ভারত বন্‌ধ, তফসিলি জাতি-উপজাতি নিগ্রহ প্রতিরোধ আইন নিয়ে কেন্দ্রের আর্জি শুনবে সুপ্রিম কোর্ট

ভারত বন্‌ধভারত বন্‌ধে জ্বলছে গাড়ি।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ভারত বন্‌ধ ডেকেছিল দলিতদের একাধিক সংগঠন। আর সোমবারের সেই বন্‌ধ ঘিরেই দেশ জুড়ে তুলকালাম কাণ্ড বাধল।

অশান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তা থামাতে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ৯ বিক্ষোভকারীর। তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশেই ৬ জনের মৃত্যু হয়। রাজস্থানে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন ১ জন। উত্তরপ্রদেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ২ বিক্ষোভকারী। সংঘর্ষ ছড়ায় পঞ্জাব, ঝাড়খণ্ডেও। ঝামেলা ছড়িয়ে পড়ে আরও কয়েকটি রাজ্যে।

কেন এই বন্‌ধ? ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর কংগ্রেস সরকার তফসিলি জাতি ও জনজাতির উপর নিগ্রহ প্রতিরোধ করতে একটি আইন তৈরি করে। ২০১৫ সালে সেই আইনই সংশোধনী এনে আরও পরিবর্ধিত এবং কার্যকরী করা হয়। কিন্তু, সম্প্রতি সেই আইন সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে লঘু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এবং সে ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ভূমিকা নাকি ইতিবাচক ছিল না। কারণ তারা শীর্ষ আদালতে ওই আইন লঘু করার পক্ষেই মত দিয়েছিল। মোদী সরকার উচ্চবর্ণের পাশে দাঁড়াতেই এমনটা করেছে বলে একটা অংশের অভিযোগ। আর তারই প্রতিবাদে সোমবারের বন্‌ধ। পরিস্থিতি আঁচ করে ওই আইন লঘু না করার আর্জি নিয়ে তড়িঘড়ি সোমবারই সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্র। মঙ্গলবার সেই আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতে শুনানি।

রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

 ওই দিন মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, ভিন্দ, মোরেনা জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। চম্বল এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের প্রায় হাতের বাইরে চলে যায়। গোয়ালিয়রে দলিত সম্প্রদায়ের হাজার দুয়েক মানুষ লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। তাঁরা পাথর ছোড়েন। স্থানীয় দোকানপাট, পেট্রল পাম্পে বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। প্রচুর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার মধ্যে স্কুলবাসও ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠি চালানোর পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসও ছোড়ে। গোয়ালিয়রের পাশাপাশি বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ভিন্দ এবং মোরেনার মতো জায়গাতেও। গোয়ালিয়রে তিনটি থানা এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ভিন্দে সেনা নামাতে হয়।

অন্য দিকে, সোমবার সকাল থেকেই রাজস্থানের জয়পুর, বাড়মের, অলওয়ারে হিংসার ঘটনা ঘটতে থাকে। অলওয়ারে মারা গিয়েছেন এক জন। সেখানে অন্তত ৯ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছে। রাজস্থানে ওই প্রতিবাদ বিক্ষোভে আহত হয়েছেন অন্তত ২৮ জন। পঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আহত হয়েছেন কয়েক জন যাত্রী। মেরঠে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার নেয়। মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আহত ৪০ পুলিশকর্মী-সহ ৭৫ জন। পঞ্জাবেও স্কুল কলেজ, যানবাহন বন্ধ ছিল আগে থেকেই। বন্ধ ছিল ইন্টারনেটও। তবে সোমবার সকাল থেকেই জালন্ধর, ভাটিন্ডা, অমৃতসরে তলোয়ার, লাঠি হাতে রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। হরিয়ানার অম্বালা, রোহতকেও বিক্ষোভ ছড়ায়। দিল্লিতেও পথ অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। গুজরাতেও সড়ক ও রেল অবরোধ হয়। অমদাবাদে বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চালায় পুলিশ। সুরেন্দ্রনগর, জামনগরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দলিত বিক্ষোভে। বিক্ষোভের আঁচ পড়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশাতেও।