পোলিও টিকা খাওয়ানোর পর জানা গেল তাতেই রয়েছে ভাইরাস! তিন রাজ্যে দুশ্চিন্তা

পোলিও টিকাপোলিও টিকা

জাস্ট দু‌নিয়া ডেস্ক: পোলিও টিকা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের খাওয়ানো হয়। দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উদ্যোগে সেই পোলিও টিকা খাওয়ানোর কর্মসূচি চলে। গত ২৩ সেপ্টেম্বরও দেশের সর্বত্র ওরাল পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়।

কিন্তু সম্প্রতি জানা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের একটা বড় অংশে যে পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়েছে, তাতে টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস ছিল। কারণ, যে ভাইল বা ছোট শিশিতে ওই টিকা এসেছিল, তা কোনও ভাবে কলুষিত হয়ে যায়। এবং সেই কলুষিত পোলিও টিকা খাওয়ানো হয় শিশুদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। পোলিও টিকার ওই ভাইলগুলো তৈরি হয়েছিল গাজিয়াবাদের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক ওই তিনটি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, পোলিও সংক্রান্ত নজরদারি দল যত দ্রুত সম্ভব ওই কলুষিত পোলিও খাওয়া শিশুদের যেন চিহ্নিত করে। নজরদারি দলগুলিকে ওই শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখার পাশাপাশি তাদের শরীরে পোলিওর কোনও লক্ষণ দেখা গিয়েছে কি না সে ব্যাপারেও কড়া নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্ত্রকের তরফে। কলুষিত পোলিও টিকা শিশুদের শরীরে কী আচরণ করছে, সেটাও পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা। কী ভাবে পোলিও টিকার কিছু ব্যাচের ওই ভাইলগুলি কলুষিত হল, তা খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি কমিটি গঠন করেছে।

নিষিদ্ধ ওষুধ: মাথাব্যথায় আর খাওয়া যাবে না স্যারিডন, আরও ৩২৮টি ওষুধ বাতিল

গোটা দুনিয়াই এখন টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস মুক্ত। ২০১৪-র মার্চে এ কথা ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তার পরে এমন একটা ঘটনা ঘটায় যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে সরকার। মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছে‌ন, গোটা দেশেই মন্ত্রকের অত্যন্ত ভাল নজরদারির পরিকাঠামো রয়েছে। কোনও জায়গায় যদি ফের পোলিওর কোনও লক্ষণ দেখা যায়, সরকার অতি দ্রুত তা চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারতে সক্ষম। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে প্যানিক তৈরি করার কোনও প্রয়োজন নেই। নজরদারি দল ওই তিন রাজ্যে পোলিও খাওয়া সকল শিশুকে পর্যবেক্ষণে রাখবে। তাদের শরীরে পোলিও সংক্রান্ত কোনও লক্ষণ দেখা দিল কি না, নজরে রাখবে সেটাও।

যে সমস্ত জায়গায় শিশুদের ওই কলুষিত টিকা খাওয়ানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সেই সব জায়গার সকল শিশুকেই ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও ভাইরাস (আইপিভি) ইঞ্জেকশন দেওয়া নির্দেশ দিয়েছে। কোনও শিশু যাতে বাদ না পড়ে, সে দিকে কঠোর ভাবে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় টিকাকরণ কর্মসূচির আওতাতেই এটা করা হবে বলে মন্ত্রকের দাবি।

এখনও পর্যন্ত একটা ব্যাচেই কলুষিত পোলিও টিকার কথা জানা গিয়েছে। ওই ব্যাচের আওতায় ৫০ হাজার ভাইল রয়েছে। আরও দুটো ব্যাচ নম্বরের ১ লাখ ভাইল কলুষিত হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

কী ভাবে এই কলুষিত হওয়ার কথা জানা গেল? মন্ত্রক সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলের কয়েক জন শিশুর পায়খানা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টে টাইপ-২ পোলিও ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। তার পরেই যে ভাইলের পোলিও খাওয়ানো হয়েছিল ওই শিশুদের, তা পরীক্ষ করতে পাঠানো হয়। সেই রিপোর্টে জানা যায়, ওই ভাইলের পোলিও টিকায় টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস মিশে গিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক ওই সংস্থার সব টিকাই বাজার থেকে তুলে নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

বায়োমেড প্রাইভেট লিমিটেড নামে ওই কোম্পানি সরকারি সকল টিকাকরণ কর্মসূচির টিকা সরবরাহ করে সরকারকে। গাজিয়াবাদের ওই কোম্পানির পাঁচ জন বোর্ড অব ডিরেক্টরস। তাঁদের এক জনকে পুলিশ বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করেছে। বাকি চার জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। সেন্ট্রাল ড্রাগ রেগুলেটরের তরফে পুলিশে এফআইআর করা হয়। তার পরেই ওই ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই কোম্পানিকে কোনও ওষুধ তৈরি এবং তা বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে।