কোভিড পরিষেবায় সোশ্যাল মিডিয়া, হাত বাড়ালেই বন্ধু

কোভিড পরিষেবায় সোশ্যাল মিডিয়া

কোভিড পরিষেবায় সোশ্যাল মিডিয়া, অবাক লাগছে? কিন্তু এটাই সত্যি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যখন হাত-পা গুটিয়ে নিজের ঘরে রয়েছেন তখনই একদল ছেলে-মেয়ে দিন-রাত এক করে দিচ্ছে অচেনা-অজানা মানুষের স্বার্থে, ফেসবুক আর টুইটার ঘুরে এসে লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


না, কারও নাম আলাদা করে বলব না। যাঁরা নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকেন তাঁরা সকলেই জানেন। সেই সব মানুষগুলোকে স্যালুট করেই আগে একটা নেগেটিভ সঙ্গে পজিটিভ গল্প শোনাই। গত বছর যখন কোভিড পরিস্থিতি বেশ খারাপ। কেউ বাড়ি থেকে বেরচ্ছেন না ঠিক সেই সময় আমার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন গভীর রাত। সামনের ঘরের আন্টিকে ডাকতেই চলে আসেন আঙ্কেল-আন্টি (এঁরা মাত্র তখন ১ বছরের পরিচিত)। ওষুধ দেন। কিন্তু কিছুতেই ঠিক হচ্ছিল না। আমার ভাই ডাক্তার। ফোনে বলল হাসপাতালে নিয়ে যাও একটা ইনজেকশন দিতে হবে। কলকাতার বাইরে আমি কিছু চিনি না। পূর্ব পরিচিত বন্ধু বলতে একজন। সবার আগে তাঁর কথাই মাথায় আসে। ফোন করি। তিনি আমাকে জানান, ‘‘এই রাতে তো কিছু করা যাবে না কাল সকালে দেখছি।’’ একটা ধাক্কা খাই সেই সময় কিন্তু তখন সেটা নিয়ে ভাবার সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় যাঁকে ফোন করি তাঁর কথা অবশ্য আমার এই বন্ধুটিই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। তবে তিনি আমার পূর্ব পরিচিত ছিলেন না, ওই এক বছরেরই পরিচয় তাঁর সঙ্গেও। ফোন করি, একটু অস্বস্তি লাগছিল। শুনে তিনি আমাকে বলেন, ‘‘আমি এখুনি আসছি।’’ কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি গাড়ি নিয়ে আসেন, মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই, কিছুক্ষণের চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে আসি।

এই গল্পটা বলার কারণ কাউকে ছোট করার জন্য নয়। এই গল্পটা এই জন্য বললাম যে আপনি জানেনই না কে কখন আপনার কীভাবে কাজে লাগবে। তার জন্য জীবনে প্রচুর বন্ধু, প্রচুর পরিচিত মানুষ, কাছের মানুষের প্রয়োজন নেই। আসলটা আপনি কি বিপদে পড়েছেন? তাহলে একবার চোখটা ঘুরিয়ে দেখে নিন পাশে ঠিক সেই সময় কাঁরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আসল বন্ধু তাঁরাই। আর এই কঠিন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া বেঁধে দিয়েছে সেই মানুষগুলোকে যাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার সময় তাকিয়ে দেখেন না সেই মানুষটা তাঁর কতটা পরিচিত।

দেশ জুড়ে যে গতিতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তাতে এভাবে সবাই না ঝাঁপালে সামলানো সম্ভব হবে না। প্রশাসন তার কাজ করবে কিন্তু সমাজের প্রতি যে  আমাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে আর সেই দায়িত্ব পালন করতে যে আমরা তৈরি, এই সময়টা সেই স্বস্তিটুকু অন্তত দিল। বুঝিয়ে দিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানুষগুলোর সংখ্যা অনেক বেশি।

যাঁদের গায়ে কোনও রাজনীতির ছাপ নেই। কেউ সরকারি কর্মচারী, কেউ প্রাইভেট, কেউ ছাত্র তো কেউ সাংবাদিক, কেউ আবার এই বাজারে বেকার। কিন্তু আগে তো মানুষগুলোর প্রান তার পর সব। ব্যারাকপুর থেকে বেহালা, মেদিনীপুর থেকে মুর্শিদাবাদ, দিল্লি থেকে মুম্বই, ব্যাঙ্গালোর থেকে বিশাখাপত্তনম—লড়ে যাচ্ছে কয়েক শো ছেলে-মেয়ে নাকি কয়েক হাজার। আমি সত্যিই জানি না সংখ্যাটা কত? হয়তো অনেক অনেক বেশি।

কারও অক্সিজেন লাগবে, কারও লাগবে ওষুধ, কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে কারও বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে খাওয়ার—একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় হাঁক দিয়েই দেখুন না হাজার হাজার হাত এগিয়ে আসছে সাহায্যের জন্য। এই কঠিন সময়ে সত্যিই বলছি এর থেকে বেশি স্বস্তির আর কিছু হতে পারে না। এই তালিকায় অনেক সেলিব্রিটিও রয়েছেন। তাঁরাও একইভাবে নেমে পড়েছেন ময়দানে। রুটি-রুজি কিন্তু তাঁদেরও অনেকের বন্ধ, না সেটা থামিয়ে দিতে পারেনি।

সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরেও অনেক মানুষ দিন-রাত এক করে কাজ করছেন, সেরকম অনেকের কথাই জানি। আসলে একটা কঠিন পরিস্থিতি এই সব মানুষকে এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছে। প্রচুর প্রচুর মানুষ উপকৃত হচ্ছেন তাতে। কত মানুষ সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পেরেছেন, কত মানুষ সঠিক সময়ে অক্সিজেনটা পেয়েছিলেন বলে আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যাঁরা প্রতিদিন প্রশাসন, সরকার, নেতা-মন্ত্রীদের মুণ্ডপাত করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়—তাঁরা এই সময় একটু আসুন না খারাপ থাকা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। বেঁচে থাকলে ওই সব করার আরও সময় পাবেন, সত্যিই বলছি।

যাঁরা আজ এই লড়াইটা লড়ছেন তাঁদের সবাইকে আরও একবার স্যালুট… এখানে আরও একটা কথা বলে রাখি, সম্প্রতি হ্যাশট্যাগ সোশ্যাল মিডিয়া বয়কট বলে প্রচার চলছে। প্লিজ করবেন না। সেখানে যতটা খারাপ খবর ছড়াচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি ভাল কাজ হচ্ছে।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)