করোনা পরিস্থিতি: প্রয়োজনের সময় চিকিৎসা পরিষেবা কি আদৌ পাব?

করোনা পরিস্থিতি

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তার ভাঁজ সরকারের কপালে। চিন্তিত সাধারণ নাগরিকও। কী হবে? কী হতে পারে? এ সব নিয়ে নানান আশঙ্কার মধ্যেই বর্তমান পরিস্থিতিতে একাধিক প্রশ্ন তুললেন বলাকা দত্ত


মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে কোনও প্রস্তুতি ছাড়া গোটা দেশ জুড়ে কেন লকডাউন ডাকা হল, এ নিয়ে প্রশ্ন করা আজ অবান্তর। কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেল না, তা নিয়ে সরকারকে আজ আর আমরা কাঠগড়ায় দাঁড় করাব না।

‘মিত্রো’ সম্বোধন কানে এলে কেন দেশবাসী আজও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে! জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়-নির্ঘণ্ট ঘোষিত হলেই, কেন সাধারণ নাগরিকের হাত-পা পেটের ভেতর সিঁধিয়ে যাচ্ছে— বিশ্বাস করুন, ভারতীয় নামক এক মুমূর্ষু জাতির এই মুহূর্তে এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।


দেশের আরও খবরের জন্য এখানে ক্লিক করুন

পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ লকডাউন পালনের পরেও তার কোনও সুফল পাওয়া গেল না কেন এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত একশো বছরের মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া ভারতের অর্থনীতি নিয়েও আজ আর দেশবাসীর কোনও প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে না।

দেশের কাণ্ডারি যখন স্মিত হাস্যে জনগণকে আশ্বস্ত করেন, জনসংখ্যার নিরিখে ভারতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশ সন্তোষজনক, তখন জাতীয়তাবাদী শক্তিতে উজ্জীবিত হতে হতেও নাগরিকের মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যায় বৈকি, এই মহান ভারতে জনসংখ্যার নিরিখে করোনা টেস্টের সংখ্যা কত? কিন্তু না, আজ আর আমরা কোনও প্রশ্ন করব না।

পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দু’হাত বিস্তৃত করে যখন লকডাউন সফল করার জন্য প্রতিটি নাগরিককে দেশভক্তিতে চুবিয়ে দিতে দিতে মহান যোদ্ধার সম্মান প্রদান করেন— তখনই কেন একে একে প্রকাশ্যে আসতে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের খবর, শ্রম আইনের পরিবর্তন, ঘুমন্ত পরিযায়ী শ্রমিকের ট্রেনে কাটা পড়া লাশ! তবু আজ আমরা আর কোনও প্রশ্ন করব না। আমরা যে আজ কোনও প্রশ্ন করার জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই জাঁহাপনা!

সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতন্ত্রের ভিতরেই লুকিয়ে আছে স্বৈরাচারের বীজ। তাই গণতন্ত্র দিয়ে কী ভাবে গণতন্ত্রের শ্বাসরোধ করা যায়, আমরা জেনে ফেলেছি তার রহস্য! আমাদের আর কোনও প্রশ্ন নেই, থাকতে পারে না কোনও প্রশ্ন। কারণ ৩০৩টি ইট দিয়ে আমরাই তৈরি করেছি গণতন্ত্রের এই মহান ইমারত!

এ বার আসি সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা আমাদের প্রিয় বাংলার মাটিতে।

খুবই নগন্যমাত্র করোনা টেস্ট, করোনায় মৃত্যর হার গোপন করা, অপরিকল্পিত ভাবে লকডাউন তুলে দেওয়া, হার্ড ইমিউনিটির উপর ভরসা করে মানুষকে ভিড় বাসে উঠতে বাধ্য করা, করোনার আতঙ্কিত পরিবেশে রাজ্যপালের কমিক রিলিফ, জরুরি পরিস্থিতিতেও বিরোধীদের সঙ্গে কোনও রকম সেতু তৈরি না করা এবং সর্বোপরি আমপানের টাকা নিয়ে নয়ছয়।

কিন্তু মাননীয়া, আপনাকে দেখে রাজনীতি নির্বিশেষে বহু মানুষ আজও ভরসা পায়। মনে করে, আপনি তাদেরই এক জন।

বিশ্বায়নের তত্ত্ব ভুলে, করোনা-আক্রান্ত পৃথিবীতে সব দেশ নিজের দেশের নাগরিক ও অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করাই প্রথম শর্ত হিসেবে মেনে নিয়েছে।

ঠিক সে ভাবেই, আমরাও ভারত নামক এক অখণ্ড রাষ্ট্রের কাছে ধাক্কা খেতে খেতে, কোণঠাসা হতে হতে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে ভুগতে যে যার রাজ্যে পুঞ্জীভূত হয়ে মাটি কামড়ে আত্মনির্ভর হতে চাইছি।

মাননীয়া, এখনও পর্যন্ত যা হয়েছে, আমরা কোনও প্রশ্ন করব না। আমরা জানি, আপনি সরকারি পরিসরকে সঙ্কুচিত না করে, বিস্তৃত করার চেষ্টা করছেন সর্ব ক্ষেত্রে।

করোনা পরিস্থিতি-তে মানুষ আজ চাইছে, বেসরকারি পরিবহণকে আপাতত সরকারি আওতায় নিয়ে আসা হোক।

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

সমস্ত বেসরকারি ও কর্পোরেট হাসপাতালগুলোকে সরকারি আওতায় নিয়ে আসা হোক এই অতিমারি পরিস্থিতিতে।

উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীদের জন্য তৈরি হোক মেকশিফট হাসপাতাল। এবং ক্রিটিকাল রোগীদের জন্য নিশ্চিত হোক কোভিড হাসপাতালের বেড। ফ্রিতে দেওয়া হোক (ফেরতযোগ্য) অক্সিমিটার ও অক্সিজেন সিলিন্ডার।

করোনা পরিস্থিতি-তে হোম আইসোলেশনের বিপদ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষ। অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করার আগেই মানসিক ভাবে হেরে যাচ্ছে প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে। একটাই চিন্তা, প্রয়োজনের সময় চিকিৎসা পরিষেবা কি আদৌ পাব?

তাই আর তর্ক বিতর্ক নয়। দলমত নির্বিশেষ আমরা কোভিডের বিরুদ্ধে এক হতে চাই মাননীয়া।

এ লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, আজ আমরা কোনও প্রশ্ন করব না। তাই এই অতিমারি অবস্থায় করোনার বিরুদ্ধে স্যানিটাইজার যখন একটি মূল অস্ত্র, তখন স্যানিটাইজারের ওপর ১৮ শতাংশ জিএসটি লাগু করার ঘোষণা শুনেও আমাদের আর প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে না।

বরং সেই অভিনেতার মুখটা মনে পড়ে, মেরা হাত লে লে ঠাকুর!