৭২ বছর পর দেখা স্বামী-স্ত্রীর, স্বাধীনতা হয়তো মৃত্যুর পরই

৭২ বছর পরপ্রতীকী চিত্র।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ৭২ বছর পর এ এক অপূর্ব প্রেম কাহিনী উঠে এল বর্ষ শেষের উৎসবের মাঝেই। ২০১৮ শেষ হবে হবে করছে। দুয়ারে ধাক্কা দিচ্ছে নতুন বছর। সবাই ব্যস্ত নিজের প্রিয় মানুষকে নতুন বছরের উপহারের পরিকল্পনায়। কেউ ভাবছে চেনা জগত ছেড়ে কয়েক দিনের জন্য হারিয়ে যেতে। আর তার মধ্যেই যদি জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো মানুষের দেখা হয়ে যায় হঠাৎ। যে দুটো মানুষের একদিন হাত ছুটে গিয়েছিল তাঁদের অজান্তেই। এই নববর্ষে সেটাই হোক দুমরে-মুছরে যাওয়া দুটো মানুষের উপহার। আর সেই অভিনব কাহিনী যেন গোটা দেশের জন্য সান্তার গিফট।

ঠিক কী হয়েছিল?

তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। ১৯৪৬ সাল। স্বাধীনতার লড়াইয়ে তোলপাড় এই ভারতবর্ষ। কেরলের প্রত্যন্ত গ্রাম কাভুম্বায়ি থেকে তখন কৃষক আন্দোলনে পা মিলিয়েছেন এক নারায়ন নাম্বিয়ার। আন্দোলন করতে করতে জেল হয়ে যায় তাঁর। মাত্র ১০ মাসই হয়েছিল বিয়ের। তখন নারায়নের বয়স ১৭ আর সারদার বয়স ১৩। সেই শেষ দেখা।

আজ একজনের বয়স ৯৩ আর একজন ৮৯। দু’জনে বসেছিলেন মুখোমুখি। একদম চুপ করে। কথা সরছিল না সারদার মুখ থেকে। শুধু যখন মুখ খুললেন তখন বললেন, ‘‘আমার কারও ওপর কোনও ক্ষোভ নেই।’’ নারায়নের প্রশ্ন, ‘‘তাহলে তুমি কেন চুপ করে আছ? কেন কিছু বলছ না?’’

টপলেস সেরেনা গাইলেন ‘আই টাচ মাইসেলফ’, ছুঁয়ে দিলেন গোটা বিশ্বকে

চুপ করে থাকেন সারদা। শ্বশুর বাড়িতে তখন তিনি নতুন বউ। কিন্তু শ্বশুর কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাঁকে এবং ছেলেকেগা ঢাকা দিতে হয়। দু’মাস পর তাঁরা ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। নতুন বউকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাপের বাড়িতে। মাঝে মাঝেই পুলিশ হানা দিত সারদার বাড়িয়ে তাঁর শ্বশুর ও স্বামীকে খুঁজতে।

আট বছর জেলে ছিলেন নারায়ানন। ততদিনে দেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছে। কান্নুর, ভিয়ুর ও সালেমের জেল ঘুরে যখন নারায়ানন ছাড়া পেলেন তখন অনেক কিছু বদলে গিয়েছে চারদিকে। ১৯৫০ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাবাকে গুলি করে মারা হয়।

এ যেন গল্প এক নারীর লড়াইয়ের

সারদার পরিবার তাঁকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। ১৯৫৭ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিয়ে করেন নারায়াননও। তার পর দু’জন দু’জনের জীবনে কাটিয়ে দিয়েছে এগুলো বছর। হঠাৎই সারদার ছেলের সঙ্গে আলাপ নারায়াননের পরিবারে একজনের। দু’জন দু’জনের পরিবারের গল্প শুনে বুঝতে পারে। এর পরই সিদ্ধান্ত হয় দু’জনের সঙ্গে দেখা করানোর।

নারায়ানরার স্ত্রী গত হয়েছেন আগেই। তিনি আসে সারদার সঙ্গে দেখা করতে সারদার ছেলে ভার্গভনের বাড়িতে। খাওয়া-দাওয়ার বড় আয়োজন করা হয়। দুই পরিবার আবার দেখা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।৩০ বছরেই বিধবা হয়েছিলেন সারদা। আজ দু’জনে আবার একা। সারদার ছয় সন্তানের চার জন বেঁচে রয়েছেন।

দু’জন দু’জনকে শেষবার দেখবে বলেই কি এতদিন বেঁচে থাকা? অনেকে চলে গিয়েছেন তাঁদের নতুন জীবন থেকে। কিন্তু তাঁরা বেঁচে রয়েছেন। হয়তো কোনও অদৃষ্টের অঙ্গুলি হেলনে।