তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া পাহাড়ের ছবি কিসের অশনিসঙ্কেত

তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া পাহড়ের ছবি

তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া পাহাড়ের ছবি এখন প্রায় প্রতি দিনই খবরে উঠে আসছে। যাঁরা পাহাড়প্রেমী, তাঁদের জন্য এই দৃশ্য মর্মান্তিক। আর পাহাড়বাসীর জন্য ভয়ঙ্কর। সামগ্রিক ভাবে ভয়ঙ্কর পরিবেশের জন্যও। সুচরিতা সেন চৌধুরী


কখনও হিমাচল প্রদেশ তো কখনও জম্মু-কাশ্মীর। কখনও উত্তরাখণ্ড তো কখনও সিকিম। প্রতি দিন ভাঙছে পাহাড়। প্রতি দিন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কত কত পাহাড়ের অংশ। কখনও এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে মনে কোনও পর্যটক হয়তো ভেবেছিলেন, পাহাড়টা যদি আমার হত! মুহূর্তেই চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে ধুলোর মতো নেমে আসছে পাহাড়। কয়েক মিনিটে ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাচ্ছে রাস্তা, যা এই পাহাড়ের বুক চিরে বানানো হয়েছিল। আজও ভাঙছে পাহাড়। কোথাও হচ্ছে রাস্তা। কোথাও ড্যাম। কোথাও রেললাইন। মানুষ পৌঁছবে। মানুষের সুবিধে হবে। বাড়বে ব্যবসা। তাই আরও পাহাড় কেটে ফেলা হোক। কালো পিচের রাস্তার দাপট চলুক তার বুকে। একটা সময়ে সে তো প্রতিবাদ করবেই!

প্রকৃতি আজ প্রতিবাদ করছে। প্রতিবাদ করছে কত কত বছর ধরে চলে আসা অন্যায়ের। গলছে হিমালয়, ভরে উঠছে জলাশয়, হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস। শুরু হয়ে গিয়েছে ধ্বংসলীলা। এ কি আর থামবে? বৃষ্টি, ধস, বন্যা— বর্ষাকালে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই বছরটা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এই ধ্বংস থামার নয়। ভাঙছে মেঘ। স্বাভাবিক ছন্দে বয়ে যাওয়া নদী ফুঁসছে। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম।

তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়া পাহড়ের ছবি

মনে পড়ে কেদারনাথের সেই জলোচ্ছ্বাসের কথা? তার পর থেকে কিন্তু থামেনি প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া। কখনও বড় তো কখনও ছোট, তাণ্ডব ঘটিয়েই চলেছে। তার মধ্যেই চলছে মানুষের ক্ষমতার আস্ফালন। কখনও পাহাড় ভাঙছে মানুষ। কখনও পাহাড় নিজেই ভেঙে পড়ছে। এর শেষ কোথায়? কবে থামবে এই ধ্বংসলীলা?

তছনছ হয়ে গিয়েছে হিমাচল প্রদেশ। মানালি, কুলু, কিন্নর— সব জায়গা থেকে উঠে আসছে ধ্বংসের ছবি। কোথায় পাহাড় থেকে গড়িয়ে নামছে বড় বড় পাথরের চাঁই। কোথাও হঠাৎ আসা বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে গ্রাম। কোথাও চোখের নিমেষে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। হিমাচলের পাশাপাশি একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীরেও। কোথাও ধস তো কোথাও মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। কত মানুষ এখনও নিখোঁজ। জল কমে গেলে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁদের নিথর দেহ। অমরনাথের মাথা থেকে গতিতে নামছে জল। বাংলা থেকে সিকিমের পাহাড়ে পৌঁছবে ট্রেন। তার জন্য ভাঙছে পাহাড়। সেই কাজে ব্যস্ত শ্রমিকদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল ভূমি ধস। ড্যামে আটকে ফুঁসছে তিস্তা।

উত্তরাখণ্ড বন্যায় মৃতের সংখ্যা

পাহাড় কাঁদছে? নাকি উগরে দিচ্ছে ক্ষোভ? মানুষের ধ্বংসলীলাকে আটকাতে নিজেই বেছে নিচ্ছে ধ্বংসের পথ। পাহাড়ের বুকের উপর দিয়ে চলে যাবে পিচ ঢালা রাস্তা, ট্রেনলাইন। ‘পায়ে পায়ে’ পৌঁছে যাবে মানুষ। তৈরি হবে পাঁচতারা হোটেল, রেস্তরাঁ, বিনোদনের পসরা সাজবে। আর এই সব সাজাতে কাটা হবে একের পর এক গাছ। যা আঁকড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পাহাড়। কেড়ে নেওয়া হবে সেই অবলম্বন। আর তার পর? বোঝার সময় কি আর পাবে মানুষ?

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)