তিরিশ বছর পর বাবার আসনে ছেলে

তিন দশকের ব্যবধান। ১৯৮৮ সালে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন পূর্ণ অ্যাজটেক সাংমা। আর ২০১৮ সালে সেই গদিতে বসতে চলেছেন তাঁর পুত্র তথা তুরার সাংসদ ৪০ বছরের কনরাড কঙ্কাল সাংমা।

গত বছর মণিপুরের মতো, এ’বছর মেঘালয়েও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও সরকার ধরে রাখতে পারল না কংগ্রেস। তাবড় চার প্রার্থী-স্পিকার আবু তাহের মণ্ডল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস সি মারাক, নগরোন্নয়নমন্ত্রী রনি ভি লিংডো ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচডিআর লিংডোর পরাজয়ে কংগ্রেস বিপদে পড়ে। কিন্তু তার পরেও, গত কাল রাত পর্যন্ত কংগ্রেস দাবি করছিল, তাদের ২১, ইউডিপির ৬, পিডিএফের ৪, তিননির্দল ও এইচএসপিডিপির ২ বিধায়ক-সহ ৩৩ জন বিধায়ক নিয়ে সহজেই ক্ষমতা ধরে রাখবেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। কিন্তু ১৯ আসন পাওয়া এনপিপিকে নিয়ে কংগ্রেস হঠানো অভিযানে নেমে পড়েন নেডা জোটের আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা। চলে আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুও।

পরের ১২ ঘণ্টায় রাজ্য রাজনীতির সমীকরণটাই বদলে গেল। খ্রিস্টান রাজ্য মেঘালয়ে মাত্র ২টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিজেপি নেতারা বাকিদের বোঝান, কংগ্রেসের মৌরসীপাট্টা শেষ করতে হলে বিরোধী দলগুলির এক হওয়া ভিন্ন উপায় নেই। একে একে ইউডিপি, এইচএসপিডিপি, পিডিএফ, নির্দলদের পক্ষে টানেন হিমন্ত-রিজিজু। বিকেলে হিমন্ত ঘোষণা করেন, মুখ্যমন্ত্রী হবেন তুরার সাংসদ তথা এনপিপি সভাপতি কনরাড সাংমা। উপ-মুখ্যমন্ত্রী হবেন ডনকুপার।সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার আবেদন জানায় নতুন মিত্র জোট। ৫৯ আসনের মধ্যে ৩৪ জন বিধায়কদের সমর্থনপত্র জমা দেয় তারা।

যে করে হোক এনপিপি এবার ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। নেডা জোট ও এনডিএ শরিক হয়েও চতুর চালে কনরাড মেঘালয়ে বিজেপির সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী মিত্রতা করেননি। এমনকী বিজেপির বিরুদ্ধে রীতিমতো সরব ছিলেন। তিনি জানতেন, খ্রিস্টান রাজ্য মেঘালয়ে গোমাংস বিতর্ক ও ব্যাপটিস্ট নেতাকে ভিসা না দেওয়ায় মানুষ বিজেপির উপরে ক্ষিপ্ত। ভোটের আগে তাদের হাত ধরলে এনপিপি ১৯টি আসন পেত না। ভোটের ফলে বিজেপির মাত্র ২টি আসন পাওয়া দেখিয়ে দিল কনরাডের সিদ্ধান্তই ঠিক। ভোটের পরে যে কোনও জোটের রাস্তা খোলা রেখেছিলেন তিনি। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বোন আগাথা ইউপিএ আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, গত রাতে কংগ্রেসের যখন ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা প্রবল- তখন এনপিপির তরফেও মিত্রতার বার্তা পাঠানোর কথা চলছিল। সে ক্ষেত্রে ‘মিলিজুলি’সরকারের রফাসূত্র দিতেন কনরাড। কিন্তু হিমন্তের কৌশল ও সালিশির জোরে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাত না ধরেই মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিশ্চিত হয় তাঁর।

কনরাড ও আগাথার মতে, রাজ্যের মানুষ তাঁদের বাবা পূর্ণ সাংমাকে যে ভালবাসা ও সম্মান দিয়েছেন, তারই প্রতিফলন হয়েছে এবারের ভোটে। কনরাড বাবার পথেই রাজ্যের উন্নয়নকে পাখির চোখ করতে চান। জানান, রাজ্যের সব প্রান্তে উন্নয়ন পৌছে দেওয়াই নতুন সরকারের লক্ষ্য হবে।

পূর্ণ সাংমা ছিলেন গারো পাহাড়ের অবিসম্বাদিত নেতা। জীবনে কোনও নির্বাচনে না হারা, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পূর্ণ ১৯৮৮-৯০ সাল পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এনসিপি ও পরে এনপিপির প্রতিষ্ঠাও তাঁর হাত ধরেই। পরবর্তীকালে তাঁর কন্যা আগাথা সাংমা দেশের সর্বকণিষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। সাংমা পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রেখে এবারের ভোটে আগাথা ছাড়া তাঁর দাদা জেমস কে সাংমাও ডাডেংগ্রে কেন্দ্রে জিতেছেন।