শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘুম থেকেই উঠলেন না, থমকে গেল তাঁর কলম

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় যে কখন শীর্ষদা হয়ে গিয়েছিল টেরই পাইনি। কখনও গম্ভীর, কখনও মজার আবার কখনও ভুল দেখে অদ্ভুত এক ভঙ্গিমায় বলা। মানে যাঁর ভুল সেই শুধু বুঝতে পারবে কোথায় গিয়ে বিঁধল তা। শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় একাধারে সাংবাদিক আবার সাহিত্যিক। প্রথম যেদিন ‘সকালবেলা’র অফিসে দেখেছিলাম সেদিন শুধু তাঁর ব্যক্তিত্বেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। লেখা আগেও পড়েছি তার পর যেন তাঁর লেখা পড়ার ইচ্ছেটা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। সত্যি বলছি, সেই কথাটা একদিন শীর্ষদাকেও বলেছিলাম। হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘‘দেখিস সাবধান।’’ কেন সাবধান করেছিলেন জানি না। তবে যাই বলতেন মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। অদ্ভুত ভাললাগা গ্রাস করেছিল মানুষটাকে ঘিরে। সেই মানুষটার ঘুম ভাঙল না আর। ঘুমের মধ্যেই চির ঘুমের দেশে চলে গেলেন শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

সেক্টর ফাইভের অফিসের দিনগুলোতে প্রায় রোজই দেখা হত, টুকরো টুকরো কথা। শীর্ষদার নেতৃত্বে কাজ করিনি কখনও। আমি তখন রূপকদা (সাহা)-র নেতৃত্বে ক্রীড়াসাংবাদিক। শীর্ষদা বলেছিলেন, ‘‘লাকি তুই, এমন নেতার অধিনে কাজ করছিস। লুটেপুটে শিখেনে ক্রীড়াসাংবাদিকতা। এই সুযোগ সব সময় আসে না।’’ সত্যিই অনেক কিছু শিখেছি তা ভাঙিয়ে আজও চলছে। কিন্তু তুমি শীর্ষদা এত তাড়াতাড়ি স্মৃতি হয়ে গেলে পুরোটা!

‘সকালবেলা’ ছাড়ার পর দেখা হয়নি কিন্তু কথা হয়েছে অনেকবারই। বেড়াতে খুব ভালবাসতেন। বেড়ানো নিয়ে অনেক গল্প হত। আমার দেশ আর শীর্ষদার বিদেশ ভ্রমণ। ‘সকালবেলা’য় খেলার সাংবাদিকতার পাশাপাশি ভ্রমণ লিখতাম। একদিন একটা ভ্রমণ লেখা দেখে আমাকে বললেন, ‘‘খেলা আর বেড়ানো, ভালই তো কম্বিনেশন। খেলবি আর ঘুরে বেড়াবি। চালিয়ে খেল আর ছুটে চল।’’ এখনও তাই করছি শীর্ষদা।

দেখা হয়নি অনেকদিন, ফেসবুকে নতুন নতুন পোস্টে শীর্ষদাকে খুঁজে পেতাম। কতরকমের পোস্ট করতেন, কখনও খুব সিরিয়াস পোস্ট মজারচালে আবার কখনও শুধুই মজা। ভ্রমণ লিখতে উসকে দিয়েছিলেন এই মানুষটাই। একবার মনে আছে, তখন ‘সকালবেলা’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, চাকরী নেই। ভাবলাম শুধু বেড়ানো নিয়ে একটা ওয়েবসাইট করব। শীর্ষদাকে বললাম। বললাম, ‘‘আমি ভ্রমণের ওয়েবসাইট করতে চাই কিন্তু তখনই করব যখন সেই সাইটের প্রথম লেখাটা তোমার হবে।’’

হেসে বললেন, ‘‘আগে তো দেখি কী সাইট, কেমন কোয়ালিটি।’’ তখনও সাইট রেডি হয়নি। একটা ডেমো সাইট রাখা ছিল ওটা পাঠালাম। ব্যস যাবে কোথায়। সেখানে বেশ কয়েকটি বানান ভুল ছিল। সঙ্গে সঙ্গে টেক্সট এল, ‘‘বানানগুলো ঠিক কর আগে তার পর লেখা নিবি।’’ শীর্ষদা ক্ষমা কোরো কারণ জানি আজও বেশ কিছু বানান এই লেখায় ভুল থাকবে। তুমি দেখলে ওভাবেই বকে দিতে। হয়তো বলতে, ‘‘আমাকে নিয়ে লিখছিস আর এত বানান ভুল।’’

গতকালই ফেসবুকে গত বছরের একটা মেমোরি শেয়ার করে লিখলে ‘‘ওরে ঝড় নেমে আয়…’’। সঙ্গে সাদাকালো মেঘলা দিনের ছবি। এভাবে ঝড় নেমে আসুক নিশ্চই চাওনি, দুনিয়াটা এভাবে সাদাকালো হয়ে যাক সেটাও না নিশ্চই। তাহলে কেন এমনটাই হল? দু’দিন আগে অঞ্জনদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) আর আজ তুমি? এভাবে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছি ক্রমশ।

আমার এক প্রাক্তন সতীর্থ, সাংবাদিক শুভপম সাহা ঠিকই বলেছেন, ‘‘সত্যি করে বলো তো শীর্ষদা, ওপরে দুর্দান্ত একটা মিডিয়া হাউস হচ্ছে! তাই না? এমনি এমনি তো আর তোমাদের মতো সিনিয়ররা দল বেঁধে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছ না! বুঝতে পেরেছি এবার। তাহলে ঠিকই শুনেছি। সম্ভবত অঞ্জনদা দায়িত্বে আছেন।’’ আবেদনটা আজ করেই রাখলাম তাহলে তোমাদের কাছে।

জীবনের ওপারে ভাল থেকো শীর্ষদা। তোমার লেখা, বই, কাব্য নিয়ে কিছু লেখার ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু তুমি মানুষটাকে ঘিরে যতটুকু স্মৃতি, অনুভূতি তাই ভাগ করে নিলাম। কার সঙ্গে জানি না, হয়তো নিজের সঙ্গেই।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)