‘লাল-সাদা-কালো রঙের গাড়ি আসত দিদিদের নিতে’

দেওরিয়া হোম কাণ্ড

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ছোট্ট মেয়েটি কোনও রকমে পালাতে পেরেছিল হোম থেকে। তার পর স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে গিয়েছিল থানায়। পুলিশের কাছে সে যা বলেছে, তাতে রীতিমতো ঘুম ছুটেছে প্রশাসনের। ওই হোমের সকল আবাসিক কিশোরী-তরুণীকেই যৌন ব্যবসায় ব্যবহার করা হত! হোমকে সামনে রেখে সে ব্যবসা চালাতেন গিরিজা ত্রিপাঠী নামে এক মহিলা। ব্যবসার কাজে তাঁকে সাহায্য করতেন তাঁর স্বামী মোহন ত্রিপাঠী এবং তাঁদের মেয়ে।

ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া। ওই জেলা সদরে বেশ কয়েক বছর ধরেই একটি হোম চালান গিরিজা। কিন্তু, রবিবার রাতে সেই হোম থেকেই ১০ বছরের এক নাবালিকা পালিয়ে বেরিয়ে আসে। তার মুখেই স্থানীয়েরা শুনতে পান ওই হোমের কীর্তিকলাপ। এর পর তাঁরাই পুলিশের কাছে নিয়ে যান ওই নাবালিকাকে। সেখানে পুলিশকে মেয়েটি বলে, ‘‘লাল, সাদা, কালো রঙের গাড়ি আসত দিদিদের নিয়ে যেতে। তার পর ফের ছেড়ে দিয়ে যেত সেই ভোরবেলা।’’

মেয়েটির কাছে হোম সম্পর্কে নানা তথ্য পেয়ে ওই রাতেই সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। হোম থেকে ২৪ জন মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। এখনও ১৫ জন কিশোরী-তরুণী নিখোঁজ। উদ্ধার হওয়া প্রত্যেককে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাঁদের বয়ানও রেকর্ড করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) আনন্দ কুমার বলেন, ‘‘নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরও গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আর পুলিশ তো তাদের কাজ করবেই। আইনি পদ্ধতি মেনেই তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

হিরোশিমা-নাগাসাকি, একটা ইতিহাস

ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেওরিয়ার ওই হোমটি চলত। রাজধানী লখনউ থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে ত্রিপাঠী দম্পতি সেটি চালাতেন। সরকারি সাহায্যও মিলত। কিন্তু, ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই দেশ জুড়ে হোমগুলির উপর নজরদারি চালিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেয় কেন্দ্রীয় সরকারকে। তারই প্রেক্ষিতে কিছু গোলমালের অভিযোগে ওই হোমটিকে সরকারি সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু, বৈধ কোনও অনুমতি ছাড়াই ত্রিপাঠী দম্পতি সেটি চালিয়েই গিয়েছেন। গত সপ্তাহেই ওই হোমে পুলিশের একটি দল যায়। কিন্তু, খারাপ ব্যবহার করে তাদের হোম থেকে বার করে দেন ত্রিপাঠী দম্পতি। তা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি এফআইআরও দায়ের করেছে পুলিশ।

হোম থেকে উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ১৮। তাদের অনেককেই যৌম নির্যাতনে শিকার হতে হয়েছে বলে পুলুশের কাছে অভিযোগ হয়েছে। শুধু তাই নয়, শারীরিক নিগ্রহের পাশাপাশি ওই মেয়েদের সঙ্গে চাকরবাকরের মতো ব্যবহার করতেন ত্রিপাঠী দম্পতি।

যে ১০ বছরের বাচ্চাটি পালিয়েছিল, সে ওই হোমে গত তিন বছর ধরে ছিল। কিন্তু, অত্যাচারের ঠেলায় সে পালাতে বাধ্য হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই হোমে বেআইনি কাজকর্ম চলত বলে প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছে।