করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে সুষম খাবার কী হতে পারে, বলছেন ডাক্তার

করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে সুষম খাবার

করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে সুষম খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, এই ভাইরাস তাঁদেরই আক্রমণ করে যাঁরা শারীরিক ভাবে খুবই দুর্বল। সেই জন্য শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে করোনাভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে অনেকটাই বাঁচা যাবে। লিখলেন বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যপ্রশিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি লাহিড়ী


করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করতে সুষম খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, এই ভাইরাস তাঁদেরই আক্রমণ করে যাঁরা শারীরিক ভাবে খুবই দুর্বল। সেই জন্য শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে করোনাভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে অনেকটাই বাঁচা যাবে। শরীরকে সবল এবং সুস্থ ভাবে গড়ে তুলতে গেলে পুষ্টিকর ও সুষম খাবারের ভীষণ প্রয়োজন। আসুন এই অতিমারির সময়ে জেনে নেওয়া যাক কী খাওয়া উচিত আর কোনটা খাওয়া উচিত নয়—

প্রথমেই সবাইকে বলছি, ভারসাম্য রক্ষাকারী খাবার খেতে হবে। সেই জন্য প্রতিদিনকার খাবারের মধ্যে ভিটামিন, মিনারেলস, প্রোটিন এবং হজমকারী ফাইবারযুক্ত খাদ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, শরীরে যেন অতিরিক্ত মেদ না আসে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া নিয়ে সতর্ক হতে হবে। যাতে করোনা পরিস্থিতিতে অত্যধিক ওজন বা হার্টের রোগ, স্ট্রোক বা ডায়াবেটিসের মতো পুরনো রোগের সমস্যা বেড়ে না যায়।

* প্রতি দিন খাবারের মধ্যে প্রাণীজ প্রোটিন— মাংস, মাছ, ডিম, দুধ থাকতেই হবে।
* উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে সোয়াবিন খেতে পারেন।
* সবুজ শাকসব্জি, খাদ্যকণা, শস্য, বাদাম, বিন্‌স, গাজর— এগুলি খেতে হবে।
* প্রতি দিন দু’কাপ ফলের রস খান।
* আড়াই কাপ সব্জি, ১৮০ গ্রাম খাদ্যকণা এবং ১৬০ গ্রাম মাংস খেতে হবে ।
* রেডমিট খেতে পারেন সপ্তাহে এক বার।
* অবশ্যই কম মিষ্টিওয়ালা খাবারের ব্রেকফাস্ট নেবেন।
* ডিনার বা লাঞ্চে সব্জি বা মাংস-মাছ যেটাই খান, অতিরিক্ত ফুটিয়ে তার খাদ্যগুণ নষ্ট করেবেন না। অর্থাৎ খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত তেল মশলা বর্জন করুন। কারণ এর ফলে অতিরিক্ত ভিটামিন নষ্ট হয়।

আমাদের শরীরের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জল। পরিমাণ মতো জল অবশ্যই খাবেন। লিকুইড কম্পাউন্ড আমাদের শরীরের রক্তকে রেগুলেট করতে সাহায্য করে। এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টকে লুব্রিকেন্ট করে। তাই জলের পাশাপাশি লেমন জুস বা ফ্রুট জুস খেতে পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় খাবেন না।

খাবারের মধ্যে কিছু ফ্যাট ও অয়েল খেতে পারেন। যেমন আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় মাছ, অলিভ অয়েল এবং সানফ্লাওয়ারে। কিন্তু স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায় ঘি, মাখন, ক্রিম, চিজে। এগুলি পরিমাণ মতো খেতে হবে বা খাওয়া যাবে না। যেখানে সম্ভব হবে সেখানে কম ফ্যাটের দুধ খেতে হবে। সম্ভব হলে প্রসেস ফুড, ফাস্টফুড, পিৎজ্জা, ফ্রজেন বা ফ্রায়েড ফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

আপনার খাবারে মধ্যে প্রতি দিন লবণ ৫ গ্রামের কম খেতে হবে অর্থাৎ মোটামুটি ভাবে এক চামচের কম। এবং অবশ্যই আয়োডাইড লবণ হওয়া দরকার। যে ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ এবং মিষ্টি দেওয়া থাকে সেই খাবার বেশি না খাওয়া ভাল।

অনেকেরই অভ্যাস আছে, বাড়ির বাইরে গিয়ে কোনও রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া করা। আমরা কিন্তু এখন রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করতে এখন বারণ করছি। কারণ, এই পরিস্থিতিতে বাড়ির বাইরে যাওয়া মানেই বাইরের মানুষের সংস্পর্শে আসা। ভিড়ভাট্টা সব সময় এড়িয়ে চলা উচিত। যদি একান্তই বাড়ির বাইরে খেতে হয়, তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন মনে করে। অন্য কোনও ব্যক্তির থেকে অন্তত এক মিটারের দূরত্ব হতে হবে। খুব ভিড় রেস্তোরাঁ এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।

সঠিক নিউট্রিশন এবং হাইড্রেশন আমাদের শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিন্তু এটা কখনওই ম্যাজিকের মতো পাওয়া যায় না। এ জন্য একটি প্রক্রিয়া মেনে এগোতে হবে। সেই জন্য অবশ্যই আপনি আপনার চিকিৎসক বা নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন।

যাঁরা আগে থেকেই কোনও রোগে ভুগছেন, তাঁদের অবশ্যই অতিরিক্ত সাবধানতা নিতে হবে। যেমন ডায়াবেটিস বা হার্টের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন।

সব শেষে কিছু জিনিস না মেনে চললেই নয়। যেমন, আপনার রান্নাঘর ও রান্নার সামগ্রী অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। খাবার পাঁচ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে বা ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরের তাপমাত্রায় রাখতে হবে। এতে আপনার খাবার সঠিক ও উপযুক্ত থাকবে। রান্নার কাজে পরিষ্কার জল ব্যবহার করুন। সমস্ত খাবার যেন টাটকা থাকে।

এগুলো মেনে চললেই সুস্থ জীবনযাপন বজায় থাকবে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসকে আপনি অন্য অনেকের চেয়ে অনেকটা দূরে রাখতে পারবেন।

এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগে www.justduniya.com/স্বাস্থ্য

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)