কফিনবন্দি হয়ে মসুল থেকে ঘরে ফিরল ৩৮জন শ্রমিক

কফিনবন্দিকফিনবন্দি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক:  ওরা ফিরল৷ কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে৷ ২০১৪ সালে কাজের খোঁজে দেশ ছেড়ে ওরা গিয়েছিলেন সুদূর ইরাকে৷ লক্ষ্য ছিল পরিবারকে স্বচ্ছ্বল জীবন দেওয়া৷ কিন্তু সে দেশে পৌঁছনোর কিছু সময় পর থেকেই হঠাৎই উধাও হয়ে যান এ দেশ থেকে যাওয়া ৩৯ জন ভারতীয়৷ সেই ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮, প্রায় সাড়ে তিন বছর বছর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ইরাকের মসুলে কাজ করতে যাওয়া এই ভারতীয়দের৷ শেষ পর্যন্ত তাঁরা ফিরলেন৷ কিন্তু কী ভাবে?

শুধু কফিনবন্দি হয়েই ফিরল তা নয়, ফিরল প্রায় ক্ষয়ে যাওয়া কতগুলো কঙ্কাল৷ ডিএনএ পরীক্ষা ও জুতো, জামা দেখে শেষ পর্যন্ত বোঝা যায় এই সেই ভারতীয় কর্মীরা যাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না দীর্ঘ চার বছর৷ সোমবার মসুল থেকে সেই ৩৯ জনের মধ্যে ৩৮ জনের দেহ উড়িয়ে আনলেন বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিং৷

পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে কনস্ট্রাকশনের কাজ করতে ইরাকের মসুলে পাড়ি দিয়েছিলেন এই ৩৯ জন৷ কিন্তু সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁদের৷ পরিবারের লোকেরা বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দ্বারস্থ হন৷ কিন্তু সেই সময় তিনি জানিয়ে দেন, এই ভারতীয়রা ইরাকে সুস্থই রয়েছেন৷ কিন্তু পরিবারগুলির কথার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে গন কবরের খোঁজ পাওয়া যায় মসুলে৷ তা দেখেই সন্দেহ বারে৷ এবং শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে যায় এই ৩৯ জন ভারতীয়কেই মেরে গনকবর দেওয়া হয়েছে৷

বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার দু’বছর

সেই সময় এই ৩৯জনকে অপহরণ করেছিল ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা৷ তার পর তাঁদের মেরে গনকবর দিয়ে দেওয়ায় খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল হয়ে পরে৷ কিন্তু এই গনকবর খুঁজে পাওয়ার পর এই কবরে থাকা শরীরের সঙ্গে যে জুতো, জামা পাওয়া গিয়েছে তা দেখেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এই সেই হারিয়ে যাওয়া শ্রমিক৷ কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে প্রতিটি দেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়৷ ডিএনএ পরীক্ষার ফলে দেখা যায় ৩৯ জনের মধ্যে ৩৮ জনের ডিএনএ-এই ১০০ শতাংশ মিলে গিয়েছে৷ আর একজনের সেটা ৭০ শতাংশ৷ এর পরই পরিবারগুলিকে তাঁদের মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়৷

এই খবর আসতেই শুরু হয়ে যায় রাজনীতি৷ বিরোধিরা অভিযোগ তোলেন, এই ভারতীয়দের অপহরণ ও মৃত্যুর খবর লুকিয়ে রেখেছিল ভারত সরকার৷ কিন্তু বিজেপির দাবি, তারা পুরো নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলতে চাননি৷ এই তরজার মধ্যই ঘরে ফিরলেন ঘর ছাড়ারা৷ ফিরলেন কফিনবন্দী হয়ে৷ শেষ বারের মতো৷ পঞ্জাবে প্রথমে পৌঁছয় দেহ৷ তার পর পাটনায়৷ সেখানে তাঁদের বিহারের পাঁচ জনের দেহ নিতে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী৷ সকলের পরিবারের সদস্যদের সিওয়ান থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকারই৷ রাজ্য পুলিশের ডিজিসহ বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মন্ত্রীসভার প্রায় সব সদস্যই৷ বিহার থেকে ছিলেন ছ’জন৷ তাঁদের মধ্যে ফিরেছে পাঁচ জনের দেহ৷ যাঁর ৭০ শতাংশ পরীক্ষা হয়েছে তাঁর দেহ আনা হয়নি৷ সম্পূর্ণ হলে নিয়ে আসা হবে বলে কথা দিয়েছেন ভিকে সিং৷ যাঁদের দেহ ফিরল তাঁরা হলেন, সন্তোষকুমার সিং, বিদ্যাভূষণ তিওয়ারি, আদালত সিং, সুশীলকুমার কুশহওয়া ও ধর্মেন্দ্র কুমার৷

এর মধ্যেই ভিকে সিংয়ের মন্তব্যে শুরু হয় বিতর্ক৷ মৃতদের পরিবারকে কোনও ক্ষতিপূরণ বা চাকরি প্রসঙ্গে রেগে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘চাকরি দেওয়াটা ফুটবল খেলা নয এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা বিস্কুট বিলি করা নয়৷’’ তিনি জানান, এই ভারতীয়দের সম্পর্কে বাগদাদের ভারতীয় দূতাবাসে কোনও খবরই ছিল না৷ যদিও এভাবে প্রচুর ভারতীয় বাইরে অবৈধভাবে যান এজেন্টের মাধ্যমে৷ তা নিয়েও সরকার ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে৷

পঞ্জাবের ২৭ জনকে এককালীন ৫ লাখ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোত সিংহ সিধু৷ বিহার সরকার েককালীন চার লাখ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে৷ পঞ্জাবে চাকির প্রসঙ্গে ওই মন্তব্য করলেও বিহারে তিনি জানান, কিছু না কিছু ব্যবস্থা তো অবশ্যই করা হবে৷ এদিকে ইরাকে অনুসন্ধানে সাহায্য করা স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার তরফে কফিন খুলতে রীতিমতো নিষেধই করে দেওয়া হয়েছে৷ কারণ যেখানে এই দেহগুলো পাওয়া গিয়েছে সেখানে কিছু বিষাক্ত পদার্থও পাওয়া গিয়েছিল৷ যার ফলে দেহের সঙ্গে সেগুলো কোনওভাবে লেগে থাকতে পারে৷ কফিন খুললে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছে তারা৷