করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠাদের রক্তের প্লাজমা বাঁচাতে পারে আক্রান্তকে, আশা জাগাচ্ছে সুইডেন

করোনাএই রক্তদান এবং প্লাজমা ট্রান্সফিউশনের কাজটা একেবারেই স্বেচ্ছাধীন।

ইন্দ্রনীল সিন্‌হা
ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট, সুইডেন


করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়া কোনও ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা এ বার আশার আলো দেখাতে পারে কোভিড-১৯ চিকিৎসায়। সে কাজেই ব্রতী হয়েছেন সুইডেনের ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট-এর এক দল গবেষক। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। অনেকেই কাজ করে চলেছেন। এ সবের মধ্যেই ওই গবেষক দল আশার আলো দেখাচ্ছে‌ গোটা বিশ্বকে।

সেই বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যখন স্প্যানিস ফ্লু হয়েছিল, তখন থেকে মহামারির সময়ে একটা কাজ গবেষকরা করতেন— ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর একেবারে সুস্থ হয়ে যাওয়া কোনও ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা সংগ্রহ করা। আর সেই প্লাজমা দেওয়া হত মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির শরীরে। কারণ যিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁর শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে। কাজেই সেই অ্যান্টিবডি যদি কোনও আক্রান্ত মানুষের শরীরে দেওয়া যায়, তা হলে তিনিও ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হতে পারেন। আর এই বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রীতি মতো কার্যকরীও হয়েছে। এ বার তাই কোভিড-১৯ রুখতেও তেমনটা করা হবে।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন

প্রথমে অনুমোদন মেলেনি। কিন্তু সম্প্রতি ৩০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জন্য পরীক্ষামূলক চিকিৎসার অনুমোদন দিয়েছে সুইডেনের ‘এথিক্যাল রিভিউ অথোরিটি’। ক্যারোলিন্সকা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ৩০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী খুব শীঘ্রই সম্প্রতি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের রক্ত প্লাজমা পাবেন। তার পর গোটা বিষয়টির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করবে‌ন ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা।

ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট, সুইডেন

ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট, সুইডেন

ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটে সংক্রামক রোগ ও মহামারি সংক্রান্ত বিষয়ের অধ্যাপক জোয়াকিম ডিলনার। তাঁর তদারকিতেই গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হবে। তাঁর মতে, গত শতাব্দীতে বিশ্ব জুড়ে যত সংক্রমণ হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা জানি না, কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করবে কি না, কিন্তু এই পদ্ধতি কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে।’’

এই চিকিৎসা পদ্ধতির একটা অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, রক্তদানের সমস্ত ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সর্বত্র আছে। তবে একটা মস্ত বড় অসুবিধাও রয়েছে। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে রক্ত প্লাজমায় অ্যান্টিবডির লেভে‌ল ঠিক কত হবে, সেটা মাপার কোনও পদ্ধতি এখনও বেরোয়নি। আর সেখানেই ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা, যাঁরা অ্যান্টিবডি নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজটি করবেন, তাঁদের বড় ভূমিকা রয়েছে। জোয়াকিম জানিয়েছেন, ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটে প্রচুর গবেষক কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি লেভেলের মাপের পরীক্ষা নিয়ে কাজ করছেন।

ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট, সুইডেন

ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট, সুইডেন

এই রক্তদান এবং প্লাজমা ট্রান্সফিউশনের কাজটা একেবারেই স্বেচ্ছাধীন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রথমে ১০ জন রোগীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। ওই রোগীরা এই মুহূর্তে ক্যারোলিন্সকা বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে সুরক্ষার সঙ্গে সফল হলে, দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ২০ জনের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা চালানো হবে।

জোয়াকিম জানিয়েছেন, যে সমস্ত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির স্টকহমে চিকিৎসা হয়েছে, তাঁরাই কেবল এই ক্ষেত্রে রক্তদান করতে পারবেন। কারণ, অন্যান্য মহামারির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একই ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট নানা অঞ্চলে নিজেদের খেল দেখিয়েছে। তাই যে ভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন কোনও ব্যক্তি, তাঁর প্লাজমা কেবল সেই ভাইরাসের সেই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর শরীরে দেওয়াটাই জরুরি। সেটা এ ক্ষেত্রেও করা হবে বলে স্টকহমের সুস্থ হওয়া রোগীদের প্লাজমা নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

অন্যান্য সংক্রমিত রোগের ক্ষেত্রে যখন এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, সেই পুরনো অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, ২০০ মিলিলিটার প্লাজমাই রোগীর শরীরের উপসর্গ কমিয়ে দেয়। তাই কোভিড-১৯-এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে ৬০০ মিলি‌লিটার রক্ত প্লাজমা নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই রক্ত প্লাজমায় তিন জন করোনা-আক্রান্তের চিকিৎসা করা যাবে। জোয়াকিম বলছেন, ‘‘মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার এই চূড়ান্ত সময়ে আপনাদের সাহায্যের খুবই প্রয়োজন।’’ তবে, রক্ত ট্রান্সফিউশনের যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া হয় শরীরে, সেই ঝুঁকিগুলো এ ক্ষেত্রেও থাকছে।

আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ অন্য বেশ কিছু দেশ তাদের হাসপাতালে এই পদ্ধতিটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করেছেন। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই ভারতেও এই পদ্ধতিটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হবে।