জ্বর মানেই করোনা নয়, তাই ভয় না পেয়ে জ্বরের কারণ জানুন

জ্বর মানেই করোনা নয়

জ্বর মানেই করোনা নয় সবার আগে বুঝতে হবে এই সত্যটা। বর্তমান সময়ে সকলেই ভয়ে ভয়ে আছেন, এই বুঝি জ্বর এল। আর জ্বর আসলেই সকলেই ভেবে নিচ্ছেন করোনা হয়েছে। কিন্তু বুঝতে হবে, জ্বর হল করোনার একটি লক্ষণ মাত্র। আরও অনেক কারণেই জ্বর আসতে পারে। কী কী কারণে জ্বর আসে— আসুন জেনে নেওয়া যাক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডাঃ ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ির কাছ থেকে।


বিশেষ করে এই বর্ষাকালে জ্বর-সর্দির প্রবণতা বেশি থাকে। এই সময়ে বৃষ্টিতে ভিজে এমনিতেই অনেকের সর্দি-জ্বর দেখা যায়। আবার ডেঙ্গু থেকে জ্বর হওয়ার প্রবণতা এই সময় বেশি। তার কারণ, এই সময় চার দিকে জল জমে থাকে। ডেঙ্গু বা ব্রেক বোন ফিভার এই বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়।

বর্ষার জমা জলে মশার বংশ বৃদ্ধি খুব দ্রুত হারে হয়। ডেঙ্গু হলে খুব তীব্র জ্বর, মাথার যন্ত্রণা আর গা-হাত-পা ব্যথা হয়। এডিস মশা এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।

এই সময় টাইফয়েডের লক্ষণ পাওয়া যায়। টাইফয়েডের ক্ষেত্রে রোগীর প্রব জ্বর দেখা যায়। সেই সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা এবং পাতলা পায়খানা টাইফয়েডের লক্ষণ। এই সব লক্ষণগুলি আপনাকে করোনা জ্বরের সঙ্গে অন্যান্য জ্বরের লক্ষণ গুলিয়ে দিতে বাধ্য। তবে টাইফয়েডে জ্বর একটু বেশি দিন ধরে স্থায়ী হয়। সেই জন্য এই জ্বরের লক্ষণ অনুসারে রক্ত পরীক্ষা সাত দিন বাদে করা হয়।

জ্বরের আর একটি কারণ হতে পারে ম্যালেরিয়া। এই জ্বরের ক্ষেত্রে রোগীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। প্রচণ্ড দুর্বলতা কাঁপুনি এবং ক্ষুধামান্দ্য দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব মাথার যন্ত্রণা এবং ভুল বকা দেখা যায়।

আর একটি জ্বর হল চিকুনগুনিয়া। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রেও গা-হাত-পা ব্যথা বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা তার সঙ্গে কখনও বেশি বা কখনও হালকা তাপমাত্রার জ্বর দেখা যায়।

অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের জ্বর আপনাকে বিভ্রান্ত করবেই। তাই নিজে বিভ্রান্ত না হয়ে বা অন্যকে বিভ্রান্ত না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। কারণ একমাত্র চিকিৎসকই পারেন আপনার জ্বরের সঠিক কারণটি ধরে দিতে।

জ্বরের চার ধরনের ভাগ আছে। যেমন ইন্টারমিটেন্ট, রেমিটেন্স, কন্টিনিউয়াস, হেক্টিক এবং রিলাপক্সিন। জ্বর অনেক সময় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হয়। জ্বর যখন ১০ থেকে ১৪ দিনের বেশি থাকে, তখন আমরা তাকে ভাইরাল ফিভার বলি। কিন্তু বেশি দিন থাকার ফলে যখন কোন‌ও রোগীর অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যায় তখন তা ব্যাকটেরিয়া থেকেও হতে পারে বলে মনে করা হয়। খুব সহজেই যে ভাইরাল জ্বরগুলি দেখা যায় সেগুলি হল স্মল পক্স, হাম, মামস, পোলিও, রেবিস, ইবোলা এবং হান্টার ফিভার, সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা বিভিন্ন ধরনের ফ্লু। কিছু ক্ষেত্রে আবার জ্বর আসে কোনও কমন ইনফেকশনের কারণে। যেমন— ইউরিন ইনফেকশন, ফুসফুসের ইনফেকশন, গলার টনসিলের ইনফেকশন, কানের কোনও ইনফেকশন, কিডনির অসুখ ইত্যাদি থেকে।

অর্থাৎ জ্বর হল একটি লক্ষণ মাত্র। জ্বরের পেছনে লুকিয়ে থাকে কোন কারণ। প্রথমেই দরকার সেই কারণটি খুঁজে বার করা। সে জন্য দরকার রোগ এবং রোগীর সম্বন্ধে সম্যক ধারণা। আর দরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সেজন্য রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা, সোয়াব পরীক্ষা, বুকের এক্সরে বিভিন্ন পরীক্ষা প্রয়োজন হয়। সে জন্য জ্বর হলেই অযথা আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ডায়াগনোসিস করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

(এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)