চিত্তরঞ্জন পার্ক আর দুর্গাপুজো, মনেই হয় না কলকাতার বাইরে রয়েছি

চিত্তরঞ্জন পার্ক আর দুর্গা পুজোচিত্তরঞ্জন পার্কের মেলার মাঠের মন্ডপ।

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: চিত্তরঞ্জন পার্ক আর দুর্গাপুজো। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি দিল্লির বুকে রয়েছে ছোট্ট একটা কলকাতা। যা দুর্গাপুজোর সময় না গেলে বোঝা যায় না। এত বার দিল্লি গিয়েই পুজোর সময় কখনও সেখানে থাকা হয়নি। এ বার তাই সেই লক্ষ্যেই বেরিয়ে পড়েছিলাম। এ বার পুজোর একটা দিন রাজধানীর মিনি কলকাতার নামে।

সেই মতো সপ্তমীর ভোরেই পৌঁছে গিয়েছিলাম দিল্লির মিনি কলকাতা চিত্তরঞ্জন পার্কে। মূল দিল্লি শহর ছাড়িয়ে, গ্রেটার কৈলাস পেরিয়ে যখন আমাদের উব্‌র চিত্তরঞ্জন পার্ক চত্বরে ঢুকল তখন যেন ভেসে এল সেই পুজোর চেনা গন্ধ। যা কলকাতা শহরে পাওয়া যায়। মোড়ে মোড়ে পুজোর প্যান্ডল ঘিরে উৎসুক ছেলেমেয়েদের ভিড়। নতুন জামা-কাপড়ে সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে দিল্লির বাঙালিদের উৎসব।

মাঠে নেমে পড়েছেন পরিবারের মা, কাকিমা, দিদিমারাও। সকলেই পরনেই সাবেকি শাড়ি। কারও গায়ে লাল পাড় গরদ তো কারও গায়ে ঢাকাই জামদানী। কারও আবার সাদামাঠা শান্তিপুরী তাত। এই পুজোর চারটি দিন ঘিরেই সারা বছরের প্রস্তুতি দিল্লির বাঙালিদের। আর যাঁরা এই চত্বরে থাকেন না তাঁদদের অনেকটা সময়ই কেটে যায় এ চিত্তরঞ্জন পার্কে।

শোভাবাজার রাজবাড়ি দিয়েই হোক না পুজোর শুরু

 সেই মতো আমাদেরও এক বন্ধুর কল্যাণে সপ্তমীর খিচুড়ি ভোগ জুটে গেল কালকাজির পুজো মণ্ডপে। সেখানে সবার সঙ্গে পেটপুরে ভোগ খেয়ে, ঠাকুর দেখে দুটো মোর পেরিয়েই ঢুকে পড়া যায় চিত্তরঞ্জন পার্কে। যখন ফিরলাম তখন সন্ধে নেমে এসে। বর আটকে গেল মূল রাস্তার উপরেই। পুলিশ তত ক্ষণে গোটা চিত্তরঞ্জন পার্কের ভিতর গাড়ি ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। অগত্যা হেঁটেই পৌঁছনো আই ব্লকের গেস্ট হাউসে। বেশ খানিকটা ভিড় ঠেলেই পৌঁছতে হল।

কালকাজি এক্সটেনশনের পুজো।

আই ব্লকের উল্টো দিকেই মেলা প্রাঙ্গনে হচ্ছে একটি পুজো। তার থেকে কয়েক পা এগোলেই আরও একটা। লাইন ঘুরে গিয়েছে চিত্তরঞ্জন পার্কের আনাচ-কানাচ। তার মাঝেই কলকাতার স্বাদকে আরও জমিয়ে দিয়েছে ফুচকার স্টল। তাতেও ভিড় উপচে পড়ছে। আমরা আর সেই সুযোগ ছাড়ি কী করে? বাঙালি ফুচকাওয়ালা জমিয়ে খাওয়ালেন ফুচকা। এই সন্ধেতেই তার ঝুলি প্রায় খালি। পুজো মণ্ডপের পাশেই রয়েছে ফুটের চায়ের দোকান। সেখানেও নেহাৎই ভিড় কম না। এই ক’টা দিন সকলে মিলেই দিল্লির বাঙালিরা খুঁজে ফেরে ফেলে আসা কলকাতার ফ্লেভার।

বিজয়া দশমীকে সিআর পার্কের সব পুজো মণ্ডপের সিঁদুর খেলা হয় দেখার মতো। গোটা দিল্লির বাঙালি সে দিন একসঙ্গে চলে আসে একটা জায়গায়। তার পর পরিচিত, অপরিচিত নির্বিশেষে চলে সিঁদুর খেলা। আর তার শেষ শুরু হয় মন খারাপের পালা। সঙ্গে আরও এক বছরের অপেক্ষা। এই সিআর পার্কই মিলিয়ে দেয়, বৃদ্ধ থেকে টিনেজার, ট্রান্সজেন্ডার থেকে অন্য জাতি-ধর্মকে। এই মঞ্চে সবাই যে আজ মা দুর্গার ভক্ত।