বিরাট কোহলি আপনি এটা কী বললেন, প্রশ্ন তুলল জাস্ট দুনিয়া

বিরাট কোহলি

বিরাট কোহলি, বয়স ২৯। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। গ্ল্যামার, টাকা, প্রচার এই সবেই ঘিরে থাকতে হয় ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ককে। এক একজন এক একরকম ভাবে তা নিয়ে চলেন। পটৌদি থেকে কপিল দেব, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে এমএস ধোনি। প্রত্যেকেই এই লাইম লাইট সামলেছেন যাঁর যাঁর মতো করে। বিরাট কোহলি এখনও সামলাচ্ছেন। বেশ ভালই তো সামলাচ্ছিলেন। তা হলে হঠাৎ এমন ছন্দপতন কেন?

এমন কী বলেছিলেন সেই সমর্থক? তিনি শুধু বলেছিলেন, ভারতের ব্যাটিং থেকে তাঁর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখতে বেশি পছন্দ করেন। এবং ভারতের ব্যাটসম্যানরা ওভাররেটেড। এর জন্য কাউকে দেশ ছাড়তে বলা যায় না মনে হয়? আপনার যদি বাক স্বাধীনতা থাকে তা হলে তাঁরও রয়েছে। রয়েছে তাঁর নিজস্ব পছন্দ। কিন্তু আপনি হলে ফেললেন, ‘‘আমার মনে হয় না আপনার ভারতে থাকার অধিকার রয়েছে। যান অন্য কোথাও গিয়ে থাকুন। কেন আপনি অন্য দেশকে ভালবেসে এই দেশে রয়েছেন?’’ সত্যিই কি আপনি এটা বলতে পারেন?

বিপুল স্টারডম, ফ্ল্যাশ লাইটের ঝলকানী, ব্যাটে সাফল্য, অধিনায়কত্বে সাফল্য, সবই তো ছিল। হঠাৎ মাথাটা কেন বিগড়ে গেল সেটা নিয়ে মনে হয় ভাবার সময় এসেছে। ওই যে কথায় আছে পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। এই কথা শোনার পর বিরাটভক্তরা আমাকে বয়কট করতে পারেন। কিন্তু অন্যায়টা তো অন্যায়ই। তা বলতে দ্বিধা নেই।

না, বিরাট পিপিলিকা অবশ্যই নন কিন্তু একজনকে এত বড় কথা বলে দেওয়ার অধিকারও যে তাঁর জন্মায় না সেটা বোঝা উচিত তাঁর। তাঁর একবার পিছন ফিরে দেখা উচিত। দেখা উচিত কী ভাবে এই ভারতীয় ক্রিকেটকে তিল তিল করে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন প্রাক্তনরা। মনে আছে, যখন ম্যাচ গড়াপেটা বিতর্কে বিদ্ধস্ত ভারতীয় ক্রিকেট।

আজহারউদ্দিন, কপিল দেব, অজয় জাডেজা, মনোজ প্রভাকর, একে একে নাম জড়িয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত বিখ্যাত সব ক্রিকেটারদের। খেলা এসে ঠেকেছে তলানিতে। তখন এক বঙ্গ সন্তান গিয়ে হাল ধরেছিলেন এই ভারতীয় দলের। একে একে তুলে এনেছিলেন যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, মহম্মদ কাইফ, গৌতম গম্ভীরসহ একগুচ্ছ নতুন মুখদের। সেই আবার উত্থানের শুরু। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় ভারতীয় দলকে পর পর সাফল্য এনে দিয়েছেন এমএস ধোনি। দুটো বিশ্বকাপ রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। একটি টি২০, একটি ৫০ ওভারের।

সুনীল আপনি বরং ফুটবল খেলাটা ছেড়েই দিন

কবে কে এমন ঔদ্ধত্য মন্তব্য করেছেন মনে করতে পারছি না। ভারতীয় দলকে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শেখানো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঔদ্ধত্যও কখনও তাঁর মুখ দিয়ে এমন কোনও কথা বের করতে পারেনি যা কোনও নাগরিকের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিতে পারে।

তিনি বিরাট কোহলি। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাট হাতে রাজ করছেন। দ্রুততম ১০ হাজার রান তাঁর ঝুলিতে। সঙ্গে গুচ্ছ গুচ্ছ রেকর্ড। বিশ্ব ক্রিকেট এখন বিরাট বন্দনায় মেতেছে। প্রতিদিন কোনও বড় নাম বিরাট নিয়ে কথা বলছেন। এবং সব ভাল ভাল কথা। কোথায় তা নিয়ে কো বিরাটের কোনও মন্তব্য নেই? তা নিয়ে তো তাঁর তরিঘড়ি কোনও ভিডিও পোস্ট নেই। তা হলে কি বিরাট সমালোচনা নিতে পারেন না?

কেরিয়ার যেভাবে উর্ধ্বমুখি হয়েছে একদিন সে ভাবেই নিম্নমুখিও হবে, সেদিন কী করবেন বিরাট কোহলি? কয়েকদিন পিছিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে জলজ্যান্ত এক উদাহরণ এমএস ধোনি। ধোনিকে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ থেকে বাদ দেওয়া হল তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সেই ধোনিই যখন ব্যাটে রান পেলেন না সেই সোশ্যাল মিডিয়ায়ই তাঁকে অবসরের পরামর্শ দিতে পিছপা হলেন না। ধোনি কিন্তু নিজের কাজটুকুই করে গিয়েছেন।

তা হলে কী সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সচলতাই সমস্যায় ফেলল বিরাট কোহলিকে? করবাচৌথ থেকে দীপাবলির শুভেচ্ছা পর্যন্ত ঠিক ছিল। তা বলে এক ভারতীয়কে দেশ ছাড়ার হুমকি? এটা মেনে নেওয়া যায় না।

যদিও পরে বিষয়টিকে হালকা করার চেষ্টা করলেন আরও একটি টুইট করে। বললেন, উৎসবের দিনে সবাই মজা করুন। বিষয়টিকে হালকাভাবে নিন ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই আলোচনা সমালোনার মধ্যেই ঢুকে পড়েছেন সিওএ। যদিও তারা বিরাটের বিরুদ্ধ তেমন কিছু করতে পারবেন না সেটাও নিশ্চিত। সাবধান হতে হবে বিরাটকেই। ভুলে গেলে চলবে না তিনি সাধারণ মানুষ নন, তাঁর মন্তব্যের যেমন গুরুত্ব আছে তেমনই তাঁর একটা মন্তব্য এভাবেই তোলপাড় করে দিতে পারে। তাই বাকস্বাধীনতার ব্যবহার স্বাধীনভাবে করার আগে একটু ভাবুন।