সুপ্রিয়া চেয়েছিল গৌরবের সন্তান, স্বামীর মৃত্যুর তিন বছর পর জন্ম নিল তাঁর সন্তান

সুপ্রিয়া চেয়েছিল গৌরবের সন্তান

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সুপ্রিয়া চেয়েছিল গৌরবের সন্তান , পেলেনও তবে গৌরবের মৃত্যুর ৩ বছর পর। ভালবাসা হয়ত এমনই হয়। এ ভাবেই সব হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসে জীবনে ভালবাসার টানে। ঠিক যেমনটা হয়েছে বেঙ্গালুরুর এই যুগলের জীবনে। মুম্বইয়ের যশলোক হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে জন্ম নিয়েছে তিন বছর আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর  হওয়া গৌরবের সন্তান।

২০১৫ সালের ঘটনা। সুপ্রিয়া ও গৌরবের জীবন দারুণ কাটছিল। দু’জনেরই বয়স ৩০। তার পাঁচ বছর আগে দু’জনে বিয়ে করেছিলেন। থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। ২০১৫তে দু’জন সন্তানের কথা ভাবতে শুরু করে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সন্তানের স্বপ্ন পরণ না হওয়ায় তাঁরা আইভিএফ-এর সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ভাগ্য়ে যে অন্য কিছুই লেখা ছিল সুপ্রিয়ার। যখন সুখের স্বপ্নে মশগুল দু’জনে তখন হুবলি কাছে গৌরবের গাড়িকে পিষে দিল একটি লড়ি। কিন্তু তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আইভিএফ-এর কাজ।

ভেঙে পড়লেন সুপ্রিয়া। কিছু মানসিকভাবেও বদলে গেল তাঁর জীবন। ভয়, হতাশায় ডুবে গেলেন তিনি। ব্লগ লিখতেন। সেখানেও ফুটে উঠত সেই হতাশার কাহিনী। গৌরবের মৃত্যুর কয়েক দিন পর সুপ্রিয়া লেখেন, ‘‘ও যে দিন চলে গেল সে দিন ও আমাদের পরের প্রকল্পের লোগো দেখতে গিয়েছিল। ও কখনও ওর বাবা-মায়ের বাড়িতে যেত না। কিন্তু সে দিন গিয়েছিল। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিল। মাকে বলে এসেছিল আবার আসবে, এ বার সুখবর নিয়ে। সন্তানের খবর নিয়ে।’’

অঙ্গদান করে মল্লিকা বাঁচবে , এটা বুঝেই রাজি হয়ে গেলেন বাবা

তার কয়েক মাস পর সুপ্রিয়া লেখেন, ‘‘সন্তানের জন্য় যে চেষ্টা আমরা শুরু করেছিলাম তার পিছনে নিশ্চই কোনও কারণ ছিল। আমি সেটা শেষ করতে চাই।’’ কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন সুপ্রিয়া। স্বামীর সন্তানকে ধারণ করবেন তিনি। এক পরিচিতের কাছ থেকে ড: ফিরুজা পারিখের খবর পান তিনি। যিনি সন্তান জন্মের বিষয়ে মিরাকেল ঘটিয়েছিলেন। তাঁর খোঁচে মুম্বই পাড়ি দেন সুপ্রিয়া। খোঁজও মিলে যায়। শুরু হয় নতুন লড়াই।

ডাক্তারও সুপ্রিয়াকে ফেরাতে পারেনি। যদি তিনি জানতেন এই কাজটি সহজ হবে না। এর পর বার বার আইভিএফ-এর কাজ সাফল্য় পায় না। ক্য়ারি করতে পারেন না সুপ্রিয়া। এর পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিকল্প গর্ভের। বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল গৌরবের শুক্রানু। যা তিনি মৃত্যুর আগেই দিয়েছিলেন। চলতে থাকে লড়াই।

গত তিন বছর ধরে স্বামীর মৃত্য়ুর দিনে বেঙ্গালুরুতে থাকতেন না সুপ্রিয়া। চলে যেতেন দুরে কোথাও। এ বার তিনি ছিলেন বালিতে। বালিতে বসেই ফোন পান সুপ্রিয়া। ফোনের উল্টোপার থেকে একটাই বার্তা ভেসে আসে, ‘‘তোমার পুত্র সন্তান পৃথিবীতে এসে গিয়েছে।’’ প্রথম বিমান ধরেই দেশে ফেরেন সুপ্রিয়া। ঠিক সেই সময় সুপ্রিয়া তাঁদের সন্তানকে কোলে তুলে নেন ঠিক যে সময় ৩ বছর আগে শেষবার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। চোখ ভরা জল নিয়ে সুপ্রিয়া বলেন, ‘‘আমার আশা ও ওর বাবার মতো দেখতে হবে। আমি সন্তান চাইনি। আমি চেয়েছি গৌরবের সন্তান। আমাদের দু’জনের ডিল ছিল আমাদের একটি সন্তান হবে আর একটি আমরা দত্তক নেব। তবে আজ থেকে আমি আর ওর মৃত্যুর দিনে সব ছেড়ে পালাব না।’’