শিশুদের আচরণগত সমস্যা ও তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, শেষ পর্ব

শিশুদের আচরণগত সমস্যাশিশুদের আচরণগত সমস্যা

ডা: সুরজিৎ দেবনাথ


শিশুদের আচরণগত সমস্যা ও তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, প্রথম পর্ব

শিশুদের আচরণগত সমস্যা ও তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, দ্বিতীয় পর্ব

শিশুদের আচরণগত সমস্যা ও তার জন্য যে হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলির নাম ও তার শক্তির কথা উল্লেখ করা হল, তা রোগী বিশেষে বিভিন্ন হতে পারে। এই ওষুধগুলি ছাড়াও আরও অনেক গভীর ক্রিয়াশীল ওষুধ আছে যা শিশুর সম্পূর্ণ কেস হিস্ট্রি নেওয়ার পর প্রেসক্রাইব করা যেতে পারে। এ বিষয়ে এক জন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াই ভাল।

শিশুর আচরণগত সমস্যার ব্যবস্থাপনা (MANAGEMENT OF BEHAVIORAL PROBLEM OF CHILD)

১. শিশু যখন হাঁটা শেখে তখন তার শারীরিক ও আবেগজনিত (IMOTIONAL) শক্তি ক্ষয় হয়। এই কারণে বাচ্চা এই সময়ে বেশি ঘুমায়। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এই সময়ে বাচ্চাকে ভাল করে ঘুমাতে দিতে হবে। তাতে তার বুদ্ধির বিকাশ ভাল হবে।

২. বাচ্চা যখন আক্রমণাত্মক আচরণ (AGGRESSION) দেখাবে তখন বাবা-মাকে দৃঢ়তার সঙ্গে তা বারণ করতে হবে। হিংসাত্মক ভিডিয়ো গেম, কার্টুন, খেলনা না দেখানোই ভাল। বাচ্চার এই আচরণকে প্রকাশিত করার জন্য বিন ব্যাগ দেওয়া যেতে পারে, যাতে সে কিল, চড়, ঘুষি মেরে নিজের উগ্রতা (AGGRESSION) দূর করতে পারে। বাচ্চাকে মাঠে নিয়ে যান, ফুটবল দিন। তাতে লাথি মারুক। দেখবেন, বাচ্চা আমনাকে বা পরিবারের অন্য সদস্যদের মারবে না।

৩. কোনও কিছু চেয়ে বাচ্চা না পেলে চিৎকার করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার চাহিদা পূরণ করবেন না। তাকে অপেক্ষা করতে শেখান। সে বুঝতে শিখুক চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না। এই শিক্ষা ভবিষ্যতে তার কাজে লাগবে। বাচ্চা বায়না করলে মারধর করবেন না। তাতে ফল খারাপ হবে। ওই মুহূর্তে তার মনোযোগ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিন। কী ভাবে? বাচ্চার সঙ্গে লুকোচুরি খেলুন। মজা করুন। গল্প বলুন। সম্পূর্ণ অন্য কোনও মজার বিষয়ে ঢুকে পড়ুন।

৪. বাচ্চা খেতে না চাইলে জোর করবেন না। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বাচ্চাকে খাওয়ান। খিদের অনুভূতি বাচ্চাকে বুঝতে দিন। জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলে বাচ্চা ভয় পেয়ে আরও খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হবে। আঙুলের ডগায় খাবার নিয়ে বা চামচে করে দেকিয়ে দেখিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো, তাতে বাচ্চা খাবারের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ বুঝতে শিখবে।

৫. বাচ্চা অকারণ ঘ্যান ঘ্যান করলে বা জ্বালাতন করলে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন না। পরে বাচ্চাকে বোঝান, ‘তোমার সঙ্গে কেউ এমন ব্যবহার করলে তোমার কেমন লাগবে? তুমি যে ভাবে মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছ, তা সম্পূর্ণ ভুল। তুমি এমন আচরণ করলে তোমার কোনও কথাই শুনব না।’ আপনার দৃঢ়তা বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিন। দেখবেন বাচ্চাও ঠিক পথে চলে আসবে।

৬. যে সব মায়েদের কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে হয়, তারা যেটুকু সময় বাড়িতে থাকেন, সেই সময় বাচ্চাকে আদর করুন, মজা করুন। কাজে বেরনোর সময় দ্রুত ‘গুড বাই’ বলে বেরিয়ে যান। কাজের ফাঁকে ফোন করে বাচ্চার সঙ্গে কথা বলবেন না, খুব বিশেষ কারণ ছাড়া। বাড়ি ফিরে এসে স্বাভাবিক থাকুন। কোনও অপরাধ বোধ প্রকাশ করবেন না। বাচ্চাকে বুঝতে দিন, তাকে ছেড়ে আপনার বাড়ির বাইরে যাওয়াটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা।

নতুন বাবা-মায়েরা এই বিষয়গুলো একটু মাথায় রাখলেই দেখবেন বাচ্চা মানুষ করা খুব কঠিন কাজ নয়।