারণ আছে। যেমন, উপত্যকায় শান্তি আলোচনার পক্ষে থাকা পিডিপি-র যুদ্ধবিরতির দাবি মেনে নিতে পারেনি বিজেপি। চাপে পড়ে রমজান মাসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও উপত্যকায় সন্ত্রাস অব্যাহত থেকেছে। প্রাণ গিয়েছে সাংবাদিক শুজাত বুখারের। এ ছাড়া ইদে বাড়ি যাওয়ার সময়ে অপহরণ করে খুন করা হয় ঔরঙ্গজেব নামে সেনাবাহিনীর এক জওয়ানকে।

রমজান মাসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও উপত্যকায় সন্ত্রাস অব্যাহত থেকেছে। প্রাণ গিয়েছে সাংবাদিক শুজাত বুখারের। এ ছাড়া ইদে বাড়ি যাওয়ার সময়ে অপহরণ করে খুন করা হয় ঔরঙ্গজেব নামে সেনাবাহিনীর এক জওয়ানকে।

উপত্যকা জুড়ে প্রচুর সন্ত্রাসের খবর পাওয়া গিয়েছে ওই এক মাসে। এর পরেই ইদ মিটতে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্র। মুফতির সঙ্গে তা নিয়েও বিরোধ শুরু হয়। এ দিন দিল্লিতে রাম মাধব বলেন, ‘‘উপত্যকায় যে মানবাধিকার প্রতি মুহূর্তে লঙ্ঘিত হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ শুজাতের মতো সাংবাদিকের হত্যা এবং সেনা বাহিনীর ওই জওয়ানের নৃশংস মৃত্যু।’’ তাঁর মতে গত তিন বছরে উপত্যকায় সন্ত্রাসের বহর বেড়েছে। গোটাটার দায় পিডিপি-র। তাঁর কথায়, ‘‘তাই জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।’’

জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় মোট ৮৭টি আসন। ২০১৪-য় উপত্যকায় যে নির্বাচন হয়, সেখানে পিডিপি পেয়েছিল ২৮টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ২৫টি। এ ছাড়া ওমর আবদুল্লার দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ১৫টি, কংগ্রেস ১২টি এবং অন্যান্যরা ৭টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি এবং পিডিপি যৌথ ভাবে ম্যাজিক সংখ্যা ৪৪ ছাড়িয়ে ৫৩-য় পৌঁছয়। সেই জোটই এত দিন সরকার চালাচ্ছিল উপত্যকায়। কিন্তু, হঠাৎ সেই জোট ভেঙে যাওয়ায় জম্মু-কাশ্মীর ফের রাষ্ট্রপতি শাসনের মুখ দেখতে চলেছে।