অঙ্গদান করে মল্লিকা বাঁচবে অনেকের মধ্যে, মরেও ইতিহাস ১৫ বছরের মেয়ের

অঙ্গদান করে মল্লিকা বাঁচবে

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: অঙ্গদান করে মল্লিকা বাঁচবে , এটা বুঝেই রাজি হয়ে গেলেন বাবা। যে ছোট্ট মেয়েটাকে বাড়ির উঠোনে হেসে খেলে বড় হতে দেখেছিল পরিবার। আজ সেই মেয়েকেই তুলতে হবে চিতায়। জেনে গিয়েছে পরিবার। জানলেই কি মেনে নেওয়া সহজ। তাই একটু সময় নিয়েছেন মল্লিকার বাবা মানিক মজুমদার। শেষ পর্যন্ত ডাক্তারদের বোঝানোয় বুঝতে পেরেছেন, মেয়েকে আর ফিরে পাবেন না কিন্তু মেয়ে বাঁচবে অন্যের শরীরে। এ ভাবেই বেঁচে থাকবে মল্লিকা। তার কাজ হয়ে গেল শনিবারের কলকাতায়।

দিলচাঁদকে মনে আছে তো? কিছুদিন আগের ঘটনা। গ্রিন করিডোর করে নিয়ে আসা হয়েছিল এই শহরে। তার পর প্রতিস্থাপন। আবারও সেই একই মর্মান্তিক হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বড় জয় হয়েছিল সেদিন, হল এ দিনও। মল্লিকা কোথাও যেন একটু আলাদা। ছোট মেয়েটা আজ যেন মরেও অনেকটা বড় হয়ে উঠল। মরণোত্তর অঙ্গদান করল সে। একসঙ্গে দু’জনকে জীবন দিল নিজে মরে গিয়েও। রাজ্যেএর সর্ব কনিষ্ঠ ও সর্বোচ্চ অঙ্গদাতা হিসেবে লেখা হয়ে গেল মল্লিকার নাম।

শুক্রবার ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর তাঁর শরীর থেকে হৃদযন্ত্র, কিডনি, ফুসফুস, ত্বক, কর্নিয়া, লিভার সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়। মল্লিকার লিভারে সুস্থ জীবন ফিরে পাবেন হায়দরাবাদের এক জন। অ্যাপোলোতে হয়ে গেল সেই প্রতিস্থাপন। দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপন করে এসএসকেএম-এরই দুই রোগীর শরীরে। অস্ত্রোপচার সফলভাবেই হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আপাতত ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তিনজনকে। মল্লিকার বাবা বলেন, ‘‘মেয়ের শরীর কাটাছেড়া হোক চাইনি। তাই ডাক্তাররা বলা স্বত্বেও প্রথম মানতে পারিনি। কিন্তু পরে মনে হল ও তো আর নেই কিন্তু ওর অঙ্গ নিয়ে যদি কেউ বেঁচে থাকে তা হলেই আমার মেয়েই বেঁচে থাকবে ওদের মধ্যে। তাই রাজি হয়ে যাই।’’ শুধু মল্লিকার অঙ্গ নিয়ে যাঁরা বাঁচবেন তাঁদের একবার দেখতে চান মানিকবাবু। দেখতে চান মেয়ের নতুন করে বেঁচে থাকা।

সফল ভাবে হার্ট প্রতিস্থাপন কলকাতায় হল

গত ১ অগস্ট থেকে এসএসকেএম-এ ভর্তি ছিল শিলিগুড়ির মল্লিকা। কানের একটা ছোট্ট সমস্যা। বছর পাঁচেক ধরে কানের ব্যথায় ভুগছিল মেয়েটি। স্বাভাবিক কানের ব্যথার চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। কিন্তু পুরোপুরি সারত না। কিছুদিন পরেই তা আবার ফিরে আসত। গত ২৮ জুলাই স্কুলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে মল্লিকা। অসহ্য যন্ত্রণায় জ্ঞ্যান হারায়।  সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে।

সেখানেই সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় মাথার ভিতর জমাট বেঁধে রয়েছে রক্ত। সেখান থেকেই কলকাতায় বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অব নিউরলজিতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন ডাক্তাররা। ৩০ জুলাই এসএসকেএম-এ ভর্তি করা হয় মল্লিকাকে। চিকিৎসার শুরুর আগেই মল্লিকার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। অস্ত্রোপচারের আগেই কোমায় চলে যায় ১৫ বছরের মেয়েটি। ভেন্টিলেশনে দেওয়া হলেও বাঁচার আশা ছিল না মল্লিকার। চিকিৎসকরা পরিবারকে সেটা জানান এবং মরোনত্তর অঙ্গদানের কথা বলেন।

দিলচাঁদ সিংহকে নয়া জীবন দিয়েছে এ শহর

কিন্তু কিডনি ও লিভার গ্রহিতা পাওয়া গেলেও হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের গ্রহিতা পাওয়া যায়নি। কর্নিয়া ও ত্বকের প্রতিস্থাপনও হবে দ্রুত। মল্লিকার দুটো কিডনি পেলেন মৌমিতা চক্রবর্তী ও সঞ্জীব দাস। শুক্রবার গভীররাতে চেন্নাই থেকে অ্যাপোলোতে নিয়ে আসা হয় অজয় রমাকান্ত নায়েককে। শুক্রবার ভোরে বাক্সবন্দী লিভার এসএসকেএম থেকে গ্রিন করিডোর করে ১৩ মিনিটে নিয়ে যাওয়া হয় অ্যাপেলোতে। ভোর পাঁচটা থেকে দুই হাসপাতালেই শুরু হয় অস্ত্রোপচার। তিনটি অস্ত্রোপচারই সফল হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ত্বক ও কর্নিয়া সংরক্ষণ করা হয়েছে।