জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হোয়াটসঅ্যাপে অত্যাচারের ছবি পেয়েও মেয়েকে বাঁচাতে পারল না নায়ার পরিবার। কেরলে মহিলার মৃত্যু চমকে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। ২৪ বছরের এই মহিলা তাঁর পরিবারকে হোয়াটসঅ্যাপ করে জানিয়েছিলেন পণের জন্য তাঁর উপর অত্যাচার হচ্ছে। ছড়ে যাওয়া শরীরের ছবিও পাঠিয়েছিলেন তিনি। সোমবার শ্বশুর বাড়িতেই তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ মেডিসিনের ছাত্রী ভিস্মায়া নায়ার তাঁর মেসেজে লিখেছিলেন, তাঁকে কীভাবে তাঁর স্বামী কিরণ কুমার চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে তার পর তাঁর মুখের উপর পা দিয়ে চাপা দিয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে তাঁর স্বামী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এই ঘটনার কথা। যা দেখে টুইট করে মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারা বিজয়ন।
তিনি টুইটে লেখেন, ‘‘সমাজ হিসেবে আমাদের বিয়ের সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। বিয়ে কোনও পরিবারের আরম্বরপূর্ণ শো বা সোশ্যাল স্ট্যাটাস নয়। বাবা-মাকে বুঝতে হবে এই বর্বরচিত পণ প্রথা আমাদের মেয়েদের পন্যে পরিণত করছে। আমাদের অবশ্যই ওদের সঙ্গে মানুষ হিসেবে আচরণ করা উচিত।’’
তিনি দ্বিতীয় আর একটি টুইটে লেখেন, ‘‘একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা সেটিই যেখানে মহিলা ও পুরুষদের সামন চোখে দেখা হয়। সাম্প্রতিক এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পর কেরালা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার জন্য আরও ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এবং সাধারণ মানুষ এক সঙ্গে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’’ একটি বা দু’টি নয় টুইটের সিরিজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
As a society, we need to reform the prevailing marriage system. Marriage must not be a pompous show of the family’s social status and wealth. Parents have to realise that the barbaric dowry system degrades our daughters as commodities. We must treat them better, as human beings.
— Pinarayi Vijayan (@vijayanpinarayi) June 23, 2021
কোল্লামে ভিস্মায়ার স্বামীর বাড়ির বাথরুমে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর স্বামী ৩০ বছরের কিরণ কুমার রাজ্য পরিবহন দফতরে কর্মরত। এই ঘটনার পর তাঁকে চাকরী থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। ভিস্মায়ার ভাই ভিজিথ বলেন, ‘‘আমার বোনের মৃত্যু খুন। কারণ ও পণের জন্য আক্রান্ত ছিল, প্রচুর সহ্য করেছে। কিছু দিন ওও বাপের বাড়িতেও ছিল।’’
গত বছর জুনেই দু’জনের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের সময় ভিস্মায়ার পরিবারের তরফে ১০০টি সোনার কয়েন এবং এক একরের বেশি জমি, গাড়ি ও ১০ লাখ টাকা পণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর চাহিদা কমেনি এবং তার জন্য স্ত্রীর উপর অত্যাচার চলতে থাকে। ভিস্মায়ার বাবা থিরিভিক্রামান নায়ার পিটিআইকে বলেন, ‘‘গত জানুয়ারীতে মধ্যরাতে আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের সামনেই ও ভিস্মায়াকে মেরেছে।’’
ভিস্মায়ার পরিবার চায়নি সে স্বামীর কাছে ফিরে যাক। কিন্তু গত ১৭ মার্চ কুমারের জন্মদিনে ভিস্মায়াকে তাঁর কলেজ থেকে বাড়িতে নিয়ে যায় সে। তার পর থেকে ভিস্মায়ার তাঁর মা-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। এসইউভি-ও দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার পর তার বদলে টাকা চাইতে শুরু করে কুমার। তিননি বলেন, ‘‘এসইউভি-র মূল্য ১০ লাখ টাকা। তার বদলে ১০ লাখ টাকা চায় ক্যাশ। আমি যখন বলি সেটা সম্ভব নয়, ও আমার মেয়ের উপর অত্যাচার শুরু করে।’’
কেরলের এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ-প্রশাসনও স্তম্ভিত। কেরালা পুলিশের মুখ্য আধিকারিক লোকনাথ বেহেরা বলেন, ‘‘কোল্লামের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। যা কেরালার মানুষের বিবেককে ধাক্কা দিয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদি এর সঙ্গে অন্য কেউ যুক্ত থাকে তাদের সবাইকেই নির্ধারিত আই অনুযায়ী অভিযুক্ত করা হবে।’’ এই ঘটনার পর কেরালা প্রশাসনের তরফে হেলফলাইন নম্বর ও ই-মেল আইডি-ও দেওয়া হয়েছে এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে সরাসরি অভিযোগের জন্য।
(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)