পেনিস প্রতিস্থাপন ফিরিয়ে দিল যুবকের যৌনজীবন, বিশ্বে এই প্রথম

পেনিস প্রতিস্থাপনপেনিস প্রতিস্থাপনের পর চিকিৎসকরা।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছিল যৌনাঙ্গ। সেই যন্ত্রণাই কুরে কুরে খাচ্ছিল জীবন। অভূতপূর্ব অস্ত্রোপচার সেই পুরনো জীবন ফিরিয়ে দিচ্ছে মার্কিন এক সেনা যুবককে। সৌজন্যে, পেনিস প্রতিস্থাপন।

ট্রুপের সঙ্গে আফগানিস্তানে যুদ্ধে গিয়েছিলেন মার্কিন ওই সেনাকর্মী। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা আইইডি (ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসড) বিস্ফোরণে তার দুটো পা, যৌনাঙ্গ, তলপেটের একটা অংশ উড়ে যায়। হাঁটুর নীচে থেকে বাদ পড়ার পরেও কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে হাঁটছিলেন বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু, পুরুষ হিসাবে যৌনাঙ্গ ছাড়া বেঁচে থাকাটা তাঁর কাছে একেবারে দুঃসহ হয়ে উঠছিল। বেশ কিছু বছর ধরেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সম্প্রতি অঙ্গ দান করতে চাওয়া মৃত এক ব্যক্তির শরীর থেকে পেনিস (লিঙ্গ), স্ক্রোটাম (অণ্ডকোষ) এবং তলপেটের একটা অংশ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ওই যুবকের দেহে। এমন প্রতিস্থাপন পৃথিবীতে প্রথম। প্রায় ১৪ ঘণ্টার ওই অস্ত্রোপচারের পর থেকেই বাল্টিমোরের জন্‌স হপকিন্‌স মেডিসিন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আশা করছেন, ফের স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফিরতে পারবেন ওই যুবক।

ওই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর বেশ খুশি ওই যুবক। কিছুটা সুস্থ হয়ে সপ্তাহখানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকে আমার কী মনে হত জানেন? দুর্ঘটনাটা আমার জীবন থেকে সম্পর্ক শব্দটিকে কেড়ে নিল। সম্পর্কের উপর সারা জীবনের নিষেধাজ্ঞা!’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘মনে হত, সব শেষ। বাকি জীবনটা আমি একা। কিন্তু, লড়াইটা চালাতে চেয়েছি। নিজেকে এক জন পুরুষ হিসেবে আরও বহু দিন দেখতে চেয়েছি।’’ অস্ত্রোপচারের পর সেই তিনিই বলছেন, ‘‘নিজেকে আবার সম্পূর্ণ মনে হচ্ছে।’’

মেয়ে জন্মের পর ১৮ বছর কেটেছে ছেলের সাজে

এর আগে ২০১৪-য় দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ২০১৬-য় ম্যাসাচুসেটস-এ পেনিস প্রতিস্থাপনের দু’টি সফল অস্ত্রোপচার হয়। দুই ক্ষেত্রেই শুধু পেনিস প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। স্ক্রোটাম, টেসটিস, ওই চত্বরের মাংস, কলা বা কোষ কিছুই প্রতিস্থাপিত করা হয়নি। কিন্তু, সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচারে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা এবং ১১ ইঞ্চি চওড়া প্রায় চার-পাঁচ পাউন্ড ওজনের একটি ব্লক কেটে নিয়ে তা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিস্থাপিত করা হয় ওই সেনা যুবকের শরীরে। এমন প্রতিস্থাপন গোটা দুনিয়ায় এই প্রথম। বাল্টিমোর এবং বস্টনের একটি মেডিক্যাল টিমের বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি, সন্ধান এবং অনুশীলনের ফল মিলতে পারে এই সপ্তাহেই। তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে এই সপ্তাহেই।

নিজের নাম প্রকাশ্যে আনতে চান না ওই যুবক। কারণ, তাঁর যে যৌনাঙ্গ ছিল না, এটা তিনি দুনিয়ার কাছে লুকিয়ে রাখতে চান। কারণ আর কিছু নয়। প্রতিস্থাপিত পেনিস জেনে কেউ যদি তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে না জড়াতে চায়! সেই কারণেই গোটা দুনিয়ার কাছে এই ঘটনার কথা জানাতে চান না। দুর্ঘটনার পর তাঁর যে যৌনাঙ্গ উড়ে গিয়েছিল, সেটাও গোপন রেখেছিলেন দুনিয়ার কাছে। পরিবারের দু’এক জন আর কয়েক জন বন্ধু, ব্যস। নিজের শরীর ও মনের ক্ষত নিয়ে আর কেউ কিছুই জানে না।

চিকিৎসকরাও উচ্ছ্বসিত। ডব্লিউ পি অ্যান্ড্রু লি গোটা অস্ত্রোপচারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের অস্ত্রোপচারে রোগীর অনুভূতি এবং ব্যক্তি পরিচয়টা ফিরিয়ে দেওয়ার একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। আমরা উতরে গিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, এই অস্ত্রোপচারের পর প্রাথমিক ভাবে ওই যুবকের স্বাভাবিক প্রস্রাব পদ্ধতি ফিরে আসবে। কয়েক মাসের মধ্যেই ওই জায়গায় তাঁর স্নায়ুগুলো আরও সতেজ হয়ে উঠে তিনি যৌনজীবনেও স্বাভাবিক ভাবে অংশ নিতে পারবেন। আশাবাদী লি বলছেন, ‘‘আমরা নিশ্চিত, ওঁর স্বাভাবিক যৌনতা কয়েক মাসের কাজ করতে শুরু করবে। পেনিস নিজ নিয়মেই উত্থিত হবে। হবে অর্গাজমও।’’

ওই যুবকের স্ক্রোটাম প্রতিস্থাপিত হলেও, দাতার টেসটিস (অণ্ড) তাঁর শরীরে বসানো হয়নি। সেটা মেডিক্যাল নীতির পরিপন্থী। বোমার আঘাতে ওই যুবকের নিজের জননতন্ত্র সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কাজেই তিনি আর নিজের ঔরসে বাবা হতে পারবেন না। যে হেতু টেসটিস নেই, তাই সারা জীবন টেস্টোস্টেরন হর্মোন তাঁকে ওষুধ হিসেবে শরীরে নিতে হবে।

এই প্রতিস্থাপন যদি সাফল্য পায়, তবে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন বলে চিকিৎসকদের আশা। দুর্ঘটনা বা যুদ্ধক্ষেত্রে এমন বহু মানুষ নিজের যৌনাঙ্গ হারিয়েছেন। গত তিনি বছরে শুধু মার্কিন সেনা বাহিনীতেই প্রায় ১৩০০ ব্যক্তি যুদ্ধে গিয়ে তাঁদের যৌনাঙ্গ হারিয়েছেন। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধে গিয়ে যত জন মার্কিন সেনা গুরুতর আহত হয়েছেন, তার মধ্যে প্রায় ৩১ শতাংশের পেনিস মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছে। এই অস্ত্রোপচার সফল হলে, এই বিরাট অংশের মানুষ উপকৃত হবেন বলেই আশা চিকিৎসকদের। কিন্তু, তাঁদের আশঙ্কাও রয়েছে। সব সময় এমন দাতা পাওয়া যায় না। যেটা এ ক্ষেত্রে পাওয়া গিয়েছে। আবার পাওয়া গেলেও প্রতিস্থাপন যাঁর সঙ্গে হবে, তাঁর শরীরের সঙ্গেও সবটা সব সময় মেলে না। খরচও প্রচুর। এই অস্ত্রোপচারে অনেক চিতিৎসক পারিশ্রমিক না নিলেও প্রায় তিন লাখ মার্কিন ডলার খরচা হয়েছে। গোটাটা যদিও সরকারই বহন করেছে।

পেনিস প্রতিস্থাপন

কী ভাবে হল পেনিস প্রতিস্থাপন।

হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, এই অস্ত্রোপচারে ৯ জন প্লাস্টিক সার্জেন ও রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জন এবং ২ জন ইউরোলজিস্ট কাজ করেছেন। কেউই কোনও পারিশ্রমিক নেননি। তাঁদের কাছে এই কাজটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিস্থাপনের জন্য কয়েকটা বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ওই যুবককে। প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত দেহও পাওয়া যাচ্ছিল না। পাওয়ার পরেও হাজারটা পরীক্ষানিরীক্ষা। একটা সময় ওই যুবকের মনে হয়, এর থেকে লিঙ্গহীন থাকাই ভাল। কিন্তু, পরে জেদটাই জিতে গিয়েছিল তাঁর জীবনে। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, লিঙ্গ রূপান্তরিত করে নিতে। রাজি হননি। বরং নিজের বাহু থেকে চামড়া নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, পেনিস বানিয়ে দিতে। কিন্তু, সেই পেনিস তো উত্থিত হত না! তাই চিকিৎসকেরা রাজি হননি। এই দরনের অস্ত্রোপচারে নানা ধরনের ঝুঁকি তাকে। হতে পারে মৃত্যুও। তবু, দমে যাননি ওই যুবক।

যাঁর শরীরের অংশ নিজের দেহে ধারণ করে স্বাভাবিক যৌনজীবনে ফিরে আসতে চলেছেন ওই যুবক, মৃত সেই ব্যক্তির পরিবারও চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই সাফল্যে খুশি। তাঁদের তরফে বলা হয়েছে, ‘আমরা সকলে ভীষণ গর্বিত। কারণ, দেশের জন্য নিজের প্রাণ বিপন্ন হওয়া এক জন মানুষকে আমাদের পরিবারের প্রিয় মানুষটি এ ভাবে সাহায্য করতে পেরেছে। এমন উপহার দিতে পেরে ওঁর আত্মাও শান্তি পাচ্ছে।’’

সফল অস্ত্রোপচারের পর এখন অপেক্ষায় ওই সেনা যুবক। কবে সবটা আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে!

ছবি সৌজন্য:  জন্‌স হপকিন্‌স মেডিসিন