প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, শেষশ্রদ্ধা জানাতে হাজির সীতারাম ইয়েচুরি

প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯। সোমবার সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে তিনি মারা যান।

দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এ মাসেরই ১ তারিখে তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি গিয়েছিলেন। ফের অসুস্থ হয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি বেলভিউয়ে ভর্তি হন। সেখানেই এ দিন সকালে প্রয়াত হন সোমনাথবাবু। তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এ দিন হাসপাতালে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সোমনাথবাবুর রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়িতে সন্ধ্যায় এসেছিলেন লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।

১৯৭১ সালে বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে প্রথমবার সংসদে গিয়েছিলেন সোমনাথ। তার পর ১৯৭৭ সালে তিনি যাদবপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। কিন্তু, ১৯৮৪তে তিনি সেই যাদবপুর কেন্দ্রেই পরাজিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। পরের বছরই তিনি বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে জিতে ফের সংসদে যান। তার পর থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সোমনাথবাবু ওই কেন্দ্রেরই সাংসদ ছিলেন। এর মধ্যে ২০০৪ সাল থেকে তিনি লোকসভার স্পিকার পদে ছিলেন। যদিও ২০০৮ সাল থেকে সিপিএমের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। ওই বছরের জুলাই মাসে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

অসমের তেজপুরে ১৯২৯ সালের ২৫ জুলাই সোমনাথবাবুর জন্ম। স্কুল জীবন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিশনে। তার পর প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এর পর তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। ফিরে এসে কলকাতা হাইকোর্টে প্রাকটিস শুরু করেন তিনি। এর পর সিপিএম সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে বর্ধমান থেকে জিতে সংসদে যান। ১৯৭৩ সালে তিনি সিপিএমে যোগ দেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন সোমনাথবাবু। ২০০৮ সাল পর্যন্ত দলের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট ছিল।

গাড়ি চুরি করতে হায়দরাবাদ থেকে দিল্লি বিমানে উড়ে আসত চোরেরা!

২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে ইউপিএ। সেই সরকারের জোট শরিক ছিল বামেরা। সেই সরকারে প্রথমে প্রটেম স্পিকার হিসাবে নির্বাচিত হন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনি সর্বসম্মত ভাবে স্পিকার নির্বাচিত হন। কিন্তু, ২০০৮ সালে মার্কিন পারমাণবিক চুক্তি বিতর্কে ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসে বামেরা। অনাস্থা আনা হয় মনমোহন সিংহের সরকারের উপর। কিন্তু, সোমনাথ স্পিকার পদ ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি। এমনকি, তাঁর দল ভোটাভুটিতে মনমোহনের উপর অনাস্থায় অনড় থাকলেও তিনি তাতে অংশ নেননি। এর পরেই সোমনাথকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেটা ২৩ জুলাই ২০০৮। তার পর থেকে দলের সঙ্গে সোমনাথের আর কোনও সম্পর্ক ছিল না।

এর ঠিক ১০ বছর পর সোমনাথের প্রয়াণ হল। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ— সকলেই শোকবার্তা জানিয়েছেন। কিন্তু, সোমনাথ যে দলের প্রাক্তন নেতা ছিলেন, সেই সিপিএম কিন্তু অনেক দেরি করে শোকবার্তা জানায়। প্রথমে দলের রাজ্য কমিটি পরে পলিটব্যুরো এবং সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করে শোকজ্ঞাপন করেন।

এ দিন সন্ধ্যাবেলা সোমনাথবাবুকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। বিমান বসুকে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সোমনাথবাবুর ছেলে প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়। পরে সেখানে আসেন সীতারাম ইয়েচুরি।