গরমকালের রোগ এবং তার হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার

গরমকালের রোগ

ডা: সুরজিৎ দেবনাথ


গরমকালের রোগ নিয়ে আমরা সকলেই ভীষণ উদ্বেগে থাকি। এখনও বর্ষা আসতে অনেকগুলো দিন বাকি। তার আগে গরমকালের রোগ নিয়ে একটু সচেতন থাকলে ভালই হয়। শুষ্ক এবং উত্তপ্ত আবহাওয়াই গ্রীষ্ম ঋতুতে বিভিন্ন রোগের মূল কারণ। এই পরিবেশে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ব‌ংশবৃদ্ধি ভাল এবং দ্রুত হয়। যে সমস্ত রোগের প্রকোপ এই সময়ে লক্ষ করা যায়—

ঘামাচি (হিট র‌্যাশ): ঘর্মগ্রন্থি আটকে যাওয়ার ফলে এই ধরনের ত্বকের উদ্ভেদ দেখা যায়। অনেকেই ঘামাচি হলে বেশি করে পাউডার ব্যবহার করেন। কিন্তু, তাতে ঘর্মগ্রন্থি আরও বেশি করে আটকে গিয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থায় ভাল করে স্নান করতে হয়, যাতে গ্রন্থির মুখ পরিষ্কার হয়ে যায়।

ওষুধ: লিডাম ২০০, এপিস ২০০, এন্টিম ক্রুড ২০০, গ্রাফাইটিস ২০০, নেট্রাম মিউর ২০০, রাস টক্স ২০০।

সানবার্ন: সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের উপর যন্ত্রণাদায়ক উদ্ভেদ তৈরি করে এবং ত্বককে পুড়িয়ে দেয়। প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসাবে সানস্‌স্ক্রিন লোশন রোদে বেরনোর ২০ মিনিট আগে উন্মুক্ত ত্বকে লাগাতে হবে। রোদচশমা এবং টুপি পরতে হবে।

ওষুধ: এন্টিম ক্রুড ৩০, কস্টিকাম ২০০, নেট্রাম মিউর ২০০।

হিট স্ট্রোক: দীর্ঘ সময় রোদে থাকার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে তাকে মাথা যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব, ঝিমধরা অনুভূতি, মাংসপেশীর খিঁচুনি, দ্রুত হৃদ্‌স্পন্দন এবং জ্বর।

ওষুধ: অ্যাকোনাইট ৩০, জেলসিমিয়াম ৩০/২০০, গ্লোনোইন ২০০, নেট্রাম মিউর ২০০।

সর্দি-কাশি: গরমের মধ্যে ঠান্ডা পানীয় খাওয়া, শরীরে ঘাম শুকানো, বাতাসে ধুলো-কণা বেশি থাকার ফলে গ্রীষ্মকালীন সর্দি-কাশি দেখা দেয়।

ওষুধ: অ্যাকোনাইট ৩০, আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০/২০০, অ্যালিয়াম সেপা ৩০/২০০, ব্রায়োনিয়া ২০০, রাসটক্স ২০০।

খাদ্যে বিষক্রিয়া: তপ্ত ও আর্দ্র আবহাওয়া ক্ষতিকারক জীবাণু বংশবিস্তারে সাহায্য করে এবং খাবারে বিষাক্ত সংক্রমণ ঘটায়। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হয়। সঙ্গে থাকে পেটে যন্ত্রণা এবং জ্বর।

ওষুধ: আর্সেনিক অ্যালবাম ২০০, পোডোফাইলাম ২০০, ভেরেট্রাম অ্যালবাম ২০০।

চোখ ওঠা (কনজাংটিভাইটিস): গরমকালে বাতাসে ধুলোকণা ও অ্যালার্জেনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এর মূল কারণ। একটি বা দু’টি চোখেই সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। চোখ লাল হয়, খচখচানি অনুভূতি ও আলোতে কষ্ট বৃদ্ধি পায়। ঈষৎ উষ্ণ জলের সেঁক দিলে চোখের আরাম মেলে। রোদচশমা অবশ্যই পরতে হবে।

ওষুধ: অ্যাকোনাইট ৩০, ইউফ্রেসিয়া ৩০/২০০, অ্যান্টিম টার্ট ২০০, আর্জেনটাম নাইট্রিকাম ২০০।

গ্রীষ্মকালীন অবসাদ: মস্তিষ্কে জল ও পুষ্টি সরবরাহে ঘাটতি হওয়ায় রোগীর মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। খিটখিটে মেজাজ, কথা বলায় অনীহা, কাজকর্মে অনিচ্ছা— ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম এই সমস্যায় বিশেষ প্রয়োজন।

ওষুধ: ব্রায়োনিয়া ২০০, জেনসিমিয়াম ২০০, অ্যাক্টিম ক্রুড ২০০।

মাম্পস: এটি কানের নীচে গলার দু’পাশে যে লালাগ্রন্থি তাকে, তার প্রদাহ, জ্বর, শরীরে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ, খাবার চিবানো ও ঢোক গেলার সময় ব্যথা এই রোগের লক্ষণ।

ওষুধ: অ্যাকোনাইট ৩০, মার্কসল ৩০/২০০, বেলেডোনা ৩০/২০০, পালসেটিলা ৩০/২০০, রাসটক্স ৩০/২০০।

হাম: এই রোগ শুরু হয় উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, লাল চোখ দিয়ে জল পড়া, তিন থেকে চার দিন পর লালচে রঙের মসৃণ র‌্যাশ শরীরে দেখা যায়। মুখের ভিতরে ছোট সাদা রঙের স্পট (কপলিক স্পট) দেখা যায় ২-৩ দিনের মাথায়।

ওষুধ: অ্যাকোনাইট ৩০, বেলেডোনা ৩০/২০০, পালসেটিলা ৩০/২০০, ব্রায়োনিয়া ২০০, রাসটক্স ২০০, মরবিলিনাম ৩০।

চিকেন পক্স: জলভরা উদ্ভেদ প্রথমে মুখমণ্ডলে তার পর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে তাকে জ্বর, গলা ও শরীরে ব্যথা। সাবধানতা হিসাবে সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। যদিও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সংক্রামণের লক্ষণ প্রকাশের আগে থেকেই।

ওষুধ: অ্যাকোনাইট ৩০/২০০, ব্রায়োনিয়া ২০০, অ্যান্টিমটার্ট ২০০, রাসটক্স ২০০।

*** উপরে উল্লিখিত সমস্ত রোগের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। কারণ হোমিওপ্যাথিতে একই রোগের ওষুধ রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ এক এক জন রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ এক এক রকম হতে পারে।

সফল ভাবে হার্ট প্রতিস্থাপন কলকাতায়, চিকিৎসা ব্যবস্থায় দেশে গড়ল নয়া ইতিহাস