সফল ভাবে হার্ট প্রতিস্থাপন কলকাতায়, চিকিৎসা ব্যবস্থায় দেশে গড়ল নয়া ইতিহাস

সফল ভাবে হার্ট প্রতিস্থাপন কলকাতায়সফল ভাবে হার্ট প্রতিস্থাপন কলকাতায়

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সফল ভাবে হার্ট প্রতিস্থাপন কলকাতায় হল। শুধু প্রতিস্থাপন নয়, একই সঙ্গে গোটা দেশের মধ্যে ইতিহাসও গড়ল সোমবারের এই অস্ত্রোপচার।

এক জনের শরীর থেকে হার্ট নিয়ে অন্য জনের দেহে চার ঘণ্টার মধ্যে তা প্রতিস্থাপন করতে হয়। তার বেশি সময় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার কার্যকরী হয় না। এ দিন কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে সেই সময়ের মধ্যেই এই হার্ট প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতালের তরফে দাবি করা হয়েছে, ওই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে জুড়ে গেল তিন শহরের নামও। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু এবং কলকাতা। চেন্নাই থেকে চিকিৎসক দল প্রথমে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে যায়। সেখানে ব্রেন ডেথ হওয়া এক ব্যক্তির শরীর থেকে হার্ট সংগ্রহ করে তা নিয়ে তাঁরা উড়ে আসেন কলকাতার ফর্টিসে। গোটাটাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। গ্রহীতা রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলেও জানা গিয়েছে।

ফর্টিস হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক তাপস রায়চৌধুরী। তাঁর নেতৃত্বেই এই অস্ত্রোপচার হয়। এ দিন তিনি অস্ত্রোপচারের পর তিনি জানান, পূর্ব ভারতে হার্ট প্রতিস্থাপনের এমন জটিল অস্ত্রোপচার এই প্রথম। পাশাপাশি এই অস্ত্রোপচারের ঘটনা দেশে এক নয়া ইতিহাস গড়ল। কারণ, ভারতে প্রথম কোনও একটি হাসপাতাল তিনটি শহরের সঙ্গে জুড়ে এই অস্ত্রোপচার করেছে। চেন্নাই থেকে চিকিৎসকেরা প্রথমে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে গিয়ে ব্রেন ডেথ হওয়া এক ব্যক্তির হার্ট সংগ্রহ করেন। তার পর তা নিয়ে কলকাতায় এসে তাঁরা তা প্রতিস্থাপন করেন অন্য এক রোগীর দেহে। এমনটা এর আগে হয়নি। ৬ জন চিকিৎসকের একটি দল এই অস্ত্রোপচার করেন।

দিলচাঁদ সিংহ নতুন হৃদয় বুকে নিয়ে কলকাতা ছেড়ে ফিরলেন দেওঘরে

ফর্টিস-এর তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার বেঙ্গালুরুতে পথদুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বরুণ ডিকে নামে এক ব্যক্তি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, তাঁর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা দিলচাঁদ সিংহ বেশ কয়েক বছর ধরেই হার্টের গুরুতর অসুখ ডায়ালেটেড কার্ডিয়াক মায়োপ্যাথিতে ভুগছিলেন। কলকাতার ‘ফর্টিস’-এ ভর্তি ছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, দিলচাঁদের অবিলম্বে হার্ট প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। বরুণ ভর্তি হয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর স্পর্শ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। বরুণের ব্রেন ডেথের পর তাঁর পরিবার হার্ট দান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। সেই সময় স্পর্শের তরফে চেন্নাই ফর্টিস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখনই ফর্টিস কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, দিলচাঁদের শরীরে বরুণের হার্ট প্রতিস্থাপিত করা হবে। বরুণের পরিবারও তাতে সম্মতি জানায়।

সেই মতো সোমবার সকালেই তাপসবাবুর নেতৃত্বে একটি দল চেন্নাই থেকে বেঙ্গালুরু পৌঁছয়। বরুণের দেহ থেকে হার্ট সংগ্রহ করা হয়। এর পর বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত সেই হার্ট বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় বিশেষ বিমানে করে নিয়ে আসা হয়। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় বিশেষ ওই বিমান। বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করছিল হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স। ভিআইপি রোডবাইপাস ধরে মাত্র ১৮ মিনিটে ১৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে অ্যাম্বুল্যান্স ফর্টিস-এ পৌঁছয়। তার পর শুরু হয় অস্ত্রোপচার এবং প্রতিস্থাপন।

বিমানবন্দর থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত যাতে অ্যাম্বুল্যান্স দ্রুত গতিতে যেতে পারে, স্ জন্য বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং কলকাতা পুলিশ যৌথ ভাবে একটি গ্রিন করিডর তৈরি করে দেয়। সেই পথেই এগোয় অ্যাম্বুল্যান্স। পুলিশ-প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।