শরীরে অক্সিজেনের গুরুত্ব ঠিক কতটা, জেনে নিন ডাক্তারের থেকে

শরীরে অক্সিজেনের গুরুত্ব

শরীরে অক্সিজেনের গুরুত্ব অপরিহার্য। বাতাসে যে অক্সিজেন থাকে, সেটাই শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে আমাদের ফুসফুসে যায়। সেখান থেকে রক্তের লোহিত কণিকা দ্বারা বাহিত হয়ে হৃদ্‌পিণ্ডে যায়। অক্সিজেন সম্পৃক্ত রক্ত সেখান থেকে সর্বাঙ্গে প্রবাহিত হয়ে সমস্ত জীব কোষকে সজীব রাখে। অক্সিজেনের অভাব ঘটলে দেহের সব ক্রিয়া-বিক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং পরিশেষে মৃত্যু ঘটে, জেনে নিন কী বলছেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রশিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ী।


অক্সিজেন একটি স্বাধীন বর্ণহীন গন্ধহীন গ্যাস। নানা অসুখের চিকিৎসা রোগীকে প্রায়শই অক্সিজেন দিতে হয়। এই অক্সিজেন একটি ধাতু নির্মিত সিলিন্ডারে থাকে। অক্সিজেন সিলিন্ডার বাইরে থেকে দেখে চিনে নেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে রং করা থাকে পুরো সিলিন্ডার— কালো আর উপরের দিকে সাদা রঙের বর্ডার।

আসুন জেনে নিই কখন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।

শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলেই চিকিৎসা শুরু করতে হয়। শরীর নীল হতে থাকলে, হৃদ্‌পিণ্ডের কিছু অসুখ, ফুসফুসের অসুখ হলে যেমন শোথ, শক পেলে, হার্ট অ্যাটাক হলে, কার্বন মনোঅক্সাইডের বিষক্রিয়ায় অক্সিজেনের বিশেষ প্রয়োজন হয়। বর্তমানে করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে অক্সিজেনের ব্যবহার অনস্বীকার্য। শরীরে অক্সিজেনের অভাব নানা কারণে ঘটতে পারে। যেমন, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কম হলে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পার্বত্য এলাকায়, জ্বলন্ত ঘরে কেউ আটকা পড়লে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। শ্বাস পথে কোনওরকম বাধার সৃষ্টি হলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়।

কিছু রোগের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্রিয়া ব্যাহত হলে, যেমন, নিউমোনিয়া, হাঁপানি ইত্যাদি। আবার অত্যধিক মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেলে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে। কোনও কারণে অত্যধিক রক্তাল্পতা হলে বা রক্তপাত হলে বা পেশীর অসুস্থতায় বা অনেক জাতীয় বিষক্রিয়ায় শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। যদি শরীরে অক্সিজেনের অভাব আকস্মিক ভাবে বা পুরোমাত্রায় হয় বা রোগী কোনও কারণে একদমই অক্সিজেন না পায়, সেই সব ক্ষেত্রে রোগীপ শরীর নীল হয়ে যায় এবং হৃদস্পন্দন থেমে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে রোগী অনেক সময় ভুল বকেন বা মাতালের মতো আচরণ করেন। গা ম্যাজম্যাজ করা, বমি বমি ভাব, নাড়ির গতি দ্রুত হওয়া বা ছন্দ পতন হওয়া অনেক সময় অক্সিজেনের অভাবের লক্ষণ। কিছু ক্ষেত্রে অক্সিজেনের অভাবে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং মস্তিষ্কে ফুসফুসে কিডনিতে অক্সিজেনের অভাবে ক্রিয়াকর্মের গন্ডগোল শুরু হয়। মাংসপেশীর খিঁচুনি বা কাঁপুনি অনেক সময় অক্সিজেনের অভাবে হয়।

অক্সিজেনের অভাব ঘটলে অক্সিজেন প্রয়োগ করেই তার চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। অবশ্য কী কারণে অক্সিজেনের অভাব ঘটেছে, তা নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করতে হবে।

অক্সিজেন দেওয়ার পদ্ধতি অনেক রকমের। এর মধ্যে নাকে ক্যাথেটার দিয়ে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দেওয়া খুব প্রচলিত পদ্ধতি। এ ছাড়াও মাক্স মুখে দিয়ে অক্সিজেন টেন্ট ব্যবহার করে বয়েল অ্যানাস্থেসিয়া মেশিনের সাহায্যে অক্সিজেন দেওয়া হয়। ছোট ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে অক্সিজেন টেন্ট ব্যবহার করা হয়। নাকের মধ্য দিয়ে একটি রবার বা পলিথিন ক্যাথেটার রোগীর ন্যাসোফেরিংস পর্যন্ত দেওয়া হয়। তার পরে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দেওয়া শুরু করা হয়।

একটি চাবির সাহায্যে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন দেওয়া কমানো-বাড়ানো এমনকি বন্ধ করা যায়। নাকের ক্যাথেটার দিয়ে অক্সিজেন দিলে রোগী আপনা থেকেই শ্বাসের সঙ্গে অতিরিক্ত অক্সিজেন সমেত  বাতাস শ্বাসের সঙ্গে নিতে থাকে। এটি বেশ সোজা এবং নিরাপদ পদ্ধতি এবং বহুল ব্যবহৃত। এর দ্বারা শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত অক্সিজেন রোগীকে দেওয়া যেতে পারে। বাতাসে অক্সিজেন থাকে প্রায় শতকরা ২১ ভাগ।

(এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)